*আজকের এই আর্টিকেলর মধ্যে তোমাদের সঙ্গে ৩টি প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আলোচনা করলাম। যথা প্রশ্ন ১ প্রচলিত মাধ্যমিক শিক্ষা ত্রুটি ও প্রশ্ন ২ মাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্য, প্রশ্ন ৩ মাধ্যমিক শিক্ষার পরিকাঠামো বা কাঠামো
প্রশ্ন ১ – প্রচলিত মাধ্যমিক শিক্ষা ত্রুটি
কমিশন তাদের প্রতিবেদনে প্রচলিত মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থার যেসব ত্রুটিগুলো সর্বসম্মুখে তুলে ধরেছেন তা হলো?
১ বাস্তব জগতের সঙ্গে সম্পর্কহীন শিক্ষা
প্রচলিত মাধ্যমিক বিদ্যালয় গুলিতে যে ধরনের শিক্ষা অবতীত তা ছিল বাস্তব জগতের সঙ্গে সম্পর্কহীন শিক্ষা। এই শিক্ষার দ্বারা তারা সমাজ জীবনে উপযুক্ত হয়ে গড়ে ওঠার যোগ্যতা অর্জন করতে পারতো না।
২ বৈচিত্র্যহীন পাঠক্রম
প্রচলিত মাধ্যমিক শিক্ষার পাঠক্রম ছিল যান্ত্রিক ও বৈচিত্রহীন। এই শিক্ষা গ্রহণের শিক্ষার্থীরা আগ্রহবোধ করত না।
৩ পুঁথিকেন্দ্রিক শিক্ষা
বিদ্যালয় গুলিতে শুধুমাত্র পুঁথিগত বিদ্যার আয়ত্তের ওপর গুরুত্ব অলৌক করা হতো। ব্যবহারিক শিক্ষার বিশেষ কোনো ব্যবস্থা ছিল না।
৪ মাতৃভাষার প্রতি অবহেলা
ভাষা শিক্ষাদানের ব্যাপারে ইংরেজি কে যতখানি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে মাতৃভাষা বা অন্যান্য দেশ ও ভাষাকে ততক্ষণ গুরুত্ব দেয়া হয়নি।
৫ নিষ্পান শিক্ষণ পদ্ধতি
মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গুলিতে নিষ্পান শিক্ষাদান পদ্ধতি। শিক্ষার প্রাণ সঞ্চার করতে পারেনি। এখানে শিক্ষার্থীদের মুখস্তবিদের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে মাত্র।
৬ শৃঙ্খলার অভাব
শ্রেণীতে অত্যাধিক শিক্ষার্থীর চার হওয়ার ফলে পশম পাঠকের পরিবেশ সম্পূর্ণ হবে নষ্ট হচ্ছে। এই অবস্থায় শিক্ষক শিক্ষার্থীর মধ্যে সম্পর্ক গড়ে উঠতে সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে শিক্ষার্থীদের আচরণের শৃঙ্খলার অভাব লক্ষ্য করা যায়।
৭ আর্থিক দুরবস্থা
আর্থিকভাবে দুরবস্থার কারণে মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় এবং সার্বিক সার্বিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
৮ ত্রুটিপূর্ণ পরীক্ষা পদ্ধতি
ত্রুটিপূর্ণ পরীক্ষা পদ্ধতি প্রচলিত মাধ্যমিক শিক্ষার দুর্দশা জন্য অনেকাংশে দায়ী। এই পরীক্ষা পদ্ধতি সম্পূর্ণ মুখস্তভিত্তিক।
৯ পাঠক্রমিক কার্যাবলীর অভাব
বিদ্যালয় গুলিতে শারীর শিক্ষা ও সামাজিক শিক্ষা অভাব পরিলক্ষিত হয়। অর্থাৎ পাঠক্রমিক কার্যকর বিশেষ প্রভাব দেখা যায়নি।
কমিশন উপরিক্ত মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থার উল্লেখ করলেও বিশেষভাবে হতাশা প্রকাশ করেনি। তারা বলেছেন, এই ত্রুটি বিচ্যুতির মাধ্যমেই মাধবের শিক্ষা ব্যবস্থাকে বলিষ্ঠ দূরদৃষ্টি সম্পন্ন একটি ভালো নীতির সাহায্যের নতুন করে গড়ে তুলতে হবে।
প্রশ্ন ২ – মাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্য
কমিশন মাধ্যমিক শিক্ষার যে সকল লক্ষের কথা বলেছেন তা নিম্নে আলোচনা করা হলো।
১ যোগ্য নাগরিক সৃষ্টি
মাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষণ হল গণতান্ত্রিক ভারতের জন্য যোগ্য নাগরিক সৃষ্টি করা। আমাদের দেশে এমন এক শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ভারতের সুযোগ্য নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে পারে।
২ জাতীয় সম্পদ বৃদ্ধি
ভারতের সার্বিক উন্নয়নের জন্য জাতীয় সম্পদ বৃদ্ধি মাধ্যমিক শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য। শিক্ষার্থীরা যদি দায়িত্বের সঙ্গে , জাতীয় সম্পদ বৃদ্ধিতে অংশগ্রহণ করে তবে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন দ্রুত ঘটানো সম্ভব হবে।
৩ জীবনের মান উন্নয়ন
মাধ্যমিক শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য হলো, জীবনের মান উন্নয়ন করা। সমস্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদার ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয় মনোভাব সৃষ্টির মাধ্যমে জাতীয় জীবনের মান উন্নয়ন।
৪ ভারতের সংস্কৃতির পূর্ণরূপ জীবন
শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে ভারতীয় সংস্কৃতির পূর্ণরূপ জীবন ঘটানো মাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্য। স্বাধীন ভারতের জাতীয় সংস্কৃতিই হবে তার সমৃদ্ধির পরিচয়।
৫ চারিত্রিক বিকাশে সহায়তা
শিক্ষার্থীরা যাতে গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার কাজে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে সেই ভাবে তাদের চারিত্রিক বিকাশে সহায়তা করাই হবে মাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্য।
৬ নেতৃত্ব গ্রহণের যোগ্যতা সৃষ্টি
গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থাকে সফল করতে হলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নেতৃত্ব গ্রহণ সৃষ্টি করতে হবে। তাই নেতৃত্ব গ্রহণের যোগ্যতা সৃষ্টি করাই মাধ্যমিক শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য হওয়া উচিত।
৭ ব্যক্তিগত সমর্থের উন্নয়ন
মাধ্যমিক শিক্ষার একটি অন্যতম লক্ষ্য হলো দেশের সকল শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বৃত্তির উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে।
৮ শিক্ষার্থীর সৃজন ধর্মীয়তার বিকাশ
শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল ক্ষমতার বিকাশ সাধন মাধ্যমিক শিক্ষার একটি লক্ষ্য। শিক্ষার্থীদের সৃজনধর্মী ক্ষমতার বিকাশ জন্য উপযোগী বিদ্যালয় পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে।
মুদালিয়ন কমিশনের মতে – মাধ্যমিক শিক্ষা হবে স্বয়ংসম্পূর্ণ শিক্ষা। এই শিক্ষা কেবলমাত্র শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার জন্য প্রস্তুত করবে না, বাস্তব জীবন সংগ্রামের জন্যও প্রস্তুত করবে।
প্রশ্ন ৩ – মাধ্যমিক শিক্ষার পরিকাঠামো বা কাঠামো
বর্তমানে এই প্রচলিত মাধ্যমিক শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য কমিশন মাধ্যমিক শিক্ষার কাঠামো গত সংস্কার সাধনের উদ্দেশ্যে নিম্নলিখিত সুপারিশগুলো বলেছেন।।
১ মাধ্যমিক বা নিম্ন বুনিয়াদি শিক্ষা স্তর
নতুন কাঠামো অনুযায়ী চার অথবা পাঁচ বছরের প্রাথমিক কিংবা নিম্ন বুনিয়াদি শিক্ষা হবে।
২ মাধ্যমিক শিক্ষার স্তর
মাধ্যমিক শিক্ষা স্তর থাকবে দুটি স্তরে – যথা
A নিম্ন মাধ্যমিক বা উচ্চ বুনিয়াদি:- নিম্ন মাধ্যমিক বা উচ্চ বুনিয়াদি স্তরের শিক্ষার কাল হবে চার অথবা তিন বছরের।
B উচ্চ মাধ্যমিক স্তর:- উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা কালারে তিন বছরের
কমিশন সুপারিস করেন, তৎকালীন দু বছরের ইন্টারমিডিয়েট স্তরকে তুলে দিয়ে ওই স্তরের এক বছরের মাধ্যমিক স্তরের সঙ্গে যুক্ত করে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর গঠন করতে হবে এবং বাকি এক বছরের ডিগ্রী স্তরের সঙ্গে যুক্ত করে তিন বছরের ডিগ্রী কোর্স চালু করতে হবে।
কমিশনের প্রস্তাবিত মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থী কাঠামো
মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় কমিশনের পস্তাবিত শিক্ষার পরিকাঠামো নিয়ে আলোচনা করা হইল।
পাঠক্রম
মাধ্যমিকে শিক্ষা কমিশনে বলেছেন প্রচলিত মাধ্যমিক শিক্ষার পাঠক্রম বাস্তব জীবনের সঙ্গে সঙ্গতিহীন এবং অন্তত সংকীর্ণ। তাই এই পাঠক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জীবনের চাহিদা গুলি পূরণ করা সম্ভব হয়নি। কমিশন দেশের সকল শিক্ষার্থীর চরিত্র এবং ব্যক্তি সরকার পরিপূর্ণ বিকাশে সহায়তার জন্য বাস্তব জীবনের সঙ্গে সম্মতি রেখে পাঠক্রম রচনা কথা বলেছেন।
মুদালিয়র কমিশন মাধ্যমে সুপারিশ করেছেন তা হলো –
১ নিম্ন মাধ্যমিক স্তরে পাঠক্রম নিম্ন মাধ্যমিক পড়তে হবে সেগুলো হলো – ভাষা, সাধারণ বিজ্ঞান, গণিত, সামাজিক শিক্ষা, বাংলা, হাতের কাজ, শিল্প শারীরিক শিক্ষা।
২ উচ্চ মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থীর রুচি, আগ্রহ ও সামর্থ্য অনুসারে বহু সার্থক পাঠক্রমের সুপারিশ করেছেন। কমিশন এই স্তরে পাঠক্রমকে দুটি অংশে ভাগ করেছেন। যথা আবশ্যিক কেন্দ্রিক বিষয় ও ঐচ্ছিক বিষয়
আবশ্যিক কেন্দ্রিক বিষয়–
১ ভাষা
এই স্তরে দুটি ভাষা আবশ্যিক – মাতৃভাষা বা আঞ্চলিক ভাষা বা ভাষা বা মাতৃভাষা এবং একটি প্রাচীন ভাষা। এ ছাড়া হিন্দি(যাদের মাতৃভাষা নয়) । যারা আগে ইংরেজি কোনদিনও পড়েনি তাদের জন্য প্রাথমিক ইংরেজি, হিন্দি বাদে একটি আধুনিক ভারতীয় ভাষা, । ইংরেজি বাদে একটি আধুনিক ইউরোপীয় ভাষা।
২ সমাজবিজ্ঞান
এখানে বলা হয়েছে প্রথম দুবছরের সাধারণ পাঠ আবশ্যক দরকার।
৩ বিজ্ঞান ও গণিত
এখানে বলা হচ্ছে যে প্রথম ২ বছরের জন্য আবশ্যিক সাধারণ পাঠ অর্থাৎ বিজ্ঞান ও গণিত থাকা বাধ্যতামূলক।
৪ হস্তশিল্প
নিম্নলিখিত তালিকা থেকে যেকোনো একটি হস্তশিল্প প্রয়োজন অনুসারে বাছাই করে নিতে হবে। – কাঠের গাছ, উদ্যান রচনা, দর্জির কাজ, ধাতুর কাজ, সুচি শিল্প ইত্যাদি।
ঐচ্ছিক বিষয়
কমিশন ঐচ্ছিক পাঠক্রমের বিভিন্ন পাঠ্য বিষয়গুলিকে ৭টি মূল প্রভাহে ভাগ করেছেন। প্রতিটি শিক্ষার্থীকে একটি ‘ প্রভাহ ‘ নির্বাচনের সুযোগ দেওয়া হবে। এবং একই প্রবাহের মধ্যে যেকোনো তিনটি বিষয় বে চিনতে হবে। এই ছাত্রী প্রবাহ ও প্রত্যেকটি প্রবাহের অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলি নিজে ভালো করে আলোচনা করলাম।
১ মানবিক বিজ্ঞান
এই মানবিক বিজ্ঞানের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত করা যথা- প্রাচীন ভাষা, ইতিহাস, ভূগোল, অর্থনীতি এবং পৌরবিজ্ঞান, গণিত, সংগীত, গার্হস্থ্য বিজ্ঞান।
২ বিজ্ঞান
শুধু তাই নয় এই বিজ্ঞান বিষয়ের মধ্যেও বিভিন্ন বিষয়গুলো কিন্তু অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যথা –
পদার্থবিদ্যা, রাসায়নিক বিদ্যা, জীবন বিজ্ঞান, ভূগোল, গণিত, শারীর ও স্বাস্থ্য বিজ্ঞান।
৩ কারিগরি
ফলীত গনিত জ্যামিতিক অংকন, ব্যবহারিক বিজ্ঞান, যন্ত্র বিজ্ঞান, ইলেকট্রনিক বিজ্ঞান।
৪ বাণিজ্য
এই বাণিজ্যের মধ্যেও বেশ কিছু কিন্তু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যথা – বাণিজ্যিক প্রয়োগবিদ্যা, বাণিজ্যিক ভূগোল, শর্ট হ্যান্ড ও টাইপ রাইটিং।
৫ কৃষি বিদ্যা
এই কৃষিবিদ্যার মধ্যেও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যথা – সাধারন কৃষিবিদ্যা, পশুপালন, উদ্যান রচনা ও কৃষিকাজ, কৃষি রাসায়ন ও উদ্ভিদবিদ্যা।
৬ চারুকলা
চারুকলার ইতিহাস, অংকন ও নকশা শিক্ষা, চিত্রকলা, মডেলিং, সংগীত, নৃত্যকলা।
৭ গার্হস্থ্য বিজ্ঞান
গার্হস্থ্য অর্থনীতি, পুষ্টি ও রন্ধন প্রণালী, মাতৃমঙ্গল ও শিশু পালন, গৃহ পরিচারণা।
শুধু তাই নয় উল্লেখিত প্রবাহের বিষয়গুলি থেকে শিক্ষার্থীরা আরো একটি বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত বিষয় হিসাবে নিতে পারবে।