সার্ক-এর উদ্ভব ?

Table of Contents

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক সহযোগিতামূলক সংগঠন সার্ক-এর উদ্ভব একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। এরকম একটি সংগঠন গড়ে তোলার প্রথম প্রয়াস যাঁর মধ্যে দেখা যায় তিনি হলেন বাংলাদেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। ১৯৭৯ সালের নভেম্বরে শ্রীলঙ্কা সফরের সময় এই অঞ্চলে ‘আসিয়ান’ ও ‘ইউরোপীয় ইউনিয়নের’ ধাঁচে একটি আঞ্চলিক সহযোগিতামূলক সংগঠন গড়ে তোলার উদ্যোগ তিনি প্রথম গ্রহণ করেন। ১৯৮০ সালে তিনি ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ভুটান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ-এই সাতটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের নিয়ে একটি শীর্ষ সম্মেলনের আহ্বান জানান। এই প্রস্তাবে ভারতসহ অন্যান্য দেশগুলির রাষ্ট্রপ্রধানরা সমর্থন জানান। শুরু হয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় একটি আস্থলিক সহযোগিতামূলক সংস্থা গঠনের তোড়জোড়। দীর্ঘ পাঁচ বছর যাবৎ প্রস্তুতি পর্ব চলে। তারপর ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় দক্ষিণ এশিয়ার সাতটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের আয়োজিত শীর্ষ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘সার্ক’ (SAARC-South Asian Association for Regional Cooperation)- এর উদ্ভব ঘটে।

সার্ক-এর গঠন

১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে প্রস্তুতি সম্মেলনে সার্ক-এর গঠনকাঠামোর চূড়ান্ত রূপরেখা প্রস্তুত করা হয়। সার্ক-এর কাঠামোর বর্তমান রূপ হল-

[1] শীর্ষ সম্মেলন: সার্ক-এর সর্বোচ্চ স্তরে রয়েছে রাষ্ট্রপ্রধানদের শীর্ষ সম্মেলন। সাধারণত বছরে একবার এই শীর্ষ সম্মেলন সার্ক-ভুক্ত দেশগুলিতে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। সার্ক-ভুক্ত দেশগুলির রাষ্ট্রপ্রধানরা এই সম্মেলনে যোগ দিয়ে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে আঞ্চলিক সহযোগিতার নানান প্রস্তাবকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকেন

[2] বিদেশমন্ত্রীর পরিষদ: সার্ক সদস্যভুক্ত দেশগুলির বিদেশমন্ত্রীদের নিয়ে বিদেশমন্ত্রী পরিষদ গঠিত হয়। পরিষদের মূল কাজ হল সার্ক-এর শীর্ষ সম্মেলনে গৃহীত নীতি ও কর্মসূচির বাস্তবরূপদানের জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা। তা ছাড়া সার্ক-এর স্থায়ী কমিটি ও অন্যান্য কমিটিগুলির কাজকর্মের তদারকিও করে থাকে মন্ত্রীপরিষদ।

[3] স্থায়ী কমিটি: সার্ক-এর একটি স্থায়ী কমিটি রয়েছে। সার্ক সদস্যভুক্ত দেশগুলির বিদেশ দফতরের সচিবদের নিয়ে এই স্থায়ী কমিটি গঠিত হয়। স্থায়ী কমিটি দক্ষিণ এশিয়ায় সাক-ভুক্ত দেশগুলিতে সার্ক-এর কাজকর্ম পর্যালোচনা করে মন্ত্রীপরিষদের কাছে প্রতিবেদন পেশ করে। সার্ক-এর মন্ত্রীপরিষদের কাছে নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে কমিটিকে এই প্রতিবেদন নিয়মিতভাবে জমা দিতে হয়।

[4] প্রযুক্তিগত কমিটি: সার্ক-এর গঠনকাঠামোর চতুর্থ স্তরে রয়েছে কতকগুলি প্রযুক্তিগত বা টেকনিকাল কমিটি। সার্ক সদস্যভুক্ত রাষ্ট্রের সরকারি প্রতিনিধিদের নিয়ে এই কমিটিগুলি গঠিত হয়। কমিটিগুলি মূলত সার্ক-এর সহযোগিতামূলক কর্মসূচির বাস্তব রূপায়ণ, বিভিন্ন ধরনের কাজের মধ্যে সমন্বয়সাধন ও তদারকির বিষয়ে দায়বদ্ধ থাকে।

সার্ক-এর শীর্ষ সম্মেলনে গৃহীত প্রস্তাব সার্ক-এর সংবিধান অনুযায়ী বছরে একবার শীর্ষ সম্মেলনের ব্যবস্থা রয়েছে। আজ পর্যন্ত সার্ক-এর ১৮টি শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

[1] প্রথম সার্ক শীর্ষ সম্মেলন (১৯৮৫): সার্ক-এর প্রথম শীর্ষ সম্মেলন ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরে অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে সার্ক-এর প্রতিষ্ঠাতা সাতটি দেশ যথাক্রমে ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মালদ্বীপ, ভুটান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা অংশগ্রহণ করে। সম্মেলনে সার্ক-এর সাংগঠনিক কাজকর্ম পরিচালনার জন্য একটি সচিবালয় গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তা ছাড়া সার্ক-এর মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলিও এই সম্মেলনে ঘোষিত হয়।

[2] দ্বিতীয় সার্ক শীর্ষ সম্মেলন (১৯৮৬): ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় সার্ক সম্মেলন ভারতের ব্যাঙ্গালোর শহরে অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে সার্ক-এর একটি স্থায়ী সচিবালয় গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ ছাড়া দ্বিতীয় শীর্ষ সম্মেলন সার্ক-এর প্রযুক্তিগত কমিটি গঠনের প্রস্তাবও গ্রহণ করে।

[3] তৃতীয় সার্ক শীর্ষ সম্মেলন (১৯৮৭): তৃতীয় সার্ক সম্মেলন ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে সার্ক- এর সংহতি, শান্তি, জনগণের সহযোগিতা, বহুমুখী বাণিজ্যিক আদানপ্রদান, উত্তর-দক্ষিশ মত বিনিময়, সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলা প্রভৃতির ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়।

[4] চতুর্থ সার্ক শীর্ষ সম্মেলন (১৯৮৮): সার্ক-এর চতুর্থ শীর্ষ সম্মেলন পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে মাদক দ্রব্য পাচার ও তার ব্যাবসা বন্ধের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। এই সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়ার জন্য ‘SAARC 2000’ নামে একটি ভবিষ্যৎমুখী প্রকল্প রচনা করে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, প্রাথমিক স্বাস্থ্য, জন্মনিয়ন্ত্রণ প্রভৃতির ওপর জোর দেওয়া হয়।

[5] পঞ্চম সার্ক শীর্ষ সম্মেলন (১৯৯০): পঞ্চম সার্ক শীর্ষ সম্মেলন মালদ্বীপের রাজধানী মালে-তে অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে আঞ্চলিক উৎপাদন প্রকল্পে উৎসাহদানের জন্য তহবিল গঠন, পরিবেশ সংরক্ষণ, জৈব প্রযুক্তি প্রভৃতি ক্ষেত্রে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে প্রস্তাব গৃহীত হয়।

[ 6] ষষ্ঠ সার্ক শীর্ষ সম্মেলন (১৯৯১): ষষ্ঠ সার্ক শীর্ষ সম্মেলন শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বো শহরে অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে যেসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল দারিদ্র্যদূরীকরণের জন্য একটি দক্ষিণ এশীয় কমিশন গঠন, আঞ্চলিক উন্নয়ন তহবিল গঠনের প্রস্তাব সম্পরে বিচারবিবেচনা, উন্নয়ন ও বাণিজ্যের ব্যাপারে পারস্পরিক নির্ভরশীলতার ওপর গুরুত্ব প্রদান, সার্ক-এর জন্য একটি বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত বাণিজ্যির এলাকা (বা SAPTA) চালু করা ইত্যাদি।

7] সপ্তম সার্ক শীর্ষ সম্মেলন (১৯৯৩): ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে এপ্রিলে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় সপ্তম সার্ক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ঐ সম্মেলনে ‘SAPTA’ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (ADB) সঙ্গে যোগাযোগের সিদ্ধান্তও এই সম্মেলন ঘোষণা করে। তা ছাড়া ২০০২ সালের। মধ্যে সার্ক অঞ্চল থেকে দারিদ্র্য নিশ্চিহ্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ, শিশুদের কল্যাণের জন্য উপযুক্ত উদ্যোগ গ্রহণ-সম্পর্কিত প্রস্তাবঃ সম্মেলনে গৃহীত হয়।

[৪] অষ্টম সার্ক শীর্ষ সম্মেলন (১৯৯৫): অষ্টম সার্ক শীর্ষ সম্মেলন ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হয়। সার্ক-এর এক দশক পূর্তি উপলক্ষে সম্মেলনে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়। এই সম্মেলনে ‘SAPTA’ চুক্তির অধীনে সদস্য রাষ্ট্রগুলি শুক্ষযোগ্য পণ্যের তালিকায় শুল্ক হ্রাসের একটি নির্দিষ্ট মাত্রা ঘোষণ করে। সেই সঙ্গে বিশ্ববাণিজ্যের ক্ষেত্রে সার্ক-ভুক্ত দেশগুলির যেসব সমস্যা রয়েছে, সেগুলি দূর করার জন্য সংঘবদ্ধ ভূমিকা গ্রহণের সংকল্পের কথা। এই সম্মেলনে ঘোষিত হয়।

[9] নবম সার্ক শীর্ষ সম্মেলন (১৯৯৭): ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে মালদ্বীপের রাজধানী মালে-তে নবম সার্ক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনের আলোচ্য আলোচ্যসূচিতে উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিল সার্ক সদস্যভুক্ত রাষ্ট্রগুলির নিরক্ষরতা দূরীকরণ। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে প্রথা-বহির্ভুত শিক্ষা প্রসারের উদ্দেশ্যে একটি মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়মণ্ডলী গঠনের সিদ্ধান্ত এই সম্মেলনে ঘোষিত হয়। এ ছাড় মহিলা ও শিশুকল্যাণ, পরিবেশ ভারসাম্য, সার্কভুক্ত দেশগুলির রাজধানীর সঙ্গে বিমান যোগাযোগ স্থাপন প্রভৃতি সিদ্ধান্তও সম্মেলনে গৃহীত হয়।

[10] দশম সার্ক শীর্ষ সম্মেলন (১৯৯৮): ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দে দশম সার্ক শীর্ষ সম্মেলন শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোতে অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বৈদেশিক বাণিজ্যে পরিমাণগত অন্তরায় দূরীকরণ এবং সীমান্তপারের সন্ত্রাসবাদ নিয়ন্ত্রণ প্রভৃতির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।

[11] একাদশ সার্ক শীর্ষ সম্মেলন (২০০২): একাদশ সার্ক শীর্ষ সম্মেলন ২০০২ খ্রিস্টাব্দে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে দারিদ্র্য দূরীকরণ কার্যক্রমের পর্যালোচনা, বেকারত্ব সমস্যা, জলসম্পদের সদ্ব্যবহার, সীমান্ত সন্ত্রাসবাদ প্রভৃতির ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়।

[12] দ্বাদশ সার্ক শীর্ষ সম্মেলন (২০০৪): দ্বাদশ সার্ক শীর্ষ সম্মেলন ২০০৪  খ্রিস্টাব্দে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে ভারতের পক্ষ থেকে ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন’-এর ধাঁচে ‘দক্ষিণ এশীয় ইউনিয়ন’ স্থাপনের আহবান জানানো হয়। দ্বাদশ সার্ক শীর্ষ সম্মেলন তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এর মধ্যে রয়েছে, দক্ষিপ এশীয় মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল (SAFTA) স্থাপন, সন্ত্রাসবাদ নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ এবং একটি সামাজিক সনদ রচনা।

[13] ত্রয়োদশ সার্ক শীর্ষ সম্মেলন (২০০৫): ত্রয়োদশ সার্ক শীর্ষ সম্মেলন। ২০০৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়। এইসম্মেলনের ঘোষণাপত্রে আঞ্চলিক সহযোগিতাকে সাধারণ মানুষের আশা- আকাঙ্ক্ষার উপযোগী করে গড়ে তোলার ওপর জোর দেওয়া হয়। আফগানিস্তানকে সার্ক-এর অষ্টম সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে গ্রহণ করার পক্ষে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয় এই সম্মেলনে। এ ছাড়া দক্ষিণ এশীয় মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল (SAFTA) রূপায়ণের লক্ষ্যে সম্মেলনে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে চুক্তি সম্পাদিত হয়।

[14] চতুর্দশ সার্ক শীর্ষ সম্মেলন (২০০৭): চতুর্দশ সার্ক শীর্ষ সম্মেলন ২০০৭ খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিত হয় দিল্লিতে। এই সম্মেলনে পর্যবেক্ষক হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চিন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। সম্মেলনের প্রধান আলোচ্য বিষয় হিসেবে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের বিষয়টিকে তুলে ধরা হয়। এ ছাড়া এই সম্মেলনের ঘোষণাপত্রে খাদ্য, পানীয় জল, জ্বালানি, দূষণমুক্ত পরিবেশ এবং সার্ক অঞ্চলকে সন্ত্রাসমুক্ত করার ওপর জোর দেওয়া হয়।

[15] পঞ্চদশ সার্ক শীর্ষ সম্মেলন (২০০৮): পঞ্চদশ সার্ক শীর্ষ সম্মেলন শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোতে অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে অভ্যন্তরীণ সুস্থিতি বজায় রাখা, সার্ক উন্নয়ন তহবিলের কার্যকর রূপদান প্রভৃতি বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রস্তাব গৃহীত হয়।

[16] ষোড়শ সার্ক শীর্ষ সম্মেলন (২০১০): ষোড়শ সার্ক শীর্ষ সম্মেলন ২০১০ খ্রিস্টাব্দে ভুটানের থিম্পুতে অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে ‘একটি সবুজ ও সুখী দক্ষিস এশিয়া’ (Green and Happy South Asia) গঠনের ওপর জোর দেওয়া হয়। তা ছাড়া আবহাওয়ার পরিবর্তন-সম্পর্কিত সমস্যা মোকাবিলার জন্য পরিবেশগত সহযোগিতা নিয়ে একটি সার্ক সম্মেলন আহ্বানের ব্যাপারে এই সম্মেলনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

[17] সপ্তদশ সার্ক শীর্ষ সম্মেলন (২০১১): সপ্তদশ সার্ক সম্মেলন ২০১১ খ্রিস্টাব্দে মালদ্বীপের আড্ডু সিটিতে অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে সার্ক সদস্যভুক্ত দেশগুলির মধ্যে আর্থিক ও আয় বণ্টনের ক্ষেত্রে অসম বিকাশ ও নারী-পুরুষের বৈষম্য হ্রাসের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।

[18] অষ্টাদশ সার্ক শীর্ষ সম্মেলন (২০১৩): অষ্টাদশ সার্ক শীর্ষ সম্মেলন ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে ‘SAFTA’-সহ পারস্পরিক সহযোগিতার বিভিন্ন ক্ষেত্র নিয়ে আলাপ- আলোচনা ডারত ও সার্ক সার্ক-এর সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে সর্ববৃহৎ রাষ্ট্র হল ভারত। সার্ক-এর অন্যান্য রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে তুলনা করলে ভারতকে নির্দ্বিধায় বৃহৎ শক্তি বলা যেতে পারে। জন্মলগ্ন থেকেই দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সহযোগিতামূলক সংস্থা সার্ক-এর সঙ্গে ভারতের একটি অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক রয়েছে। এই সম্পর্কটি নানান দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-

১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের তদানীন্তন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যখন এই উপমহাদেশের দেশগুলিকে নিয়ে একটি আঞ্চলিক সহযোগিতামূলক সংগঠন গড়ে তোলার প্রস্তাব দেন, ভারত তা সাদরে গ্রহণ করে। ভারতের বিদেশনীতির একটি অন্যতম ঘোষিত নীতি হল প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে সহযোগিতা ও সম্প্রীতি বজায় রাখা। বহু আগে থেকেই ভারত এই নীতি অনুসরণ করে এসেছে এবং সার্ক-এর গঠন ভারতের এই নীতিকে বাস্তবায়িত করেছে।

সার্ক-এর সদস্যদের মধ্যে বৃহৎ শক্তিধর দেশ হল ভারত। ভারতের এই অবস্থান প্রথমদিকে ছোটো দেশগুলির মনে এক ধরনের ভীতি ও সংশয়ের সৃষ্টি করেছিল। অনেকের ধারণা ছিল, বৃহৎ শক্তি হিসেবে ভারত তার প্রভুত্বকামী ভাবমূর্তি নিয়ে সার্ক-এর মঞ্চকে ব্যবহার করবে। কিন্তু ভারত কখনোই সার্ককে তার ক্ষমতা প্রদর্শনের মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করেনি। অন্যান্য সদস্যের মতোই ভারত এখানে একটি সহযোগী সদস্যরাষ্ট্রের ভূমিকা পালন করে চলেছে। ভারত কোনো প্রতিবেশী রাষ্ট্রের কাছ থেকে কোনো ধরনের অন্যায় সুবিধা আদায় করেনি। কোনো প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ভূখণ্ডকেও সে দখল করেনি। অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার যে নীতি সর্বজনীন স্বীকৃত নীতি বলে সার্কে গৃহীত হয়েছে, ভারত তাকে বহুকাল আগে থেকেই অনুসরণ করে চলেছে। সার্ক-এর এক উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক পদক্ষেপ হল দক্ষিণ এশিয়ায়অবাধ বাণিজ্য চুক্তি বা ‘সাফটা’ (South Asian Free Trade Area) সম্পাদন। ২০০৪ খ্রিস্টাব্দে ইসলামাবাদে সার্ক-এর দ্বাদশ শীর্ষ সম্মেলনে সদস্য রাষ্ট্রগুলি সাফটা চুক্তি সম্পাদন করে । চুক্তিতে বলা হয় ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে সার্কভুক্ত দেশগুলিকে নিয়ে অবাধ বাণিজ্য অঞ্চল গড়ে তোলা হবে। কিন

Leave a Comment