বিশ্বায়নের বৈশিষ্ট্যাবলি
বিশ্বায়নের কতকগুলি অপরিহার্য ও মৌলিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এই বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-
[1] বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে সংহতিসাধন: বিশ্বায়ন বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে নিবিড় সংহতি গড়ে তুলতে চায়। আধুনিক বিশ্বে কোনো রাষ্ট্রের পক্ষে একাকী বিচ্ছিন্নভাবে টিকে থাকা সম্ভব নয়। বিশ্বায়ন এই বাস্তবতাকে তুলে ধরে রাষ্ট্রগুলির মধ্যে একটি অভিন্ন যোগসূত্র গড়ে তুলতে চায়।
[2] পারস্পরিক নির্ভরশীলতা: বিশ্বায়ন অত্যন্ত সচেতনভাবে সমগ্র বিশ্বে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ নির্বিশেষে বিভিন্ন দেশের মধ্যে একটি পারস্পরিক নির্ভরশীলতার পরিবেশ গড়ে তোলার পক্ষপাতী। নোয়াম চমস্কির মতে, বিশ্বায়নের উদ্দেশ্য হল বিশ্বের সমস্ত রাষ্ট্রের মধ্যে সক্রিয় সহযোগিতা স্থাপন
করে পারস্পরিক নির্ভরশীলতাকে দৃঢ়তর করে তোলা।
[3] বহুজাতিক সংস্থার আধিপত্য প্রতিষ্ঠা: বিশ্বায়নের একটি অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হল, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বহুজাতিক সংস্থা বা কর্পোরেট দুনিয়ার আধিপত্য প্রতিষ্ঠাকে সুনিশ্চিত করা। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের লেখকরা মনে করেন, বর্তমান বিশ্বে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের পাশাপাশি কর্পোরেট সংস্থাগুলির ভূমিকাও প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।
[4] পুঁজি ও প্রযুক্তির অবাধ চলাচল: বিশ্বায়নের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হিসেবে আধুনিক বিশ্বে পুঁজি ও প্রযুক্তির অবাধ চলাচলের প্রসঙ্গ তুলে ধরা হয়। বিশ্বায়নের যুগে পুঁজি, প্রযুক্তি ও কারিগরি কৃৎকৌশল কোনো একষ্টি দেশের ভৌগোলিক সীমার মধ্যে সীমায়িত হয়ে থাকেনি। বিশ্ববাণিজ্যের অবাধ গতি এই বিষয়টিকে আরও সহজ করে তুলেছে।
[5] মুক্ত বাজার অর্থনীতির প্রতিষ্ঠা: বিশ্বায়নের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হল মুক্ত বাজার অর্থনীতি। বিশ্বায়ন সারা বিশ্বের বাজারকে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত রাখতে চায়। বিশ্বায়ন মনে করে যে, বাণিজ্য ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ সম্পূর্ণরূপে অবাঞ্ছিত।
[6] রাষ্ট্রের সাবেকি সার্বভৌমত্বের পরিবর্তন: রাষ্ট্রের সাবেকি সার্বভৌম ক্ষমতার পরিবর্তনকে বিশ্বায়নের অন্যতম বৈশিষ্ট্য বলে মনে করা হয়। বাহ্যিক ক্ষেত্রে একটি রাষ্ট্রের যে অসীম বা চরম ক্ষমতা রয়েছে সাবেকি সার্বভৌমিকতায় মনে করা হয়, বিশ্বায়ন তাকে অস্বীকার করে। বিশ্বায়নের। যুগে বাহ্যিক ক্ষেত্রে কোনো রাষ্ট্রই অসীম ক্ষমতার অধিকারী নয়। পারস্পরিক নির্ভরশীলতার আধুনিক বিশ্বে নয়া বিশ্বব্যবস্থার সদস্য হিসেবে ছোটো বড়ো সব রাষ্ট্রকেই বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার (WTO) মতো গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার নীতি নির্দেশ মেনে চলতে হয়। এই বাধ্যবাধকতা বিশ্বায়নের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য।
[7] তথ্যপ্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নতি: বিশ্বায়নের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল তথ্য প্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নতি। বিশ্বায়নের যুগে ইনটারনেট-সহ তথ্য। প্রযুক্তির অবাধ বিচরণে জাতি-রাষ্ট্রের নিয়মকানুন কোনো অন্তরায় সৃষ্টি করতে পারে না। অনেকে মনে করেন তথ্যপ্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নতি ঘটিয়ে ইনটারনেট বিপ্লবের মাধ্যমে জাতি-রাষ্ট্রের সীমারেখাকে নিশ্চিহ্ন করে বিশ্বায়ন এক জাতি এক বিশ্বের এক নয়া বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাইছে।