প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্যসমূহ

আমরা আজকের এই লেখার মাধ্যমে দুটি প্রশ্নের উত্তর আলোচনা করলাম। যথা প্রশ্ন ১ – প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য। প্রশ্ন ২ – প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার পাঠক্রম

শিশু জন্মের পর থেকে যা কিছু শিক্ষা করত পরিবারের অনিয়ন্ত্রিত পরিবেশ থেকেই তাকেই গতানুগতিক অর্থে বলা হয় প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা।

বর্তমান সমাজ পরিস্থিতিতে মানুষের অর্থ সামাজিক অবস্থার অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। তাই প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের পূর্বে আর শিক্ষাকে অনিয়ন্তিত না রেখে সুপরিকল্পিতভাবে পরিচালনার প্রয়োজনীয়তা অনুভূতি হয়েছে।

প্রশ্ন ১ – প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য

সেই পরিপেক্ষিতে কোঠারি কমিশন (১৯৬৪ থেকে ১৯৬৬) আধুনিক যুগের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রাথমিক শিক্ষাকে নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ অপরিহার্য অঙ্গ হিসেবে বিবেচনা করেছেন।

প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার সংজ্ঞা

২ -৫/ ৬ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুরা যে শিক্ষা লাভ করে থাকে তাকে প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা বলে। অর্থাৎ, দুই থেকে ছয় বছর বয়সের শিশুদের নির্দিষ্ট কতগুলি উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ বিশেষ ধরনের প্রতিষ্ঠানে যে শিক্ষা ব্যবস্থা করা হয়, তাই হল প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা।

প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য

এই শিক্ষা হলো এমন একটি স্তর যেখানে শিশুকে প্রথাগত প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপযুক্ত করে গড়ে তোলার ব্যবস্থা করা হয়।

শৈশবের শিশুর মধ্যে যে সকল চাহিদা দেখা যায় সেই সকল চাহিদার উপর ভিত্তি করেই কমিশন প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য বিষয়গুলি সিদ্ধান্ত করেছেন। এই শিক্ষার বিভিন্ন উদ্দেশ্য গুলি হল –

সু অভ্যাস গঠন:

এই শিক্ষার অন্যতম একটি উদ্দেশ্য হল শিশু মধ্যে সু অভ্যাস গঠন করা। শৈশবকাল থেকেই শিশু মধ্যে কতগুলো সু-অভ্যাস গঠন করতে পারলে পরবর্তীকালে তা চরিত্র গঠনের অনেককে সাহায্য করবে।

সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি গঠন:

এই শিক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হল সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি গঠন। সমাজে সুস্থ স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকতে হলে শিশুর মধ্যে যথাযথভাবে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি গঠন প্রয়োজন।

এই শিক্ষা শিশুর মধ্যে সহযোগিতা, সহমর্মিতা, সহানুভূতি প্রভৃতি গুণ গুলির বিকাশ ঘটিয়ে থাকে, যা শিশু মধ্যে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি বিকাশ ঘটায়।

সৌন্দর্যবোধের বিকাশ:

এই শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য হল – শিশু মধ্যে সৌন্দর্যবোধের বিকাশ ঘটানো। প্রকৃতির রূপ, রস, উপলব্ধির মাধ্যমে শিশুদের মধ্যে সৌন্দর্য বোধের বিকাশ ঘটে। এই ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিশুদের সৌন্দর্যবোধের বিকাশে প্রশিক্ষণ দেয় বা বিকাশ ঘটায়।

এই ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গুলি শিশুদের সৌন্দর্যবোধ বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা, অলোপ করে থাকে।

মানসিক বিকাশ:

এই শিক্ষার মাধ্যমিক শিশুদের মধ্যে মানসিক বিকাশ ঘটে। , নানা ধরনের ছড়া, গান, কবিতা বলা, গল্প শোনা, ছবি আঁকা ইত্যাদির বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

কৌতূহলের বিকাশ:

শিশুরা এই বয়সে প্রচুর কৌতুহলপ্রবণ হয়। তারা নানা বিষয়ে প্রশ্ন করে এবং নতুন নতুন বিষয় জানতে চায়। প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা শিশুর মধ্যে কৌতূহলের বিকাশ ঘটে সাহায্য করে। তাই এটি প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য।

সৃজনশীলতার বিকাশ:

এই প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটানো। ছবি আঁকা, নাচ, গান, মাটির কাজ ইত্যাদির মাধ্যমে শিশু মধ্যে শিশু সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটানো সম্ভব হয়।

সুস্বাস্থ্য গঠন ও দৈহিক সমর্থের বিকাশ:

শিশুর সুস্বাস্থ্য গঠন ও দৈহিক বিকাশের সহায়তা করা প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য। এই স্তরের শিক্ষায় শিশুদের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্য, নিয়মিত ডাক্তারি পরীক্ষা, বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধের টিকা দান প্রকৃতির ব্যবস্থা এই প্রতিষ্ঠান করে থাকেন।

শুধু তাই নয় এর বাইরেও খেলাধুলা ও সক্রিয়তা ভিত্তিক কার্যাবলীর মাধ্যমে শিশুর দৈহিক অঙ্গ-পতঙ্গ গুলির সঠিক বিকাশের সহায়তা করা যায়।

ভাষার বিকাশ:

শৈশবকালে শিশুর মধ্যে যে সকল মানসিক বিকাশ ঘটে সেগুলোর মধ্যে ভাষার বিকাশ গুরুত্বপূর্ণ। এই স্তরের শিক্ষার উদ্দেশ্য হল শিশুকে শব্দের নির্ভুল উচ্চারণ এবং শব্দের ও ভাষার সঠিক ব্যবহারের সহায়তা করা, কারণ এই বয়সে শিশু বিভিন্ন নতুন নতুন শব্দ ব্যবহার এবং বাক্য গঠন করতে শেখে।

শৃঙ্খলা বোধের বিকাশ:

শৈশবে শিশুর আচরণ থেকে সংযত ও বিশৃঙ্খল । শিশুদের অসংযত ও বিশৃঙ্খল আচরণকে সংযত ও বিশৃংখল আচরণকে সংযত ও সুশৃংখল করে গড়ে তোলা প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য।

আত্মবিশ্বাস গঠন:

প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো শিশুর মধ্যে আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলা। শিশু মধ্যে আত্মবিশ্বাস গঠনের জন্য তাকে স্বাধীনভাবে নিজের প্রচেষ্টায় কোন কাজ করতে দিতে হবে।

তাই মন্তেসরি শিক্ষা পদ্ধতিতে শিশুর আত্মসত্তা ও আত্ম প্রচেষ্টার উপর যথেষ্ট গুরুত্ব অলোপ করেছেন। এর মাধ্যমে শিশু ভবিষ্যতে স্বনির্ভরশীল হয়ে গড়ে উঠতে পারবে।

সুতরাং শিশুর জন্মগত সমর্থের ভিত্তিতে তাকে বিভিন্ন পরিবেশের উপযোগী সর্বাঙ্গীণ ও বিকাশের সহায়তা করা প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা উদ্দেশ্য।

প্রশ্ন ২ – প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার পাঠক্রম

শিশুর সর্বাধিক বিকাশের দিকে লক্ষ্য রেখে কমিশন বিশেষ কতগুলি সাধারণ জ্ঞান ও সক্রিয়তা ভিত্তিক কার্যকরীকেই এই স্তরের পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলেছেন। বর্তমানে প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের পাঠক্রম সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো –

দৈহিক বিকাশমূলক কার্যাবলী

গ্রুপ কলেজ শিশুর দৈহিক বিকাশের গুরুত্ব খুবই প্রয়োজন। তাই প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের পাঠক্রমে শিশুর দৈহিক শিক্ষার কার্যাবলী ওপর বেশি করে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

এই স্তরের পাঠক্রম রয়েছে বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা, নিয়মিত ব্যায়াম, ছড়া, গান ও নাচ প্রভৃতি। এই সমস্ত কার্যকরির মাধ্যমে শিশুর দৈহিক সামর্থের বিকাশ ঘটে।

শারীরিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কার্যাবলী

শিশুকে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী করে গড়ে তোলার জন্য স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন কাজ এই স্তরের পাঠক্রমে অন্তত করা হয়েছে। যেমন- শিশুদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জ্ঞান দান, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার শিক্ষা প্রকৃতি পাঠক্রমের স্থান দেওয়া হয়।

ইন্দ্রিয় পরিমার্জনামূলক কার্য

এই স্তরের শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হলো ইন্দ্রিয় পরিমার্জনা। তাই বিভিন্ন ইন্দ্রিয় পরিমার্জনামূলক কাজ, যেমন – মাটি দিয়ে কোন জিনিস তৈরি, ছবি আঁকা, ছবি সংগ্রহ ইত্যাদি এই স্তরের পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত। এই কার্যোবলিক শিশুর সক্রিয়তা বিকাশ ঘটাতে সহায়তা করে

ভাষা বোধের বিকাশ

শিশুর ভাসাবাদের দিকে লক্ষ্য রেখে পাঠক্রম বিভিন্ন ভাষাকে স্থান দেয়া হয়েছে। ভাষা শিশুর ভাব প্রকাশের মাধ্যম। তাই প্রাথমিকভাবে অক্ষর পরিচিতি, পড়া, লেখা, ছড়া পাঠ, গল্প বলা প্রভৃতি কার্যাবলী কে প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ

এই বয়সের শিশুদের মধ্যে বৈজ্ঞানিক ও বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গি জাগ্রত করার জন্য পশু, পাখি, নদী, পাহাড়, পর্বত, বিভিন্ন প্রাকৃতিক ঘটনা, গাছপালা ইত্যাদি পর্যবেক্ষণে আগ্রহ সৃষ্টি করা হয়।

সাধারণ গণিত

সাধারণ গণিতিক ধারণা বিকাশের জন্য প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার পাঠক্রমে বিভিন্ন জিনিস গণনা করা, সংখ্যা পরিচিতি, সাধারণ যোগ বিয়োগ প্রভৃতি গণিতের প্রাথমিক বিষয়গুলিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

সামাজিক বোধের বিকাশ

এই বয়স তরে শিশুর সামাজিক বোধের বিকাশের দিকে লক্ষ্য রেখে বিভিন্ন সামাজিক অভিজ্ঞতামূলক কার্যাবলী প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যেমন দলবদ্ধভাবে গান, নাচ, আবৃতি, অভিনয় বিভিন্ন শিশুদের জন্মদিন পালন করা ইত্যাদি বিষয়কের পাঠক্রমে স্থান দেওয়া হয়েছে।

সৌন্দর্যবোধের বিকাশ

প্রাক প্রাথমিক শিক্ষায় শিশুদের মধ্যে সৌন্দর্যবোধের বিকাশের জন্য চারুকলা কাগজের ফুল তৈরি, ছবি আঁকা, গান প্রভৃতি বিষয়কের পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

কোঠারি কমিশনের সুপারিশকে গুরুত্ব দিয়ে বর্তমানে প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে পাঠক্রসিত হয়েছে। তাই পাঠক্রমের মধ্যে শিক্ষার্থীদের সার্বিক বিকাশের সকল বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যা শিশুর ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটে একজন সুনাগরী হিসেবে গড়ে তুলবে।

দ্বাদশ শ্রেণী শিক্ষাবিজ্ঞানের (education) সব প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment