বাড়ির মালিকদের অবশ্য বিলাপ করার কোনােই কারণ ছিল না | এলিসেন্দা একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললে

মাকড়সা হয়ে যাওয়া মেয়েটি থুরথুরে ডানাওয়ালা বুড়ােকে কতটা প্রভাবিত করেছিল আলােচনা করাে

মার্কেজের বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়াে গল্পে মাকড়সায় রূপান্তরিত হওয়া মেয়েটির পেলাইও- এলিসেন্দার বাড়িতে থাকা ডানাওয়ালা বুড়াের সঙ্গে কোনাে সাক্ষাৎ না ঘটলেও তার জীবন এবং পরিপার্শ্বকে প্রভাবিত করতে সে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। বাবা-মার অনুমতি না নিয়ে নাচের আসরে গিয়ে এবং সেখানে সারারাত নেচে ফেরার সময়ে প্রচণ্ড বজ্রপাতের মধ্যে নেমে আসা জ্বলন্ত গন্ধকের মতাে এক বিদ্যুৎ শেখা মেয়েটিকে মাকড়সা রূপান্তরিত করে। মেয়েটির নিজের মুখ থেকে শােনা এই কাহিনির হৃদয় বিদারক’ তাৎপর্য, আর ভয়ংকর শিক্ষা মানুষদের প্রভাবিত করে। থুরথুরে ডানাওয়ালা বুড়ােকে দেবদূত হিসেবে চিহ্নিত করে যেসব অসম্ভব এবং অলৌকিক ঘটনাকে তার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছিল— সেগুলাে এরপর কৌতুকের বিষয় হয়। এক অন্ধ আতুরের তিনটি নতুন দাঁত গজিয়েছিল, একজন পঙ্গু ব্যক্তি হেঁটে হেঁটে গিরিলম্বন করতে না পারলেও প্রায় একটা লটারি জিতে যাচ্ছিল, কিংবা এক কুষ্ঠরােগীর ঘা থেকে গজিয়ে উঠেছে সূর্যমুখী ফুল ইত্যাদি নানা কাহিনি কোনাে অলৌকিক তাৎপর্য আনার বদলে কৌতুকের খােরাক হয়। স্বাভাবিকভাবেই কৌতূহলী জনতার ভিড় ডানাওয়ালা বুড়ােকে ছেড়ে মাকড়সারূপী মেয়েটিতে কেন্দ্রীভূত হয়। পেলাইওদের উঠোন সম্পূর্ণ ফাঁকা হয়ে যায়- থুরথুরে বুড়াে আসার আগে যেমন ছিল, ঠিক তেমন।

“বাড়ির মালিকদের অবশ্য বিলাপ করার কোনােই কারণ ছিল না।” -এই বিলাপ করার কারণ ছিল না কেন?

মার্কেজের ‘বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়াে’ গল্পে মাকড়সায় রূপান্তরিত হওয়া মেয়েটি একটি ভ্রাম্যমাণ প্রদর্শনীর সূত্রে শহরে আসার পরে ডানাওয়ালা থুরথুরে বুড়ােটিকে নিয়ে মানুষের কৌতূহল কমে যায়। ফলে, পেলাইও- এলিসেন্দাদের উঠোনে তাকে দর্শনি দিয়ে দেখার জন্য মানুষের যে সারি দিগন্ত ছুঁয়েছিল, তা সম্পূর্ণ ফাঁকা হয়ে যায়।

পেলাইও এবং এলিসেন্দা অবশ্য এতে একটুও চিন্তিত অথবা দুঃখিত হয়নি, কারণ ইতিমধ্যে যে প্রভূত অর্থ তারা থুরথুরে ডানাওয়ালা বুড়ােকে দেখিয়ে উপার্জন করেছিল, তা দিয়ে তারা উঁচু তারের জাল দিয়ে ঘেরা অলিন্দ আর বাগান সমৃদ্ধ একটি চকমেলানাে দোতলা বাড়ি বানিয়ে ফেলেছিল। পেলাইও তার সাধ্যপালের কাজে ইস্তফা দিয়ে খরগােশ পালনের ক্ষেত্র বানিয়ে নিয়েছিল শহরের কাছেই। এলিসেন্দা একটা উঁচু খুরওয়ালা জুতাে আর রামধনু রঙের রেশমের বাহারি পােশাক বানিয়ে নিয়েছিল— যা তখনকার দিনে কেবল অভিজাত ও কাঙ্ক্ষিত মহিলারাই প্রতি রবিবারে পরত। খুব স্বাভাবিকভাবেই হাতে প্রচুর অর্থ আসায় ডানাওয়ালা থুরথুরে বুড়াে ক্রমে তাদের মনােযােগ হারিয়ে হয়েছিল অবাঞ্ছিত উপদ্রবের মতাে। আর সে কারণেই খাঁচার ভিড় কমে যাওয়াতেও তারা কোনাে বিলাপ করেনি।

মানুষের কৌতূহল কমে যাওয়ার পরে ডানাওয়ালা থুরথুরে বুড়ােকে যেভাবে গল্পে পাওয়া যায় তা আলােচনা করাে

গাবরিয়েল মার্কেজের লেখা ‘বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়াে’ গল্পে অদ্ভুত দর্শন বুড়ােটিকে কেন্দ্র করে মানুষের যে বিপুল কৌতূহল এবং অলৌকিকতার আখ্যান রচিত হয়েছিল, তাতে ভাটা পড়ে একটি ভ্রাম্যমাণ প্রদর্শনীর সূত্রে মাকড়সায় রূপান্তরিত হওয়া মেয়েটির শহরে আগমনের ফলে। একসময় তার খাঁচার তারগুলােও অবহেলায়, অযত্নে ছিড়ে যায়। পেলাইও- এলিসেন্দার বাচ্চাটি যখন স্কুলে যাওয়া শুরু করে, তখন অবহেলিত ডানাওয়ালা বুড়াের খাঁচা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। ‘পথহারা দিকভােলা কোনাে মুমূর্ষুর মতো’ এরপর সেই ডানাওয়ালা বৃদ্ধ লােকটি এদিকে ওদিকে ঘুরে বেড়ায়। এলিসেন্দারা তাকে ঝাঁটা মেরে শােওয়ার ঘর থেকে বের করে দেয়। এদিকে সেই ‘দেবদূত’-এর খাওয়ার ক্ষমতা কমে যায়, তার দৃষ্টিশক্তিও খুবই কমে আসে। রােজ রাত্রে তার জ্বর আসতে থাকে। তার ডানা দুটির অবস্থাও খুবই সঙ্গিন হয়ে পড়ে। কিছুটা করুণাভরে এলিসেন্দা বুড়াে লােকটিকে একটি আটচালার নীচে শুতে দেয় আর তার দিকে ছুঁড়ে দেয় একটি কম্বল। বৃদ্ধ লােকটি জ্বরের ঘােরে নরওয়েবাসীর জিভ-জড়ানাে ভাষায় প্রলাপ বকে। ডিসেম্বরের প্রথম রােদুরে ভরা দিনগুলােতে আশ্চর্যজনকভাবে বুড়াের ডানায় নতুন পালক গজিয়ে উঠতে থাকে এবং একদিন সে উড়তেও সক্ষম হয়।

“এলিসেন্দা একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললে-” এলিসেন্দা কী দেখেছিল? এলিসেন্দা কেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিল? সে কেমনভাবে উড়ে যাচ্ছিল? এলিসেন্দা কেন তাকিয়ে তাকে দেখতে থাকে?

গাবরিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ-এর লেখা ‘বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়াে’ গল্পে এলিসেন্দা দেখেছিল যে, ডানাওয়ালা বুড়াে ডানা মেলে শেষ বাড়িগুলাের ওপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে।

এলিসেন্দা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিল, তার কারণ ডানাওয়ালা বুড়াে যেভাবে ক্রমশ উপদ্রব হয়ে উঠছিল তার জীবনে, তা থেকে তার মুক্তি ঘটল। অন্যদিকে ডানাওয়ালা বুড়ােরও অবাঞ্ছিত জীবন থেকে মুক্তি ঘটল।

সে উড়ে যাচ্ছিল কোনাে মতিচ্ছন্ন জরাগ্রস্ত শকুনের ঝুঁকিতে ভরা ডানাঝাপটানি-সহ।

এলিসেন্দা তাকিয়ে দেখতে থাকে, কারণ এর আগে সে ডানাওয়ালা বুড়ােকে দেখেছিল জরাগ্রস্ত অবস্থায়। কোনাে বিষয়েই প্রায় তার কোনাে উৎসাহ ছিল না। এই অবস্থায় যখন সে প্রথমে ডানা ছড়িয়ে উড়বার চেষ্টা করে, অগােছালাে এবং অনভ্যস্ত সেই চেষ্টায় নখ মাটিতে পুঁতে দেয়, তারপর ডানা ছড়িয়ে উড়ে যায়—তা দৃষ্টি আকর্ষণ করে নেয় এলিসেন্দার।

বাংলা সব প্রশ্ন উত্তর (একাদশ শ্রেণি)

Leave a Comment