সুলতানি আমলে ক্রীতদাসদের কাজ
সুলতানি যুগে ক্রীতদাসদের বিভিন্ন ধরনের কাজে নিযুক্ত করা হত।
[1] গৃহকার্য: সুলতানি যুগে বেশিরভাগ দাস গৃহকার্যে নিযুক্ত হত। দাসরা গৃহের রান্নাবান্না, গৃহ পরিষ্কার রাখা, উদ্যান পরিচর্যা প্রভৃতি কাজকর্ম করত।
[2] হারেমের দেখভাল: কিছু কিছু দাস হারেমের (অন্দরমহল) দেখাশােনা করত। এদের বলা হত খােজা। বিদেশ থেকেও ‘খােজা’ দাস আমদানি করা হত।
[3] কারিগরের কাজ: কিছু দাস সুদক্ষ কারিগর হিসেবে বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় শিল্পসামগ্রী উৎপাদনের কাজে নিযুক্ত ছিল। অলংকার শিল্প, কাঠের আসবাবপত্র, গৃহস্থালির টুকিটাকি প্রভৃতি প্রস্তুতিতে দাসরা নিযুক্ত হত।
[4] প্রশাসন পরিচালনার কাজ: সুলতানগণ বিশেষ যােগ্যতাসম্পন্ন দাসদের প্রশাসনের কাজে নিযুক্ত করতেন। কোনাে কোনাে যােগ্যতাসম্পন্ন দাস তার প্রভুর মৃত্যুর পরে। সুলতান হিসেবেও নিযুক্ত হয়েছেন। এ প্রসঙ্গে কুতুবউদ্দিন আইবক ও ইলতুৎমিসের নাম উল্লেখ করা যায়।
[5] ধর্মীয় কাজ: কোনাে কোনাে দাসকে ধর্মীয় কাজে নিয়ােগ করা হত। ধর্মীয় কাজের প্রচার, ধর্মীয় সেবাকার্য প্রভৃতিতে দাসরা নিযুক্ত থাকত।
[6] মালিকের মনােরঞ্জনের কাজ: মালিকের সঙ্গদান এবং মনােরঞ্জনের জন্যও কোনাে কোনাে দাস নিয়ােজিত হত। প্রভুর সঙ্গে ভ্রমণে বা শিকারে সঙ্গ দেওয়া, গৃহে সঙ্গদান প্রভৃতি কাজে তাদের নিযুক্ত করা হত।
ভারতের সুলতানি আমলের অর্থনীতিতে ক্রীতদাস প্রথার ভূমিকা
সুলতানি যুগের অর্থনীতিতে ক্রীতদাস প্রথার কিছু কিছু প্রভাব পড়েছিল।
[1] কৃষির বিকাশে: সুলতানি আমলে কৃষিক্ষেত্রে প্রচুর ক্রীতদাস নিযুক্ত হয়ে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করেছিল। ফলে কৃষি উৎপাদন দেশের অর্থনীতিকে মজবুত করেছিল।
[2] প্রযুক্তির উন্নতিতে: ক্রীতদাসদের প্রচেষ্টায় কৃষিভিত্তিক শিল্প ও কারিগরি শিল্প—উভয় ক্ষেত্রেই উন্নতি ঘটেছিল।
[3] শাসকদের সম্পত্তি বৃদ্ধিতে: সুলতানি আমলে শাসকরা তাদের খাসজমিতে ক্রীতদাসদের নিয়ােগ করে উৎপাদন কার্য সচল রাখত৷ ক্রীতদাসদের শ্রমের ফসল হিসেবে শাসকদের হাতে প্রচুর সম্পদ সঞ্চিত হয়েছিল।
[4] সুলভ শ্রমিকের জোগানের ক্ষেত্রে: ভারতের মতাে বিশাল দেশে উৎপাদন কার্য অব্যহত রাখার জন্য কৃষি, কারিগরি শিল্প, বন্দর প্রভৃতি ক্ষেত্রগুলিতে সস্তায় সহজলভ্য প্রচুর শ্রমিকের প্রয়ােজন ছিল।
[5] দাসব্যাবসায় অর্থাগমে: পশ্চিম এশিয়ায় উচ্চমূল্যে ভারতীয় ক্রীতদাস বিক্রি হত। এর ফলে বৈদেশিক অর্থ ভারতে এলে দেশের অর্থনীতি মজবুত হয়েছিল।
উপসংহার: নাইবুয়র লিখেছেন যে, “সুলতানি যুগের কঠোর ও ব্যাপক দাসপ্রথা সামাজিক অগ্রগতির পথ রুদ্ধ করেছিল।” দীর্ঘদিন ধরে পরাধীন দাস হিসেবে জীবন কাটানোর ফলে তাদের স্বভাব রুক্ষ ও নিষ্ঠুর হয়ে ওঠে।