বিদ্যালয় ও সমাজের সম্পর্ক
বিদ্যালয় এবং সমাজের মধ্যে একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। বিদ্যালয়ের মাধ্যমেই সমাজ তার নবাগত সভ্যদের সামাজিক করে তােলে। বিখ্যাত দার্শনিক জন ডিউই বলেছেন-“School is simplified, purified and better balanced society”, অর্থাৎ বিদ্যালয় হল একটি সরল, মার্জিত ও সুষম সমাজ।
বিদ্যালয়ের ওপর সমাজের নির্ভরতা
বিদ্যালয়ের ওপর সমাজ বিভিন্নভাবে নির্ভর করে। যেমন一
(১) সমাজসংরক্ষণ: প্রত্যেকটি দেশের সমাজ তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য বিদ্যালয়ের ওপর নির্ভর করে কারণ বিদ্যালয়গুলি সমাজের প্রয়ােজনের দিকে তাকিয়ে বিভিন্ন ধরনের পাঠক্রম রচনা করে। সেই পাঠক্রমে স্থান পায় সমাজের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা। শিক্ষার্থীরা যখন বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে, তখন সমাজের সেইসব বিষয় সম্পর্কে তারা জ্ঞানলাভ করে এইভাবে বিদ্যালয় সমাজের বিভিন্ন বিষয় সংরক্ষণ, পরিবর্তন ও পরিমার্জনের পর তাকে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে সঞ্চালিত করে।
(২) সমাজসংস্কার: বর্তমানে বিদ্যালয় সমাজসংস্কারের কাজে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। বিদ্যালয় আধুনিক বিজ্ঞানপ্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে, অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারগুলিকে সংশােধন করে শিক্ষার্থী তথা জনগণের কাছে তুলে ধরে। অপ্রয়ােজনীয় বিষয়গুলিকে বাদ দিয়ে আগামী দিনের জন্য প্রয়ােজনীয় কৃষ্টি ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যপূর্ণ বিষয়গুলিকে সংরক্ষণ করে।
(৩) সামাজিক সমস্যার সমাধান: জটিল সামাজিক পরিবেশের পরস্পরবিরােধী চিত্র ও চরিত্র মানুষের মনে বিভিন্ন প্রভাব বিস্তার করে। অনেক সময় সমাজজীবনে নানান সমস্যা এসে হাজির হয়। গুরুতর সমস্যা থেকে সমাজকে বাঁচাতে হলে দরকার জনগণকে সে সম্বন্ধে সচেতন করা। এই কাজে সবচেয়ে উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান হল বিদ্যালয়।
(৪) আর্থসামাজিক উন্নয়ন: শিক্ষার্থীদের একটা বড়াে অংশ বিদ্যালয়ের পাঠ সমাপ্ত করে বৃত্তি জগতে প্রবেশ করে। শিক্ষাপ্রাপ্ত ব্যক্তি একদিকে যেমন অধিক উপার্জন করে, তেমন উৎপাদনে উৎকর্ষ নিয়ে এসে সমাজের আর্থিক উন্নয়নে সাহায্য করে। অর্থাৎ বিদ্যালয় আর্থসামাজিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
সমাজের ওপর বিদ্যালয়ের নির্ভরতা
সমাজের ওপর বিদ্যালয়ও নানাভাবে নির্ভর করে থাকে। যেমন一
(১) কর্মসূচি নির্ধারণ: বিদ্যালয় যেহেতু সমাজের প্রয়ােজনে সৃষ্ট হয়েছে, তাই বিদ্যালয়কে সমাজের ওপর নির্ভর করতে হয়। বিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলির মধ্যে একটি হল সমাজ সংরক্ষণ করা। তাই সমাজের সকল প্রয়ােজনীয়তা ও চাহিদার প্রতি দৃষ্টি রেখেই বিদ্যালয়ের পাঠক্রম নির্ধারিত হয়।
(২) পরিবর্তনশীল সমাজ: সমাজ পরিবর্তনশীল। পরিবর্তনশীল সমাজের চাহিদা, আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করার জন্য বিদ্যালয়ের সমস্ত ধরনের কার্যাবলির পুনর্বিন্যাসের সুযােগ থাকা প্রয়ােজন।
ওপরের আলােচনা থেকে বােঝা যায়, বিদ্যালয়কে সবসময় সমাজের সঙ্গে সংগতি রেখে চলতে হয়। সমাজ এবং বিদ্যালয় একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। তাই এই দুইয়ের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক ও সাম্য বজায় রাখা অত্যন্ত প্রয়ােজন।