নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার দ্বিতীয় স্তর হল মাধ্যমিক শিক্ষা। শিক্ষার্থীর জীবন বিকাশের দিক থেকে সমগ্র কৈশোর বা বয়সন্ধিকাল হল এই শিক্ষা স্তরের অন্তর্ভুক্ত।
জীবনের বিকাশগত ও শিক্ষাগত উপর দিক থেকেই এই শিক্ষা কালটিকে মধ্যম স্তর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা স্থান বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের পর এবং উচ্চ শিক্ষা স্তরের মধ্যবর্তী যে শিক্ষা বিদ্যালয়ের পরিচালিত হয়, তাই হল মাধ্যমিক শিক্ষা।
কমিশনের মতে, মাধ্যমিক শিক্ষা হলো অষ্টমবার নবম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত যে শিক্ষাকাল তাই হল মাধ্যমিক শিক্ষা স্তর।
মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পর্কে কোঠারি কমিশনের সুপারিশ
কমিশন মন্তব্য করেছেন শিক্ষার্থীকে গণতান্ত্রিক ধারণায় এবং নৈতিক ও আধ্যাত্মিক মূল্যবোধের সমন্ধে নির্দেশনাদানের উপযুক্ত ধারণা জাগ্রত করতে মাধ্যমিক শিক্ষা পুনগঠিত করা উচিত।
কোঠারি কমিশনের মতে মাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
বর্তমান বিজ্ঞান নির্ভর পরবর্তীশীল সমাজের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন একান্ত প্রয়োজন। এই পরিবর্তনশীল সমাজের উপযোগী কমিশন যে সকল শিক্ষার লক্ষ্যের কথা বলেছেন, তা হল –
১ উপাদানমুখী শিক্ষা
শিক্ষাকে জাতীয় উপাদান কি করতে হবে। সম্পূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থা যাতে সচল থাকতে পারে এবং শিক্ষা যাতে জাতীয় সম্পদ বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে পারে তার জন্য বিজ্ঞানসম্মত সমস্ত রকমের জ্ঞান এবং কর্ম প্রশিক্ষণ দেওয়াই হবে শিক্ষার লক্ষ্য।
২ জাতীয় সংহতিবোধ
কমিশন বলেছেন, ভারতীয় মাধ্যমিক শিক্ষা প্রধান লক্ষ্য হবে জাতীয় সংহতিবোধ গড়ে জাগ্রত করা। নাগরিকদের মধ্যে জাতীয় চেতনা ও ঐক্যের মনোভাব জাগরণের মাধ্যমেই জাতীয় সংহতিবোধ গড়ে তোলা সম্ভব।
৩ চারিত্রিক বিকাশ
শিক্ষার্থীদের চারিত্রিক বিকাশের সহায়তা করাকেও শিক্ষার লক্ষ্য হিসেবে ধরা হয়েছে। গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার সুস্থভাবে বসবাস করতে গেলে প্রত্যেকেরই ব্যক্তিগত কিছু গুণের অধিকারী হওয়ার একান্ত ভাবে বাঞ্ছনীয়। শুধু তাই নয় শৃঙ্খলাবোধ, মমত্ববোধ ইত্যাদি মতো চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য গুলির বিকাশ ঘটানো শিক্ষার লক্ষ্য।
৪ প্রকাশভঙ্গির বিকাশ ও সংযোগস্থাপন
ভারতীয় শিক্ষার একটি লক্ষ্য হবে ভারতীয়দের প্রকাশভঙ্গির বিকাশ ও পারস্পরিক স্থাপনের ক্ষমতা বিকাশের সহায়তা করা।
৫ সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জাগরণ
কমিশন বলেছেন, বিদ্যালয়ের শিক্ষার মাধ্যমে জাতীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত করতে হবে। এই শ্রদ্ধাবোধি শিক্ষার্থীদের মধ্যে জাতীয় চেতনা বোধ জাগ্রত করবে।
৬ আধুনিকীকরণের প্রশিক্ষণ
কমিশন বলেছেন, বর্তমানে জ্ঞানের প্রসার দ্রুতগতি থেকে চলছে, তেমনি দ্রুত সমাজের পরিবর্তন ঘটেছে। কারণ জ্ঞান ও সামাজিক ব্যবস্থার আধুনিক কিকরণের জন্য প্রত্যেক নাগরিককে শিক্ষিত হয়ে উঠতে হবে।
তাই আধুনিক সমাজের উপযোগী হয়ে গড়ে উঠতে পারে এবং ভারতীয় সমাজের আধুনিকীকরণের সাহায্য করতে পারে সেই উপযোগী প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা করাই হবে শিক্ষার লক্ষ্য।
৭ ভাষার বিকাশ
কমিশন মনে করেছেন, ভাষার বিকাশের মধ্যে দিয়েই মানুষ তার মনের ভাবকে দ্রুত অন্যের কাছে পৌঁছে দিতে পারে। তাই প্রতিটি মানুষের মধ্যে ভাষার বিকাশ সাধন করার শিক্ষার একটি বৃহৎ লক্ষ্য।
৮ শিক্ষার সমসুযোগ
সমাজের সকল মানুষ যাতে শিক্ষায় সুযোগ-সুবিধা লাভ করতে পারে। সেই ব্যবস্থা করতে হবে। অর্থাৎ গণতান্ত্রিক নীতি দ্বারা পরিচালিত হয়ে শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
৯ জাতীয় শিক্ষা পরিকল্পনা রচনা
কমিশনের মতে, শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য হলো ভারতীয় শিক্ষার একটি জাতীয় পরিকল্পনা রচনা।
১০ নৈতিক ও আধ্যাত্মিক মূল্যবোধ জাগরণ
কমিশন বলেছেন, শিশুর মধ্যে নৈতিক ও আধ্যাত্মিক মূল্যবোধ জাগ্রত করাই শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ।
১১ গণতান্ত্রিক চেতনার বিকাশ
কমিশন বলেছেন জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থার লক্ষ্য হবে, শিক্ষার্থীদের মনে গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার প্রতি বিভিন্ন আস্তার ভাব জাগরণ করা।
মূল্যায়ন – শিক্ষা কমিশন ১৯৬৪ থেকে ১৯৬৬ কর্তৃত্ব নির্ধারিত শিক্ষার উদ্দেশ্য গুলি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, শিক্ষার ব্যবহারিক দিকের ওপর গুরুত্ব অলোপ করা হয়েছে।
শিক্ষার লক্ষ্য হবে এমন নাগরিক সৃষ্টি করার যে আনুগত্য, বিশ্বাস, আশা-আকাঙ্ক্ষা, ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে অবলম্বন করে গড়ে উঠবে ।
যাতে সে ভারতীয় সমাজকে ভারতীয় চিন্তা ধারাকে আধুনিকতার পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে।