পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলিতে রাশিয়ার নেতৃত্বে সাম্যবাদের বিস্তার সম্বন্ধে আলোচনা করো? অথবা, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আসিয়া কিভাবে পূর্ব ইউরোপের তার প্রাধান্য স্থাপন করেছিল?

ভূমিকা

বউ বছর ধরেই পূর্বে ইউরোপের দেশগুলি স্বাধীনতা অপেক্ষা কৃত শক্তিশালী রাষ্ট্রের দ্বারা বারংবার বিঘ্নিত হয়েছে। পরবর্তীকালে বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই সমস্ত শক্তিশালী দেশের মধ্যে রাশিয়া অন্যতম হলেও তার উদ্দেশ্য ছিল পূর্ব ইউরোপের পুঁজিবাদ বা সাম্রাজ্যবাদের পরিবর্তে সাম্যবাদের বিস্তার ঘটনা।

পূর্ব ইউরোপে সাম্যবাদের বিস্তার

« রুশো-জার্মান দ্বন্দ্বের মাধ্যমে

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর প্রতিটি জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রেই পূর্ব ইউরোপ বেশ কয়েকটি স্বাধীনতা রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা হয়। কিন্তু দিনের দশকে নাৎসি জার্মানি পূর্ব দিকে সাম্রাজ্য বিস্তারে নীতি গ্রহণ করলে ঐ সমস্ত রাজ্যে জার্মানির প্রধানত হয়। এভাবে জার্মানির মুখোমুখি দাঁড়ায় নিজে অস্তিত্ব রক্ষার প্রশ্নের রাশিয়া শঙ্কিত হয়ে ওঠে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানে রাশিয়া লাল ফৌজি সমগ্র পূর্ব ও মধ্য ইউরোপকে জার্মানির কবর মুক্ত করে ওইসব অঞ্চলে সোভিয়েতে নেতৃত্বাধীন সমাজতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করে।

« সোভিয়েত রাষ্ট্র জোট গঠনের দ্বারা

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, এস্তোনিয়া, প্রভৃতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকে রাশিয়া সরাসরি নিজের অঙ্গীভূত করে নেয়। এরপর পূর্ব ইউরোপের যুগোশ্লাভিয়া, চেকোশ্লোভাকিয়া, বুলগেরিয়া, আলবানিয়া, হাঙ্গেরি, রুমানিয়া, পোল্যান্ড ও পূর্ব জার্মানি এই আর টি দেশকে রাশিয়া কমিনফর্মের অন্তর্ভুক্ত করে। অবশ্য অল্প কাল পড়ে যুগোশ্লাভিয়া কমিনফর্ম থেকে বিতাড়িত হয়। এবার পূর্ব ইউরোপের বাকি দেশগুলিতে রাশিয়ার নেতৃত্বে সোভিয়েত সাম্যবাদ দৃঢ় ভিত্তিক প্রতিষ্ঠিত হয়।

« সোভিয়েতের উদ্দেশ্য

পূর্ব ইউরোপে দেশগুলোতে সোভিয়ে তথা রাশিয়া প্রধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সে সমস্ত উদ্দেশ্যে তা হল –

১. সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শের বিস্তার ঘটানো

সমস্ত বিজয়ী শক্তি পরাজিত শক্তি সমূহের উপর নিজেদের মতাদর্শ, অর্থনীতি, সমাজ ব্যবস্থা ইত্যাদি চাপিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেয়। তারপর বিশ্বের সর্বোচ্চ সাম্যবাদী ভাব ধারার বিস্তারের লক্ষ্যে ওই অঞ্চলের ওপর আসিয়ার আধিপত্য স্থাপনের প্রয়োজন তো ছিলই। কাজেই এ ব্যাপারে রাশিয়ার দিক থেকে তার প্রচেষ্টা যুক্তি যুক্তই ছিল।

২. শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বীর অভাব

ইউরোপের শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দুর্বল হয়ে পড়ে। সেই সুযোগ রাশিয়াকে পূর্ব ইউরোপের আধিপত্য বিস্তারের উৎসাহিত করে।

৩. নিরাপত্তা-বলয় গঠন

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলারের নির্দেশে জার্মান সেনা রাশিয়ার ওপর আক্রমণ হেনেছিল। কাজেই যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ও নিরাপত্তার তাগিদে ওই অঞ্চলের উপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে একটি নিরাপত্তা বলায় গড়ে তোলার সোভিয়েতের কাছে খুবই জরুরী ছিল।।

৪. আর্থিক পুনরুজ্জীবন

নিজের অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবন জন্য সম্পদ আহরণ এবং নিজস্ব শিল্প জাত পণ্যের বাজার হিসেবে অপূর্ব ইউরোপ রাশিয়ার কাছে ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

৫. জোটবদ্ধতা

প্রাক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে কূটনৈতিক দিক থেকে রাশিয়া যে বিচ্ছিন্ন ছিল তা থেকে মুক্তি পেতে সে একটি নিজস্ব জোট গড়ে তুলতে উৎসাহী ছিল। তাই এক্ষেত্রে বিষয় রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের উদ্দেশ্যে ও রাশিয়ার মধ্যে কাজ করেছিল।

« পূর্ব ইউরোপের রুশীকরণের পদ্ধতি

পূর্ব ইউরোপকে রাশি করণ করতে রাশিয়া পাঁচটি স্তর বিশিষ্ট একটি বিশেষ পদ্ধতি অনুসরণ করেছিল। সেগুলি হল-

১. রুশনিয়ন্ত্রণাধীন অস্থায়ী সরকার গঠন

প্রথম রাশিয়া পূর্ব ইউরোপের বেশ কিছু দেশের প্রতিষ্ঠিত সরকার কে ‘ফ্যাসিবাদি’ , ‘প্রতিক্রিয়াশীল’ ইত্যাদি আখ্যা দিতে শুরু করে। তারপর সেখানে পপুলার ফ্রন্ট নামে সর্বদলীয় একটি অস্থায়ী সরকার গঠন করা হয়। ওই সরকারকে এমন ভাবে গড়া হয় যাতে তার নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কেবল সোভিয়েত কমিউনিস্টদের হাতে থাকে।

২. আ-কমিউনিস্টদের উৎখাত

এর পরের স্তরে যেখানে অ- কমিউনিস্ট গোষ্ঠীগুলোকে ধীরে ধীরে ঠান্ডা মাথায় উৎপাত করে মন্ত্রিসভার সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ পথ বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দপ্তর কমিউনিস্টদের অধীনে আনা হয়।

৩. একদলীয় কমিউনিস্ট শাসন প্রতিষ্ঠা

যেখানে সমস্ত অ- কমিউনিস্ট মন্ত্রীদের বিতাড়িত করে কমিউনিস্টদের একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়।

৪. নতুন শাসনতন্ত্র রচনা ও প্রবর্তন

দেশ গলিতে রাশিয়ার অনুকরণে একটি নতুন শাসনতন্ত্র রচনা করে নিয়ন্ত্রিত গণভোটের মাধ্যমে সেই শাসনতন্ত্র প্রবর্তন করা হয়।

৫. রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল

এভাবে সেখানকার কমিউনিস্ট পার্টি বিরোধী দলগুলিকে দমন করে রাষ্ট্র সমস্ত ক্ষমতা দখল করে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস আদালত, যানবাহন, ধর্মস্থান, সংবাদপত্র, এমনকি ব্যক্তি স্বাধীনতা সমস্ত কিছুর উপর দলীয় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা হয়।

« পূর্ব ইউরোপের সোভিয়েত নিয়ন্ত্রিত কাঠামো

পূর্ব ইউরোপের সোভিয়েত অনুগত রাষ্ট্রগুলোর উপর নিয়ন্ত্রণ স্থানীয়ভাবে বজায় রাখতে রাশিয়া যে প্রতিষ্ঠান কাঠামো গড়ে তুলেছে তার দুটি দিক ছিল -অর্থনৈতিক ও সামরিক। আসলে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোকে আমেরিকার মার্শাল্লা পরিকল্পনার প্রলোভন থেকে রক্ষা করে সেখানকার সাম্যবাদকে বাঁচিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে রাশিয়াকে এরকম একটা শক্তি পরিকাঠামো গড়ে তুলতে বাধ্য করেছিল।

উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস বইয়ের সমস্ত প্রশ্নের উত্তর

Leave a Comment