নির্জোট আন্দোলনের অবদান
সূচনা
বিগত প্রায় ৫ দশকেরও বেশি সময় ধরে নিজোট আন্দোলন আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রের প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে আসছে। বেশ কিছু ত্রুটি বিচ্যুতি থাকলে দ্বিধাহীন ভাবে বলা যায় যে, বিশ্ব শান্তিরক্ষা, উপনিবেশবাদের বিরোধিতা, সার্বিক উন্নয়নের প্রশ্নে বা নিরক্ষীয় করনের ক্ষেত্রে নির্জন আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। নিজে আন্দোলনের অবদানের ক্ষেত্রগুলি হল –
১. বিশ্ব শান্তি রক্ষা
বিশ্ব শান্তিরক্ষার ব্যাপারে সূচনা কাল থেকে নিরপেক্ষ আন্দোলনের সচেতন ভূমিকা পালন করে এসেছে। ঠান্ডা লড়াই কালে সরিয়ে তো মার্কিন এই দুই নেতৃত্বাধীন রাষ্ট্র জোটের বাইরে থেকে নির্জন আন্দোলন ঠান্ডা লড়াই প্রসূত উত্তেজনা হ্রাসের চেষ্টা করে গেছে। শুধু তাই নয়, প্রতিষ্ঠান কাল থেকেই নির্জোট দেশগুলি সোভিয়ে ও মার্কিন কোন একটি জোটের সঙ্গে জড়িয়ে না পড়ার ব্যাপারে সতর্ক থেকেছে এবং দুই সামরিক জোটকেও সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত না হওয়ার অনুরোধ করেছে। প্রকৃত অর্থে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থার নীতিকে বাস্তবায়িত করার ব্যাপারে সর্বপ্রথম ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয় জোট নিরপেক্ষ আন্দোল। প্রথম নির্জোট সম্মেলন বেলগ্রেড সম্মেলন ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে থেকে জার্মানি, কোরিয়া বা ভিয়েতনামের ভূখণ্ড দখল করা নিয়ে দুই শক্তির রাষ্ট্র জোটের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব নিরসনের দাবি জানানো হয়।
২. তৃতীয় বিশ্বের উত্থানে
আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে প্রথম বিশ্বে বলতে বোঝায় মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিম ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার শিল্প উন্নত সমৃদ্ধি শালি দেশ গুলিকে, যারা মূলত গণতন্ত্র পুঁজিবাদী আদর্শ বিশ্বাসী। দ্বিতীয় বিশ্ব বলতে বোঝানো হয় সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রভাব দিন পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোকে যারা মূলত সমাজতন্ত্র সাম্যবাদী আদর্শে বিশ্বাসী। আর তৃতীয় বিশ্ব বলতে মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরবর্তীকালে এশিয়া, আফ্রিকা, মধ্য ও লাতিন আমেরিকার সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত দেশগুলোকে বোঝানো হয়। ঠান্ডা যুদ্ধ চলাকালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন পুঁজিবাদী জোট বা সোভিয়েত নেতৃত্বাধীন সাম্যবাদী জোট কোনটাতেই যোগ না দিয়ে নিজেও আন্দোলনভুক্ত দেশগুলো স্বাধীন ও স্বতন্ত্র অবস্থান তৃতীয় বিশ্বের উত্থান ঘটায়।
৩. উপনিবেশবাদের অবসানে
মেজর আন্দোলন সূচনা ঘটেছিল উপনিবেশিক দের নিয়ন্ত্রণ করে মুক্ত দেশগুলির সর্বভৌমত্ব রক্ষার লক্ষ্য নিয়ে। নিজেও আন্দোলন বরাবর উপনিবেশবাদ বা নয়া উপনিবেশবাদের বিরোধিতা করে এসেছে। এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার সদ্যস্বাধীনতা প্রাপ্ত দেশগুলি নির্জন আন্দোলনের শরিক হয়েছিল। এই সমস্ত দেশগুলি দীর্ঘদিন ধরে ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করেছে তাই স্বাভাবিকভাবে ঔপনিবেশিক শাসনাধীন থাকার যন্ত্রণা অনুভব করেছে। তাই নিজের রাষ্ট্রগুলি উপনিবেশিক বাদের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। অ্যাঙ্গোলায় পর্তুগিজ উপনিবেশবাদ প্রসঙ্গে বিদেশী হস্তক্ষেপ, আফগানিস্তান সোভিয়েত সামরিক হস্তকে প্রবিতি তীব্র বিরোধিতা করা হচ্ছে বিভিন্ন নির্জন সম্মেলন গুলিতে।
৪. বর্ণ বৈষম্যের বিরোধিতায়
জোর নিরপেক্ষ আন্দোলনের যে সমস্ত আন্তর্জাতিক সমস্যা গুলি প্রতি ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে সে গুলির মধ্যে অন্যতম হলো বর্ণ বৈষম্যের বিরোধিতা। এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশগুলোতে উপনিবেশিক শক্তি নিজ নিজ উপনিবেশ গুলির স্থায়িত্ব বৃদ্ধির জন্য জাতীয় বর্ণবিধেষ প্রথার অবতারণা ঘটায়। শ্বেতাঙ্গদের দ্বারা কৃষ্ণাঙ্গদের শোষণ এবং পদে পদে শ্বেতাঙ্গদের কাছে কৃষ্ণাঙ্গদের অবমাননা ও লাঞ্ছনা উপনিবেশ বলে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রেরণ যোগায়। দক্ষিণ রোডেশিয়া,, দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণ বৈষ্ণমের বিরোধিতার প্রস্তাব গ্রহণ করা হয় নির্জোট সম্মেলন গুলিতে।
৫. নিরস্ত্রীয়করণ
কয়েক শতক ধরে বিশু রাজনীতির বলতে গুটিকয়েক উন্নত দেশে দ্বারা পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত রাজনীতিতে বোঝা তো। কিন্তু নিঝড় আন্দোলনের সূচনার পর আন্তর্জাতিক রাজনীতি বৃহৎ শক্তিগড়কে নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত হয়েছে। আফ্রিকা ও এশিয়া তথাকথিত ছোট ছোট দেশগুলো আজও বিশ্ব রাজনীতির রঙ্গমঞ্চে আসার সুযোগ পেয়েছে। ছোট ছোট দেশ বলে মিলিত কন্ঠস্বর কে উপেক্ষা করার সাহস হারিয়েছে বৃহৎ শক্তিধর রাষ্ট্রগুলি। এখানে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের সাফল্য।
জোটনিরপেক্ষতা ও রাষ্ট্রসঙ্ঘের সম্পর্ক
১. আদর্শগত সম্পর্ক
জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের আদর্শগত রাষ্ট্রসঙ্ঘের আদর্শের মধ্যে অনেক মিল খুঁজে পাওয়া যায়। রাষ্ট্রসঙ্ঘের সনদে উল্লিখিত বিভিন্ন নীতির প্রতি নির্জোট রাষ্ট্র গুলি শ্রদ্ধাশীল। বিষয়টা আন্তর্জাতিক বিরোধ গুলির মীমাংসার ক্ষেত্রে জাতিপুঞ্জ এবং নিরপেক্ষ আন্দোলনের উভয় শান্তিপূর্ণ পদ্ধতি গ্রহণে বিশ্বাসী। বলা বাহুল্য, জোট নিরপেক্ষতা আদর্শের উদ্ভব ঘটে যে বান্দুং সম্মেলন, সেই সম্মেলনে গৃহীত নীতিগুলি ছিল রাষ্ট্রসঙ্ঘের গৃহীত নীতি সমূহের প্রতিচ্ছবি।
২. উদ্দেশ্য গত সম্পর্ক
রাষ্ট্রসংঘ প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য ছিল বিশ্বাস স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করা এবং বিশ্ববাসীর নিরাপত্তা রক্ষা করা। মেজর আন্দোলন ও বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা ও বিশ্ববাসী নিরাপত্তা রক্ষার সবসময় সচেষ্ট। বর্তমানে রাষ্ট্রসঙ্ঘের একটি মূল উদ্দেশ্য হলো নিরস্তীয়করণ। এই নিরস্তীয়করণ এর উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে নির্জন রাষ্ট্র গুলি রাষ্ট্রসঙ্ঘের ভেতরে ও বাইরে অবিরত প্রচার চালাচ্ছে। এছাড়াও রাষ্ট্রসঙ্ঘের সনদে বিশ্বের দুর্বল দেশগুলির উন্নয়ন ও নিরাপত্তা রক্ষা যে উদ্দেশ্য হয়েছিল তার সফল করার লক্ষ্যে জোট নিরপেক্ষ রাষ্ট্রগুলির সব সময় সক্রিয়।
৩. কার্যগত সম্পর্ক
রাষ্ট্রসংঘ যে সমস্ত জনকল্যাণমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সেগুলি অধিকাংশ নির্জোট সদস্য গুলির আধিপত্য সঙ্গে একজন বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কার্যাবলী রূপায়নের বদ্ধপরিকর। নির্জন সম্মেলনে ঘোষণা করা হয় রাষ্ট্রসঙ্ঘের সনদ মেনে যে সমস্ত রাষ্ট্র আত্মরক্ষা সচেষ্ট হবে নির্জন আন্দোলন তাদের সেই কাজের সমর্থন জানাবে।