সূচনা : বিশ্বের সুপ্রাচীন মিথু গুলির মধ্যে সুমেরীয় ও মিশরীয় মিথ গুলি ছিল উল্লেখযোগ্য। এই দুই দেশের অধিকাংশ পৌরাণিক কাহিনী খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় অবরোধের পরে শুরু হয়। প্রাচীন মন্দিরের ধ্বংসাব শেষ ও পুরাণ ভগ্নস্তুত থেকে উদ্ধার হওয়া লিপিগুলিকে মিথের পরিচয় মিলে। এই দুই দেশের বেশিরভাগ পৌরাণিক কাহিনী গুলিতে দেখা যায় দেব-দেবীর পূজার ছবি। যদিও এই চিত্রগুলি প্রকৃত উদ্দেশ্যে বোঝা যায় না। সুমেরীয় ও মিশরীয় সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মৃতগুলির কাহিনী অস্পষ্ট ও অবাস্তবধর্মী।
মিথগুলির পরিচয়
(১) সুমেরীয় মিথ
(১) সৃষ্টি তত্ত্ব : এই বিশ্বের সমস্ত গুহা প্রথম দিকে সমুদ্রের জলে ডুবেছিল। ভিষণাকার পশুর জল থেকে মাটিকে আলাদা করার কাজে বাধা দিত। দেবতাদের প্রধান অসুরের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হন। যুদ্ধের প্রধান দেবতা অসুরকে হত্যা করে এবং তার দেহ দু টুকরো করে কেটে ফেলেন। প্রধান দেবতা অসুরের দেহ ওপরের অংশ দিয়ে তৈরি করেন আকাশ। সেই আকাশকে তিনি তারকা মালা দিয়ে সাজিয়ে তোলেন। আর ওষুধটি দেহ নিম্ন অংশ দিয়ে তৈরি করেন বাসভূমি। এছাড়াও প্রধান দেবতা এটেল মাটি দিয়ে বানানো প্রথম যুগের মানুষ। ওই মানুষেরা আকারে ও বুদ্ধিতে এক একটি দেবতার প্রতিরূপ হিসেবে তৈরি হয়।
(২) মহাপ্লাবন তত্ত্ব : দেবতারা একদিন স্থির করেন পাপীদের শাস্তি দেওয়ার জন্য পৃথিবীকে প্লাবন ঘটাবেন। দেবতারা পৃথিবীকে প্লাবিত করে মানবজাতিকে ধ্বংস করা সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু জলের দেবতা এই সিদ্ধান্তের কথা নলখাকড়া বনের কাছে ফাঁস করে দেন। নলখাগড়া বোন থেকে কিছু নলখাগড়া নিয়ে এক ব্যক্তি কুঁড়েঘর তৈরি করেছিল। এখন নলখাগড়া গুলি এই প্লাবনের কথা লোকটি কে বলেছিল। লোকটি এক বিরাট নৌকা তৈরি করল। নিজেদের রক্ষা করার জন্য লোকটি তার নিজের পরিবার-পরিজনদের নিয়ে নৌকায় উঠলো। নৌকাতে এসে সঙ্গে নিল কিছু দুঃখ কারিগরদের এবং বিভিন্ন ধরনের পশু ও পাখিদের। একদিকে নির্দিষ্ট দিনে দেবতার নির্দেশ মত কালো মেঘ সমস্ত আকাশ ঢেকে গেল। শুরু হলো প্রবল তম বর্ষণ। সারা পৃথিবী জলে ডুবে গেল। পৃথিবীর সকলেই মারা গেল। শুধুমাত্র যারা নৌকোই আশ্রয় নিয়েছিল তারাই বেছে রইল। ছয় দিন পর ঝড় বৃষ্টি থেমে গেল জল সরে যেতে লাগলো। নৌকা থেকে দাঁড়কা ঘুরে গিয়ে ডাঙ্গায় খোঁজ নিয়ে এলো। নৌকায় সকলে সেই ডাঙ্গায় নেমে গিয়ে বসবাস শুরু করল।
(৩) দেবতাদের সৃষ্টি তত্ত্ব : ব্রহ্মাণ্ড যখন সম্পূর্ণ সৃষ্টি হয়নি, তখন আনুনআনকি দেবতা সৃষ্টি হয়। তারা মেষের মতো ঘাস খেত এবং খাদ থেকে জল পান করতো। তখন গবাদি পশুদের টেবিল লাহার এবং সর্ষের দেবী আসনানকে সৃষ্টি করা হলো। তারা অধিক খাদ্য বিশেষ করে দুধ উৎপাদন করল। তাদের দেব তাদের খাদ্যের প্রাথমিক সংস্থান হল। কিন্তু তাতেও আনুমানিক দেবতারা সন্তুষ্ট হল না। এই সময়ে এনকির পরামর্শে এনলইল দুই দেবীকে পাঠালেন পৃথিবীতে। দুই দেবী মতে পশুপালন ও খাদ্য উৎপাদন সহায়তা করলেন। কিন্তু এক্ষেত্রে তার অবদান বেশি সেই নিয়ে দুই দেবীর (লাহার ও আসনান) মধ্যে বিরোধ বাধলো। এনকি ও এনলইল এই বিরোধ মেটানোর জন্য হস্তক্ষেপ করলেন। তারা আসনান বিজয়ী বলে ঘোষণা করলেন।
(৪) প্রাণী সৃষ্টি তত্ত্ব : এমনকি আফসুস (গভীর জলের নিচের স্তর) থেকে উর্বর মাটি নিয়ে নামুকে মানুষ সৃষ্টিতে সাহায্য করে। এরপর নিম্না 6 জন প্রাণী সৃষ্টি করেন।ও এদিকে এনলিন পৃথিবী উদ্ভিদ ও প্রাণিসমূহের দ্বারা উর্বর করে তোলার পরিকল্পনা নেন। তিনি এনমেস ও এনটেন নামে দুই ভাইকে সৃষ্টি করেন। এন্টেনকে পশু ও উদ্ভিদ সৃষ্টি এবং এনমেস শহর সৃষ্টির দায়িত্ব দেওয়া ভয়। এনটেন পশু পক্ষী ও উদ্ভিদের পৃথিবীকে ভরিয়ে তোলেন। আর এনমেস বাড়িঘর, মন্দির প্রভৃতির দ্বারা শহর সাজিয়ে তোলেন। নিজেদের দায়িত্ব শেষ হয়ে যাওয়ার পর এনমেস ও এন্টেনকে মধ্যে বিরোধ বাধলো। দুজনের মধ্যে কে বেশি বুদ্ধিমান তা নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হল। এই নন্দে জয়ী হলেন এন্টেন।
(২) মিশরীয় মিথ
(১) বিশ্ব সৃষ্টির মতবাদ : মহাবিশ্ব সৃষ্টির রহস্য মানবজাতির কাছে এক অনন্ত জিজ্ঞাসা। বিশ্ব সৃষ্টির সম্পর্কে প্রাচীন মিশরীয়দের ধারণা ছিল অদ্ভুত প্রকৃতির। তারা মনে করত আকাশের দেবী নাট, গাভীর শরীর নিয়ে বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত ঢেকে রেখেছে। তাদের ধারণাই প্রথমে বিশ্ব ছিল শুধু জল আর জল আর চারিদিকে অন্ধকার। একদিন এই জলরাশি ভেদ করে উঠে এলো এক পাহাড়। সুবিশাল জলরাশির মাঝে ওই পাহাড়ের স্থলভূমি পড়ে রূপ পায় পৃথিবীতে।
(২) স্বর্গীয় ধারনা : প্রাচীন মিশর বাসি মনে করত পৃথিবীর ওপরে রয়েছে আকাশ এবং তার ওপরে রয়েছে স্বর্গ এই স্বর্গের দুই দিক একটি পূর্ব ও একটি পশ্চিম। পরবর্তীকালে স্বর্গ ধারণায় পরিবর্তন ঘটে এই পরিবর্তিত ধারণা অনুযায়ী স্বর্গের চারটি অংশ। এক একটি অংশ এক একটি দেবতার অধীনে রয়েছে। চারিদিকে চারটি বড় বড় স্তম্ভের ওপর সর্ব দাঁড়িয়ে রয়েছে। এই স্বর্গে বসবাস করে প্রধান দেবতারা। যিনি ধাতুর তৈরি সিংহাসনে বসে থাকেন তার সিংহাসনের চারপাশে সিংহের মাথা এবং বিষের খুর আঁকা। প্রধান দেবতাকে ঘিরে রয়েছে তার অধীনস্থ দেবতাগণ। যারা তার থেকে কম শক্তিধরেন। এছাড়াও স্বর্গে থাকেন দেবদূত গন। স্বর্গে বসবাসের সুযোগ পায় মানুষের আত্মা।
(৩) মৃত্যুর পরবর্তী জীবনের ধারণা : মৃত্যুর পরবর্তী ধারণা প্রাচীন মিশরীয়দের বারে বারে বদলেছে। তাদের ধারণা মৃত্যুর পরও একটি জীবন রয়েছে। তারা মনে করত মানুষের মূল সত্তা (Soul) হল ‘বা’ (Ba) এবং প্রাণশক্তি (Spirit) হাল ‘কা’ (Ka) । মিশরীয়দের ধারণা এদের প্রতীক হল বাজপাখি এবং সারস পাখি। এই পাখির মানুষের মৃত্যুর পর তাকে স্বর্গের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন। মৃত্যুর পরবর্তী জীবন সম্পর্কে মিশরীয়দের অন্যতম হলো মৃত্যুর পর আত্মা দেহ ছেড়ে চলে যান না। আত্মা দেহের মধ্যে অনন্তকাল ধরে বেঁচে থাকে। তাই মৃতদেহ সংরক্ষণ করলে ‘বা’ এবং ‘কা’ সেই মৃত দেহতে প্রবেশ করে ফেলে মৃতদেহটির পুনরুজ্জীবিত হয়।
(৪) দেব শিশুদের জন্ম কাহিনী : প্যাপিরাসের ওপর লিপিবদ্ধ রয়েছেন প্রাচীন মিশরের দেব শিশুদের জন্ম কাহিনী। এই কাহিনী অনুযায়ী হোলিওপোলিসের প্রধান পুরোহিতদের স্ত্রীকে মহান দেবতার ভীষণ পছন্দ করতেন। পুরোহিতের এই স্ত্রীর সঙ্গে দেবতারা পুরোহিতের ছদ্মবেশ গোপনে মিলিত হন। তার অধীনস্থ তত্ত্বাবধনে একে একে তিন দেব শিশুর জন্ম হয়। এদের নাম হয় যথাক্রমে উসআরকআফ, সাহুরা, নেফেরকারা । এই তিন দেব শিশুর দেহ জলে ধুয়ে পরিষ্কার করে দেন দেবী মেসখেনত। তিনি এই তিন দেব শিশুকে রাজপথে বর্ষার বিশেষ ক্ষমতা দেন। এই তিন দেবশীল পরবর্তীকালে মিশরের পঞ্চম রাজবংশের তিনি ফ্যারাও হন।