সুলতানি যুগে ভারতে ক্রীতদাস প্রথা
ভারতে ইসলামের প্রতিষ্ঠার অনেক আগে থেকেই দাসপ্রথার প্রচলন ছিল। পরে তুর্কি আমলে ভারতে দাসের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এই সময় ক্রীতদাস প্রথা সামাজিক জীবনের অঙ্গ হয়ে ওঠে।
[1] দাসপ্রথার চাহিদা: সুলতানি আমলে অভিজাত মুসলিম পরিবারেপ্রভুর সংসার দেখাশােনা-সহ নানান সাংসারিক কাজের জন্য এবং প্রভুর নিজের বিলাসিতার জন্য দাসের প্রয়ােজন হত। ক্ৰমে অভিজাত ও উচ্চবিত্ত পরিবারে দাসদের দ্বারা নিজেদের কাজকর্ম সম্পন্ন করা সমাজে মর্যাদার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
[2] দাসপ্রথার প্রাবল্য: সুলতানি আমলে তুর্কি সমাজে দাসপ্রথা একটি প্রবল প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছিল। সুলতান এবং অভিজাত শ্রেণি থেকে শুরু করে একজন সাধারণ কেরানিও এই সময় ক্রীতদাস রাখত।
[3] দাসদের শ্রেণিবিভাগ: সুলতানি যুগে প্রধানত দুই শ্রেণির দাস ছিল一
- বন্দগান-ই-খাস: যুদ্ধ, রাজ্য পরিচালনা প্রভৃতি কাজের জন্য সুলতান যােগ্যতাসম্পন্ন এইসব ক্রীতদাসকে ক্রয় করতেন। বিভিন্ন দেশে থেকে তাদের আনা হত। কুতুবউদ্দিন আইবক এবং ইলতুৎমিসও প্রথম জীবনে দাসই ছিলেন।
- বুরদা ও কানিজব: এরা ছিল সাধারণ দাস। এদের অধিকাংশই গৃহে পরিচারকের কাজ করত।
[4] দাসদের জীবনযাত্রা: সুলতান বা অভিজাতদের অধীনস্থ দাসরা স্বাচ্ছন্দ্যে থাকলেও সাধারণ ব্লীতদাসদের অবস্থা মােটেই ভালাে ছিল না। তারা ছিল মালিকের ব্যক্তিগত সম্পত্তি। মালিক ইচ্ছামতাে তার অধীনস্থ দাসদের ভাড়া খাটাতে, উপঢৌকন দিতে বা বিক্রয় করতে পারতেন।
সুলতানি ভারতে ক্রীতদাস সৃষ্টির প্রক্রিয়া ও ক্রীতদাসদের অবস্থা
[1] সুলতানি আমলে ক্রীতদাস সৃষ্টির প্রক্রিয়া: সুলতানি যুগে নানান প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মানুষ ক্রীতদাসে পরিণত হত। যেমন一
- পরাজিতকে বন্দি করে: শত্ন দেশের সৈন্য ও সাধারণ নাগরিক যুদ্ধবন্দি হয়ে ক্রীতদাসত্ব বরণে বাধ্য হত। আরবের ঐতিহাসিক আল-উৎবী উল্লেখ করেছেন যে, গজনীর সুলতান মামুদ ১০০১ খ্রিস্টাব্দে ভারত অভিযান করে ভারতের ১ লক্ষ যুবক-যুবতিকে বন্দি করে ক্রীতদাসে পরিণত করেন।
- দাস ক্রয়ের মাধ্যমে: পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন স্থানে দাস ব্যাবসার প্রসার ঘটেছিল। সেখানকার দাস বাজার থেকে দাসদের ক্রয় করে ভারতে আনা হত।
- উপঢৌকনের মাধ্যমে: সুলতানি আমলে অভিজাত তুর্কি মুসলিমদের মধ্যে উপঢৌকন হিসেবে দাসদাসী প্রদান করার চল ছিল। এভাবে অনেকে দাসদাসী লাভ করত।
[2] সুলতানি আমলে ক্রীতদাসদের অবস্থা: সাধারণভাবে সুলতানি আমলে ক্রীতদাসদের অবস্থা খুব একটা ভালাে ছিল না। [i] তারা ছিল মালিকের ব্যক্তিগত অস্থাবর সম্পত্তি মালিক ইচ্ছামতাে তার অধীনস্থ দাসদের ভাড়া খাটাতে, উপঢৌকন দিতে বা বিক্রয় করতে পারত। [ii] দাসরা সব ধরনের সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল। [iii] তারা মালিকের কাছ থেকে খাদ্য, পােশাক ও আশ্রয় লাভ করত। [iv] তা ছাড়া সুলতান বা অভিজাতদের অধীনে থাকা দাসরা সাধারণের অধীনে থাকা দাসদের চেয়ে তুলনামূলকভাবে স্বাচ্ছন্দ্যে থাকত। ফিরােজ তুঘলক দাসদের জন্য শিক্ষাদান ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেন।