কে জাগলেন
দীর্ঘ জীবন যুদ্ধে ক্লান্ত অবসন্ন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছে যেন হৃৎচেতনা ফিরে পেলেন,’রুপনারান’ তথা জীবন নদীর কূলে দাড়িয়ে নব প্রাণীর প্রাণিত হয়ে তিনি স্বয়ং জেগে উঠলেন।
জেগে ওঠার আসল অর্থ
পাঠ্য কবিতায় কবি মানব জীবনের এক পরম মর্মসত্য উদঘাটন করেছেন। মানুষ মহাজগতের এক ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশ। বিশ্ব প্রাণের প্রবাহের অনুমাত্র সেই আত্মপ্রাণে ধারণ করে আছে। তার জীবন, কর্ম, ধর্ম, সজীবতা, সক্রিয়তা সবার জন্যই সে বিশ্ব প্রকৃতির কাছে ঋণী। বিশ্ব প্রকৃতির কাছেই তার দেনা শোধ করতে হবে। ‘রূপনারায়ণ’ পশ্চিমবঙ্গের একটি নথ। তার কূলেই রূপনারানের কুল। আবার ‘রূপনারানের’ অন্তরাথে কবির বিশেষ উপলব্ধি ও বর্তমান। কবির ব্যাখ্যায় স্বপ্ন মধুর, সত্য কঠিন। সত্য দুঃখ যন্ত্রণা দিলেও তাই কঠিন সত্য কে ভালোবাসায় মানুষের উচিত কাজ। ‘রূপনারান’ সেই রূপময় সত্য জগত। এ জগতে প্রাণ প্রবাহিত। এ জগতে স্বপ্নময়তার নয়, কঠিন সত্যের। কবি এ জগতে রূপ অনুভব করতে চান। নিদারুণ সত্যকে পেতে চান শত দুঃখ কষ্ট, সব সহ্য করেও। এ সত্য বাস্তব জগতই তার ‘রূপনারানের কূল’ ।
প্রবাহমান জীবন নদীর কূলে কবির আত্মজাগরণ ঘটেছে। অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ কবি জগতের স্বপ্নইল আবর্তে নয়, ‘আঘাতে আঘাতে’, ‘বেদনায় বেদনায়’ নিজেকে চিনেছেন, নিজের স্বরূপ প্রত্যক্ষ করেছেন হৃদয়ের রক্তক্ষরণে।’ভালো-মন্দ যাহাই আসুক’ সত্যকে সহজ করে গ্রহণ করার হৃদয় কবি আজীবন বাঁচিয়ে রাখতে পেরেছিলেন। তাই জীবনের শেষ লগ্নেও তিনি ‘কঠিন’ সত্যকেই ভালবেসেছেন।
বাস্তব রুদ্র, রুক্ষ, নিষ্ঠুর হলেও তাই মানুষকে তা মেনে চলতে হয়। মানব জীবন কঠিন সত্য কে অনুভবে উন্মখ। এই বাস্তব জগতে কবির ‘রূপনারান’ । তার কূলে জেগে ওঠা এই বাস্তব বা সত্যের কঠিন মর্ম কে উপলব্ধি করা। ‘জেগে ওঠা’ তাই প্রকৃতার্থে কবির আত্মজাগরণ বা বোধোদয়।
দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা সমস্ত অধ্যায় অনুযায়ী তার সব প্রশ্নের উত্তর