উদ্দিষ্ট ব্যক্তির পরিচয়
জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মুস্তফা সিরাজের ‘ভারতবর্ষ’ গল্পের শেষ রোদের আলোয় যা দূরের দিকে ক্রমশ আবছা হয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে, সে গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র তথা এক নামগোত্রহীন থুত্থুরে বুড়ি।
বুড়ির আচ্ছা হয়ে যাওয়া দেখানোর কারণ
গল্পের শেষে উদ্ধৃতিটি নিঃসন্দেহে বক্তব্যপষ্ট ও ব্যঞ্জনাময়। আমরা গল্পে দেখি রাঢ়বঙ্গের দুঃখ সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে এক থুত্থুরে বুড়ি বাজার এলাকায় প্রবেশ করে। তারপর ‘ফাঁপি’র প্রবল শৈত্য ও ভেজা প্রকৃতিতে মুক্তাঙ্গনে বট গাছের খোঁদলে রাত্রি যাপন করে। পরদিন সকালে সেখানে নিথর বুড়িকে দেখে লোকজন অনুমান করে নেয় যে সে মৃতা। এই কল্প মৃত্যুর পটভূমিতে লেখক আনয়ন করে ভারতের পারস্পরিক ধর্ম দ্বন্দ্বের ঘটনা ক্রম, যেখানে সামান্য কোন ছুতো পেলেই প্রাতিষ্ঠানিক দুই ধর্মের মানুষ, হিন্দু মুসলমান একে অপরের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরে, দন্ড যুদ্ধের মেতে ওঠে। এখানেও একই ব্যাপারের পুনরাবৃত্তি ঘটতে দেখা যায়। দ্বন্দ্ব যখন চরমসীমায় পৌঁছেছে তখন লেখক বরীকে পূর্ণজাগরিত করেন। শুধু তাই নয়-ধর্মতন্ত্রের দুই লড়াকু সম্প্রদায়ের মানুষজনদের কৌতুহলী জিজ্ঞাসার ওপর নির্ভীক ও উপেক্ষাময় পদসঞ্চরে বুড়ির চলে যাওয়া দেখান। বোঝা যায়-প্রচলিত প্রতিষ্ঠানিক ধর্মের অসারতার প্রতি তীব্র অবজ্ঞা ছুঁয়ে দিয়েছেন লেখক। ধর্ম হল, যা ধারণ করা হয়। মানুষ মানবতা ধারণ করুক-এই লেখকের প্রত্যাশা। তথাকথিত ধার্মিকজন জীবিত-বিপন্ন মানুষকে বাঁচার প্রেরণা দেয় না। কিন্তু মৃত মানুষের ধর্ম প্রণামের লড়াই করে, সশস্ত্র হয়ে। তাই বুড়ি দূরের দিকে ক্রমশ আবছা হয়ে যাওয়ার যেন ধর্মের অমানবিক দিকটিকে বাস্তবিক বঙ্গের সম্মুখীন করে।
দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা সমস্ত অধ্যায় অনুযায়ী তার সব প্রশ্নের উত্তর