কোরিয়ান সংকটের সমাধানে ভারতে ভূমিকা কি ছিল ?

সূচনা

কোরিয়ান যুদ্ধে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই যুদ্ধই ভারতের সামনে জোট নিরপেক্ষ নীতি প্রয়োগের সুযোগ এনে। এক্ষেত্রে যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে কিন্তু ভারতকে কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করতে হয়েছিল। জহরলাল নেহেরু প্রধান মন্ত্রীতে ভারত সরকার করিয়া সমস্যার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বিশ্বের দরবারে প্রশংসিত হয়।

কোরিয়া সংকটের সমাধানে ভারতের ভূমিকা

১. সভাপতি

(১) যুদ্ধবিরোধের ঘোষণা : দুই কোরিয়ার মধ্যে সমস্যা সূচনা লগ্নেই তার সমাধানের উদ্দেশ্যে জাতিপুঞ্জ 9 জন সদস্যের একটি অস্থায়ী কমিশন গঠন করে। যা সভাপতি ছিলেন ব্রিটিশ ভারতীয় কূটনীতিবিদ কে.পি.এস. মেনন। প্রতিবেদনের মেনন বৃহৎ শক্তিবর্গের ঐক্যবদ্ধভাবে এই সমস্যা মিটিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানা এবং তা না হলে এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলে সমাধান করে দেন। এই কমিশনের দায়িত্ব ছিল শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে কোরিয়ায় একটি জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করা। অবশেষে ভারতের অদম্য প্রচেষ্টায় ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে ২৭ জুলাই যুদ্ধ বিরোধী কার্যকর হয়েছিল।

(২) যুদ্ধ বন্দি সমস্যায় : যুদ্ধ শেষে যুদ্ধবন্দী সমস্যার সমাধানের জন্য ভারতে জেনারেল থিমাইয়ার সব অতীতে গঠিত হয় নিরপেক্ষ রাষ্ট্রসমূহের প্রত্যাবাসন কমিশন। নিরপেক্ষ রাষ্ট্র যোঠের এই কমিশন ঘোষণা করে যে, (i) স্বদেশ ফিরিয়ে না যাওয়াই যুদ্ধবন্দী নিরপেক্ষ দেশ বাস করতে পারবেন। (ii) স্বদেশে ফিরতে অনিচ্ছুক যুদ্ধবন্ধি বেসামরিক ব্যক্তিরূপে চিহ্নিত হবেন। অনিচ্ছুক ও বেসামরিক ১৫ হাজার যুদ্ধবন্দী ফরমোজা এবং ৭০০০ উত্তর কোরিয়ান যুদ্ধবন্দী দক্ষিণ কোরিয়ান বসবাস করতে যা পারবেন। (iii) যুদ্ধবন্ধিদের ৬০ দিনের মধ্যে নিজে নিজে দেশে ফেরত পাঠাতে হবে। কমিশনের এই ঘোষণায় যুদ্ধবন্দী সমস্যার সন্তোষজনক মীমাংসা হয়।

২. শান্তির পতি দায়বদ্ধতায়

দুই কোরিয়ার মধ্যে যুদ্ধ শুরু হলে নিরাপত্তা পরিষদের সঙ্গে ভারত ও উত্তর কোরিয়াকে আক্রমণকারী বলে চিহ্নিত করে। তবে কোরিয়া সমস্যার সমাধান দ্বিতীয় কোন পক্ষে হস্তক্ষেপের প্রস্তাবে ভারত প্রতিবাদে জানায়। ভারত জানাই যে এতে কোরিয়া সমস্যা আলো জটিল হয়ে উঠবে। ভারতের লক্ষ্য ছিল যুদ্ধের আগ্রাসন কর্মসূচি থেকে উভয়পক্ষকে সরিয়ে শান্তির পথে নিয়ে আসা। এই প্রতিবাদে শান্তির প্রতি ভারতে দায়বদ্ধতা সুস্পষ্ট হয়।

৩. মার্কিন আগ্রাসনের বিরোধিতায়

তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক রাষ্ট্রসঙ্ঘকে তাবেদার সংগঠন পরিণত করার প্রচেষ্টাকে সমালোচনা করে। তিনি এ ব্যাপারে স্পষ্ট ভাষায় ভারতের উদ্দেশ্যে বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন ভারত স্থানীয়ভাবে নিরপেক্ষ নয়; জোটবদ্ধ তো নয়। উত্তর কোরিয়ার বিরোধিতা করার অর্থ পশ্চিমে দেশগুলোকে তোষণ করা নয়।

৪. চীন-কোরিয়া যুদ্ধ বিরতিতে

জাতিপুঞ্জের শান্তিরক্ষা বাহিনী উত্তর করিয়া দখলের পর চীন সীমান্তে ইয়ালু নদী তীরবর্তী অঞ্চলে বোমাবর্ষণ শুরু করলে সোভিয়েত মদতপুষ্ঠ চীনের স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী জাতিপুঞ্জের বাহিনীর ওপর পাল্টা আক্রমণ করে। সেনাবাহিনী দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানীর সিওল দখল করে নিলে মার্কিন রাষ্ট্রপতি ট্রুম্যান সেনাপতি জেনারেল ম্যাক আর্থার কে দরখাস্ত করে চীনের সঙ্গে সমঝোতা চাই। অবশেষে সোভিয়েতের মধ্যস্থতায় উভয়ের মধ্যে যে যুদ্ধ বিরোধী প্রস্তাবে আসে ভারত তাতে সমর্থন জানায়। ভারতের সভাপতি কে একটি নিরপেক্ষ কমিশনের উপর দুই দেশের বন্দী বিনিময় দায়িত্ব দেওয়া হয়। ইতিপূর্বে জাতিপুঞ্জ কে চিনি কে আক্রমণকারী বলে অবহিত করে একটি প্রস্তাব আসলে ভারত তার বিরোধিতা করে।

৫. জোট নিরপেক্ষতার সুদৃঢ়করণ

ভারতীয় যে নিরপেক্ষ নীতি আন্তরিকভাবে বিশ্বাসী কোরিয়া যুদ্ধে ভারতের ভূমিকা থেকে পরিস্ফুট হয়। ভারতের জোট নিরপেক্ষতার মধ্যে যে কোন খাদ নেই, তা বোঝা যায় তখন নিজের সরকার প্রথমে উত্তর কোরিয়াকে আক্রমণকারী দেশ হিসেবে ঘোষণা করে এবং পরে মার্কিনি নীতির সমালোচনা করে।

« পরস্পর বিরোধী সমালোচনা

(১) কোরিয়া দেশে শান্তিপূর্ণ মীমাংসার লোককে ভারতের ভূমিকা কে চিন ও রাশিয়া পশ্চিমি তো শোন বলে সমালোচনা করে। আবার,

(২) আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড প্রকৃতি দেশের কোরিয়া সমস্যায় ভারতের ভূমিকা কে কমিউনিস্ট দর্শন বলে সমালোচনা করে।

মন্তব্য

কোরিয়ার যুদ্ধে ভারতে নিরপেক্ষ নীতির যে সঠিক তা প্রমাণিত হয়েছিল যখন ২ কোরিয়ায় পুরাতন সীমারেখাকে মেনে নিয়েছিল। আসলে কোরিয়ার সংকট বা কোরিয়া যুদ্ধের শান্তিপূর্ণ মীমাংসা ভারত মনে প্রানেই চেয়েছিল। ভারতের এই আন্তরিক সৎ ও নিরপেক্ষ ভূমিকা পরোক্ষভাবে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিকে উৎসাহিত।

উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস বইয়ের সমস্ত প্রশ্নের উত্তর

Leave a Comment