বর্তমানে বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ও প্রযুক্তির উন্নতি মানুষের জীবনযাপনের প্রতিক্রিয়াকে জটিল করে তুলেছে। এই জটিল জীবন পরিস্থিতিতে টিকে থাকতে হলে প্রতিটি ব্যক্তিকে প্রতিমুহূর্তে নতুন নতুন সমস্যার সুন্দর ও সঠিক সমাধান খুঁজে বের করতেই হবে।
কিছু যাতে জীবন পরিবেশ থেকে জন্ম নতুন নতুন সমস্যাগুলি স্বাধীনভাবে সমাধানে সচেষ্ট হয়, তার উপযোগী মনোভাব গড়ে তোলেই হবে শিক্ষার একটি প্রধান উদ্দেশ্য।
এই উদ্দেশ্যকে সার্থক করতে হলে বিদ্যালয়ে মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে, তাই আধুনিক শিক্ষা মনোবিদ্যায় সমস্যা সমাধান একটি গুরুত্বপূর্ণ শিখন এর কৌশল হল থনডাইকের প্রচেষ্টা ও ফুলের তত্ত্ব।
বিখ্যাত আমেরিকার মনোবিদ ই. এল. থনডাইক ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে animal intelligence নমক এই বইটিতে শিখন সম্পর্কিত বিভিন্ন চিন্তাধারা প্রকাশ করা হয়।
তিনি বিভিন্ন প্রাণীর শিক্ষাকালীন আচরণ বিশ্লেষণ করে শিখনের সরলতম কৌশল আবিষ্কারের চেষ্টা করেন। তাই তার মতে শিখন এর সরলতম ক্ষেত্র হলো একটি উদ্দীপকের সঙ্গে একটি প্রতিক্রিয়া সংযোগ।
অর্থাৎ, উদ্দীপক ও প্রতিক্রিয়ার মধ্যে নির্ভুল সংযোগ মাধ্যমে আচরন ধারার নিয়ন্ত্রণ করাই হলো শিক্ষা। তার মতে উদ্দীপক এবং প্রতিক্রিয়ার মধ্যে নির্ভুল সংযোগ ঘটলে শিখন সম্পন্ন হয়।
একটি উদ্দীপকের সঙ্গে একটি প্রতীকে সম্পর্ক হল যখন উদ্দীপক প্রাণীর সামনে আসবে তখনই প্রাণী একইভাবে প্রতীক্ষা করবে। তাই এই তথ্য কে সংযোজনবাদ তত্ত্ব বলা হয়।
শারীরিক ব্যাখ্যা
থনডাইক তার তত্ত্বে উদ্দীপক ও প্রতিক্রিয়ার বন্ধন কে শারীরবৃত্তীয় তত্ত্বের দ্বারা ব্যাখ্যা করেছেন। তার মতে এই বন্ধন ঘটে, সায়ুর মাধ্যমে উত্তেজনা আসা যাওয়ার পথে স্বাভাবিক রোগ শক্তি কমে যাওয়ার ফলেই।
থনডাইকের বিভিন্ন শ্রেণীর প্রাণীর উপর পরীক্ষা করে তার মতবাদ প্রচার করেন।
পরীক্ষা
থনডাইক মাছ ,মুরগি, বেড়াল, কুকুর প্রভৃতি প্রাণীর উপর পরীক্ষা করেন।
পরীক্ষার জন্য প্রাণী ও প্রয়োজনে উপকরণ
থনডাইক তার পরীক্ষা করার জন্য একটি ক্ষুধার্ত বেড়াল ও প্রয়োজনীয় উপকরণ হলো পাঁজল বক্স, খাদ্য ও অন্যান্য উপকরণ।
পাজল বক্সের বর্ণনা :- পাজল বক্সের যান্ত্রিক কৌশল হল এই বক্স থেকে বেরিয়ে আসার একটি মাত্র পথ আছে। বক্সটির দরজা খোলার জন্য একটি বোতাম বা দড়ি রয়েছে। বোতাম বা দড়িতে চাপ দিলে দরজা খুলে যায়।

পরীক্ষা পরিস্থিতি:- পরীক্ষা পরিস্থিতিতে ক্ষুধার্ত বিড়ালকে পাঁজর বক্সের মধ্যে ঢুকিয়ে দিলেন এবং বক্সের বাইরে কিছু খাদ্যবস্তু রাখলেন।
পর্যবেক্ষণ:- পরীক্ষা পরিস্থিতিতে পাঁজল বক্সের মধ্যে থেকে ক্ষুধার্ত বিড়ালটি বেরিয়ে আসার প্রতিক্রিয়া অনুসরণ করলেন।
প্রথম পর্যায়
প্রথম পর্যায়ে বক্সের মধ্যে বিড়ালটি বাইরে বেরিয়ে আসার জন্য এদিক-ওদিক দিয়ে চেষ্টা করতে লাগলো। কখনো বক্সের ফাঁকা দিয়ে, কখনো লাফ দিয়ে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করতে করতে একসময় হঠাৎ বোতামে চাপ পরে বা দড়িতে চাপ পরে এবং দরজাটি খুলে যায়। বিজয় টি প্রথমবার খাদ্যের কাছে পৌঁছাতে সফল হয়।
দ্বিতীয় পর্যায়
এই অবস্থায় দ্বিতীয় পর্যায়ে পুনরাবৃত্তিতে দেখা গেল বেড়ালটি আর বিক্ষিপ্তভাবে দৌড়াদৌড়ি করছে না। এ সময় উদ্দেশ্য মুখী হয়ে বেরিয়ে আসার জন্য পদগুলি খোঁজার চেষ্টা করছে। এখানে আরো লক্ষ করায় গেল যে, সে পূর্বে কিছু ভুল আচরণ গুলিকে ইচ্ছাকৃতভাবে পুনরাবৃত্তি করছে না। অর্থাৎ, দ্বিতীয়বারের পরীক্ষায় ভুল আচরণের সংখ্যা অনেক কমে গেছে।
থনডাইকে একই নিয়ে বারবার পরীক্ষাটি সংগঠিত করে লক্ষ্য করলেন যে বিড়ালটি ক্রমশ নিজের ভুল প্রচেষ্টা গুলি পরিত্যাগ করেছে এবং নির্ভুল অতিক্রাগুলিকে সমস্যা সমাধানের কৌশল হিসাবে ক্রমে ক্রমে আচরণের স্থায়ী অংশ হিসেবে গ্রহণ করেছে।
তৃতীয় পর্যায়
এই পরীক্ষামূলক পরিস্থিতিতে বিড়ালটির মধ্যে যে আচরণগত সাধারণ যে বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করেছেন তা হলো পাজল বক্স থেকে বিড়ালটি বেরিয়ে আসার জন্য আচরণ সম্পাদন করতে ক্রমশ সময়ের পরিমাণ কমে আসছিল।

অর্থাৎ, বিড়ালটির পুনরাবৃত্তির সংখ্যা যত বৃদ্ধি পেয়েছিল ততই সমস্যার সমাধানের জন্য কম সময় লাগছিল। থনডাইড বিড়ালটির পুনরাবৃত্তির সংখ্যার সঙ্গে সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় সময়ের সম্পর্ক দেখাতে একটি লেখচিত্র ব্যবহার করেন। এই লেখচিত্র কে বলা হয় সময় লেখচিত্র বা টাইম কার্ভে (time curve)
সিদ্ধান্ত
থনডাইকেট তার পরীক্ষার পর্যবেক্ষা থেকে যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন তাই তার শিখন সংক্রান্ত গবেষণার মূল ভিত্তি। তার সিদ্ধান্ত গুলি হল –
১ প্রাণী প্রত্যক্ষভাবে সমস্যার সমাধানের মাঝে।
২ এই শিখনের প্রাণী অপ্রয়োজনীয় প্রচেষ্টা গুলি ধীরে ধীরে বর্জন করে এবং সঠিক প্রচেষ্টা গুলি গ্রহণ করে। তা ঘটে থাকে যান্ত্রিক নিয়মে পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে।
৩ প্রাণী আত্মসত্যের মাধ্যমে শিখে থাকে।
এই তিন সিদ্ধান্তে ফল হিসেবে হন্ডাই তার প্রচেষ্টাও ভুলের তত্ত্বের আবর্তন করেন। কোন শিখন পরিস্থিতিতে প্রাণী আত্ম প্রচেষ্টায় নিজের ভুল প্রতিক্রিয়াগুলিকে বর্জন ও নির্ভুল প্রতীক্ষা গুলিকে আয়ত্তকরণের প্রচেষ্টায় তিনি নাম দিয়েছেন প্রচেষ্টায় কৌশল। এই কৌশলের মাধ্যমে যে শিখন হয় তাকে তিনি বলেছেন প্রচেষ্টা ও ভুলের শিখন।
দ্বাদশ শ্রেণী শিক্ষাবিজ্ঞানের (education) সব প্রশ্ন উত্তর
প্রাচীন অনুবর্তন বলছে আমরা কি বুঝি?
প্যাভলবের প্রাচীন অনুবর্তন পরিবর্তন কৌশল ও তার পরীক্ষা
প্রাচীন অনুবর্তনের শর্তাবলী, নীতি ও গুরুত্ব?
অপারেট অনুবর্তন কি ও তার স্কিনার বক্সের পরীক্ষা
শিক্ষা ক্ষেত্রে অপারেন্ট অনুবর্তন এর বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব এবং পার্থক্য
প্রচেষ্টা ও ভুলের পরীক্ষা শিখন কৌশল থনডাইকের ভূমিকা
প্রচেষ্টা ও ভুলের তত্ত্বের শিক্ষাগত বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব
গৌণ সূত্রাবলী কি এবং তাদের বৈশিষ্ট্য