সংবিধান কাকে বলে? সংবিধানের শ্রেণিবিভাজন করাে।

সংবিধান

সাধারণভাবে সংবিধান বলতে রাষ্ট্র পরিচালনার নিয়মকানুনকে বােঝায়। যে-কোনাে প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে গেলে যেমন কতকগুলি সাধারণ নিয়মকানুনের প্রয়ােজন হয়, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে রাষ্ট্রের ক্ষেত্রেও তা দেখা যায়। রাষ্ট্রের পরিচালনার জন্য একান্ত আবশ্যক এই নিয়মকানুনগুলি হল সংবিধান।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের প্রদত্ত সংজ্ঞা: সংবিধানের সংজ্ঞা নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। লর্ড ব্রাইস সংবিধান বলতে সেইসব আইনকানুন ও রীতিনীতির সমষ্টিকে বুঝিয়েছেন, যেগুলি রাষ্ট্রীয় জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সি এফ স্ট্রং-এর মতে, সংবিধান হল সেইসব নিয়মনীতির সমষ্টি যার সাহায্যে সরকারের ক্ষমতা, শাসিতের অধিকার এবং শাসক ও শাসিতের সম্পর্ক নির্ধারিত হয়। গিলক্রিস্ট সংবিধান বলতে এমন কতকগুলি লিখিত বা অলিখিত নিয়মকানুনের কথা উল্লেখ করেছেন, যেগুলির মাধ্যমে সরকার গঠন, সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টন এবং বিভাগগুলির কার্যক্ষেত্র নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়।

ব্যাপক ও সংকীর্ণ অর্থে সংবিধান: সংবিধানের সংজ্ঞা নির্ণয় করতে গিয়ে ব্যাপক ও সংকীর্ণ অর্থের কথাও বলা হয়ে থাকে। ব্যাপক অর্থে সংবিধান হল দেশের শাসনব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণকারী সমস্ত রকম লিখিত ও অলিখিত নিয়মকানুন। লিখিত নিয়মকানুন বলতে আইন এবং অলিখিত নিয়মকানুন বলতে রীতিনীতি, প্রথা, আচার-ব্যবহার প্রভৃতিকে বােঝায়। অন্যদিকে, সংকীর্ণ অর্থে সংবিধান বলতে শুধুমাত্র সেইসব লিখিত মৌলিক আইনকানুনকে বােঝায় যার দ্বারা সরকার গঠন, সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টন ও সম্পর্ক নির্ণয় এবং রাষ্ট্রের সঙ্গে নাগরিকদের সম্পর্ক প্রভৃতি নিয়ন্ত্রিত হয়।

সংবিধানের শ্রেণিবিভাজন

সংবিধানের শ্রেণিবিভাজন নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকলেও, সাধারণভাবে দুটি প্রধান শ্রেণিতে সংবিধানকে ভাগ করার ব্যাপারে অনেকে সহমত পােষণ করেছেন। যেমন—

  • [1] সুপরিবর্তনীয় ও দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান এবং 
  • [2] লিখিত ও অলিখিত সংবিধান।

[1] সুপরিবর্তনীয় ও দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান: সংবিধান সুপরিবর্তনীয় ও দুষ্পরিবর্তনীয় দুরকমই হতে পারে। সংবিধান সংশােধন বা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে প্রকৃতিগতভাবে তাদের মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে তার ভিত্তিতে সুপরিবর্তনীয় ও দুষ্পরিবর্তনীয় আখ্যা দেওয়া হয়ে থাকে।

  • সুপরিবর্তনীয় সংবিধান: যে পদ্ধতিতে আইনসভা দেশের সাধারণ আইন পাস করে বা তার রদবদল করে, সেই পদ্ধতিতে সংবিধানের সংশােধন বা পরিবর্তন করা হলে তাকে সুপরিবর্তনীয় সংবিধান বলে। এজন্য কোনাে ‘বিশেষ পদ্ধতি’ অবলম্বনের দরকার পড়ে না। আইনসভার সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটেই সংবিধান সংশােধন বা পরিবর্তন করা যায়। সুপরিবর্তনীয় সংবিধানের উদাহরণ হল ব্রিটেন, নিউজিল্যান্ড প্রভৃতি দেশ।
  • দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান: আইনসভায় সাধারণ আইন পাসের পদ্ধতিতে যে সংবিধানকে সংশােধন বা পরিবর্তন করা যায় না, যে। সংবিধান সংশােধন বা পরিবর্তন করতে গেলে ‘বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়, তাকে দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান বলা হয়। দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানের দৃষ্টান্ত হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান প্রভৃতি দেশের সংবিধানের কথা উল্লেখ করা যায়।

[2] লিখিত ও অলিখিত সংবিধান: সংবিধানের মৌলিক নীতিগুলি লিখিত বা অলিখিত, দুই-ই হতে পারে। এই কারণেও সংবিধানের শ্রেণিবিভাজন করা হয়ে থাকে।

  • লিখিত সংবিধান: দেশের শাসনব্যবস্থার মৌলিক নীতিগুলি যেক্ষেত্রে একটি দলিলের আকারে লিপিবদ্ধ করা হয়, তাকে লিখিত সংবিধান বলে। সাধারণত একটি সংবিধান পরিষদ বা কনভেনশন এসব সাংবিধানিক মৌলিক নীতিগুলিকে লিপিবদ্ধ করার কাজ করে থাকে। বিশ্বের প্রাচীনতম লিখিত সংবিধান হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান। সুইটজারল্যান্ড, ভারত, রাশিয়া প্রভৃতি দেশের সংবিধান লিখিত সংবিধানের অন্যতম উদাহরণ।
  • অলিখিত সংবিধান: দেশের শাসনব্যবস্থার মৌলিক নীতিগুলি যখন প্রথা, আচার ব্যবহার, রীতিনীতি ও বিচারালয়ের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে, তখন তাকে অলিখিত সংবিধান বলে আখ্যা দেওয়া হয়। কোনাে সংবিধান পরিষদ বা কনভেনশন অলিখিত সংবিধানের শাসন সম্পর্কিত মৌলিক নীতি প্রণয়নের কাজ করে না।অলিখিত সংবিধানের প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল গ্রেট ব্রিটেনের সংবিধান।

Political Science (H.S-11) all Questions/Answers here

Leave a Comment