প্রাককথন
সাহিত্য সমাজের দর্পণ। এই নিরিখে কথা সাহিত্যিক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ‘ভারতবর্ষ’ গল্পটিকে বিচার করলে দেখা যায়, লেখক অত্যন্ত সচেতন ভাবে তার সমাজবোধকে গল্পে প্রয়োগ করেছেন। তার এই সচেতন সমাজবোধ দুটি মূল স্রোতে প্রবাহিত হতে দেখা যায়।
ব্যক্তি প্রকৃতি ও সমাজ
লেখক তার এই গল্পে পটভূমি হিসেবে বেছে নিয়েছে রাঢ়বঙ্গের নিম্নবর্গীয় গ্রাম জীবনকে। যেখানে ব্যক্তির প্রকৃতি ও সমাজের দ্বন্দ্ব সমন্বয়ের চিত্রটি গভীরভাবে প্রতীয়মান। ব্যক্তি ও সমাজের মাঝে লেখক সচেতনভাবে প্রকৃতিকে এনে রাঢ়বাংলার দুর্যোগের অনুপঙ্খ চিত্র সংযোজিত করেছেন। গ্রাম্য মানুষজন চাষবাদের উপর নির্ভরশীল, যাক প্রকৃতির সঙ্গে গভীরভাবে সংযুক্ত। বীরু প্রকৃতি গ্রাম্য চাষীদের মুখে আষাঢ়ের কালো মেঘ ঘনিয়ে তোলে আর অনুকূল প্রকৃতি এদের মুখে নবোদিত সূর্যের আলো ফেলে। এখানে ‘ফাঁপি’র ফাঁদে ক্ষিপ্ত চাষিরা- “সবাই চলে আর সে সভ্যতার ছোট উনুনের পাশে হাত-পা সেঁকে নিতে।” তাই এরা অনায়াসে মাঠের ধানের ক্ষতি কল্পনায় মুন্ডপাত করতে থাকলো আল্লা-ভগবানের। ক্ষিপ্ত কোন যুবক চাষি এজন্য চেঁচিয়ে বলে-‘মাথার ওপর আর কোন শালা নেই রে, কেউ নাই।’
ধর্ম ও সমাজ
লেখক গল্পে এনেছে সমাজের গভীরে লুকিয়ে থাকা মেকি ধর্মবোধের প্রাসঙ্গিটি, মানসিক সংকীর্ণতা রূপে যার আত্মপ্রকাশ। এ সমাজ তথাকথিত অর্থে সভ্য। কিন্তু ধর্মন্ধতা, সংকীর্ণ সম্প্রদায়িকতা বোধ এবং ধর্মগত অহমিকাকে এ সমাজ আজও কাটিয়ে উঠতে পারেনি। অসহায় এক বৃদ্ধাকে জীবিতাবস্থায় এরা দেখেও দেখেনা। কিন্তু তাকে মৃত ভেবে, তার দেহে নিয়ে শকুনের মত টানাটানি করে, বাঁচাতে সাহায্য না করে, মরা ভেবে কাজিয়া করে। এ গল্পের সমাজের এই কালো দিকটিকে লেখক আলোকিত করতে চেয়েছেন।
দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা সমস্ত অধ্যায় অনুযায়ী তার সব প্রশ্নের উত্তর