রাষ্ট্রপতির নির্বাচন পদ্ধতি
ভারতের রাষ্ট্রপ্রধান হলেন রাষ্ট্রপতি। কিন্তু তিনি প্রত্যক্ষভাবে জনসাধারণের ভোটে নির্বাচিত হন না। এক বিশেষ ও জটিল পদ্ধতির মাধ্যমে তিনি নির্বাচিত হন। ভারতের রাষ্ট্রপতি একক হস্তান্তরযোগ্য সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের নীতির ভিত্তিতে গোপন ভোটের দ্বারা এক নির্বাচক সংস্থা কর্তৃক পরোক্ষভাবে নির্বাচিত হন। সংসদের দুটি কক্ষের নির্বাচিত সদস্য এবং রাজ্য আইনসভার নিম্নকক্ষ বিধানসভার সদস্যদের নিয়ে এই নির্বাচক সংস্থা গঠিত হয়। রাষ্ট্রপতির নির্বাচনের ক্ষেত্রে দুটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়- 1 যথাসম্ভব সমহারে অঙ্গরাজ্যগুলির প্রতিনিধিত্ব এবং ② রাজ্য বিধানসভাগুলির প্রদত্ত ভোটসংখ্যার সঙ্গে পার্লামেন্টের প্রদত্ত ভোটের সমতা রক্ষা।
তিনটি পর্যায়ে রাষ্ট্রপতির নির্বাচন প্রক্রিয়া পরিচালিত হয়। পর্যায় তিনটি হল-
[1] প্রথম পর্যায়ের নির্বাচন প্রক্রিয়া
বিধানসভার একজন নির্বাচিত সদস্যের ভোটের মূল্য
সর্বশেষ জনগণনা অনুসারে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের লোকসংখ্যা
বিধানসভার নির্বাচিত সদস্যের মোট সংখ্যা × ১০০০
রাজ্যের বিধানসভার সদস্যদের ভোটসংখ্যা নির্ণয়ের জন্য প্রথমে রাজ্যের জনসংখ্যাকে বিধানসভার সদস্যসংখ্যা দিয়ে ভাগ করতে হবে। এরপর ভাগফলকে ১০০০ দিয়ে ভাগ করে যা ভাগফল দাঁড়াবে তা হল প্রতি সদস্যের প্রদত্ত ভোটসংখ্যা। তবে এক্ষেত্রে ভাগশেষ যদি ৫০০ বা তার বেশি হয় তাহলে ভাগফলের সঙ্গে ১ যোগ করে ভোটসংখ্যা বের করার নিয়ম রয়েছে।
2] দ্বিতীয় পর্যায়ের নির্বাচন প্রক্রিয়া
সংসদের একজন নির্বাচিত সদস্যের ভোটের মূল্য
– সমস্ত রাজ্য বিধানসভাগুলির সদস্যদের ভোটের মোট মূল্য
সংসদের উভয়কক্ষের সদস্যদের মোট সংখ্যা
দ্বিতীয় পর্যায়ে রয়েছে সংসদের সদস্যদের ভোট-মূল্য নির্ণয়। এজন্য প্রথমে রাজ্য বিধানসভাগুলির সদস্যদের মোট ভোটসংখ্যাকে সংসদের উভয়কক্ষের সদস্যদের মোট সংখ্যা দিয়ে ভাগ করতে হয়। এভাবে যে ভাগফল পাওয়া যায় তা হল সংসদের প্রত্যেক সদস্যের ভোটসংখ্যা। তবে ভাগশেষ থাকলে এবং তা ভাজক সংখ্যার অর্ধেকের সমান বা বেশি হলে ভাগফলের সঙ্গে ১ যোগ করে সংসদের প্রতিটি সদস্যের ভোটের মূল্য নির্ণয় করা হয়।
[3] তৃতীয় পর্যায়ের নির্বাচন প্রক্রিয়া
রাষ্ট্রপতির নির্বাচনে ভোটগ্রহণ: এক্ষেত্রে নির্বাচনে যতজন প্রার্থী থাকবেন ভোটদাতারা ততগুলি পছন্দ জানাতে পারবেন। ভোটদাতাদের প্রথম পছন্দ জানাতেই হবে, না হলে ভোটপত্রটি বাতিল হয়ে যাবে। এভাবে ভোটগণনার পর সব প্রার্থীর প্রথম পছন্দের বৈধ ভোটগুলি যোগ করে যোগফলকে ২ দিয়ে ভাগ করে ভাগফলের সঙ্গে ১ যোগ করলে যে সংখ্যা পাওয়া যাবে তা হল ‘কোটা’।
কোটা = মোট বৈধ ভোটসংখ্যা +1
2
কোনো প্রার্থীকে রাষ্ট্রপতি-পদে নির্বাচিত হতে গেলে এই ‘কোটা’-নির্দিষ্ট ভোট অবশ্যই পেতে হবে। কিন্তু যদি কোনো প্রার্থী ‘কোটা’-নির্দিষ্ট ভোট না পান, তাহলে যিনি সবচেয়ে কমসংখ্যক প্রথম পছন্দের ভোট পেয়েছেন এবং তাঁকে নির্বাচন থেকে বাদ দিয়ে তাঁর পাওয়া দ্বিতীয় বা তৃতীয় পছন্দের ভোটপত্রগুলিকে অন্যান্য প্রার্থীদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। এভাবে যতক্ষণ পর্যন্ত না কোনো প্রার্থী ‘কোটা’-নির্দিষ্ট ভোট পাচ্ছেন ততক্ষণ পর্যন্ত প্রার্থী-বাতিল এবং ভোটপত্রের হস্তান্তর চলতে থাকে।
বিষয়টিকে একটি উদাহরণের সাহায্যে বোঝানো যেতে পারে। ধরা যাক, রাষ্ট্রপতি-পদের প্রার্থীর সংখ্যা চার। প্রার্থীরা হলেন রাম, শ্যাম, যদু ও মধু। প্রথম গণনায় দেখা গেল সকলের প্রথম পছন্দের মোট বৈধ ভোটের সংখ্যা এক লক্ষ। অতএব, কোটা হল ১,০০,০০০+২+১=৫০,০০১। ধরা যাক, রাম পেয়েছেন ৪৫,০০০, শ্যাম পেয়েছেন ৩৫,০০০, যদু পেয়েছেন ১১,০০০ এবং মধু পেয়েছেন ৯,০০০ মূলোর ভোট। তাহলে দেখা যাচ্ছে, কোনো প্রার্থী কোটা পাননি। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির নির্বাচনের নিয়ম অনুযায়ী সবচেয়ে কম প্রথম পছন্দের ভোট যিনি পেয়েছেন অর্থাৎ মধুকে বাদ দিতে হবে এবং মধুর প্রাপ্ত ৯০০০ ভোটকে দ্বিতীয় পছন্দ অনুযায়ী রাম, শ্যাম ও যদুর কাছে হস্তান্তর করতে হবে। ধরা যাক, ৯০০০ ভোটের মধ্যে রাম পেয়েছেন ৫.০১০ দ্বিতীয় পছন্দের ভোট, শ্যাম পেয়েছেন ২,০০০ দ্বিতীয় পছন্দের ভোট এবং যদু পেয়েছেন ১,৯৯০ দ্বিতীয় পছন্দের ভোট। এর ফলে রাম-এর প্রথম ও দ্বিতীয় পছন্দের ভোটের যোগফল দাঁড়াচ্ছে ৫০,০১০, শ্যাম-এর প্রথম ও দ্বিতীয় পছন্দের ভোটের যোগফল দাঁড়াচ্ছে ৩৭,০০০ এবং যদুর প্রথম ও দ্বিতীয় পছন্দের ডোটের যোগফল দাঁড়াচ্ছে ১২,৯৯০। সুতরাং, রাম কোটা সংখ্যক ভোট পাওয়ায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীরূপে ঘোষিত হবেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, চতুর্দশ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে (২০১৭) শ্রী রামনাথ কোবিন্দ ৭,০২,০৪৪ মূল্যের প্রথম পছন্দের ভোট পেয়ে তাঁর নিকটতম প্রার্থী মীরা কুমারকে ৩,৬৭,৩১৪ ভোটে পরাজিত করে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হন।