কোন পরিস্থিতিতে ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে নৌবিদ্রোহ শুরু হয়? এই বিদ্রোহের গুরুত্ব কি ছিল? অথবা, ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে নৌবিদ্রোহের বর্ণনা দাও?

নৌ বিদ্রোহের পটভূমি

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের শেষ পর্বে এক উল্লেখযোগ্য সংগ্রাম হলো ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতীয় নৌবাহিনী অর্থাৎ রয়েল ইন্ডিয়ান নেভি এর নৌ বিদ্রোহ। আজাদ হিন্দ সেনাদের বিচার এবং নৌ বাহিনীর অভ্যন্তরের ভারতীয়দের অবহেলা, অমর্যাদা, ভারতীয় নৌ সেনাদের মনে বিদ্রোহ মনোভাব জাগিয়ে তোলে। সুধীর কো স্বাধীনতা আন্দোলনে যাত্রা পথে বিদ্রোহ ছিল শেষ স্তর, যা অতিক্রম করে ভারতবাসী পেয়েছিল স্বাধীনতার স্বাদ। ডক্টর সুমিত সরকারের মতে -নৌ সেনাদের অভ্যুণ্থান আজাদ হিন্দ ফৌজের মুক্তিযুদ্ধে থেকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

১. বিদ্রোহের সূচনা

১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে ফেব্রুয়ারিতে বোম্বাই বন্দরে রয়াল ইন্ডিয়ান নেভি তলোয়ার জাহাজের রেডিও অপারেটর বলাই দত্ত স্লোগান লেখেন ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’, ‘বন্দেমাতরম’, ‘জয় হিন্দ’ ইত্যাদি। এই অপরাধী নখ কর্তৃপক্ষ বলায় দত্তকে পদচ্যুত করে। এর প্রতিবাদের রয়াল ইন্ডিয়ান নেভির খানে নেতৃত্বে ১৫০০ নাবিক বিদ্রোহে ঘোষণা করে ১৮ ফেব্রুয়ারি। বোম্বাইয়ের বাইশটি জাহাজে এবং করাচির হিন্দুস্তান জাহাজে এই বিদ্রোহের সূচনা ঘটে। প্রাথমিকভাবে বোম্বাইতে বিদ্রোহের সূত্রপাত হলেও ক্রমে তা করাচি থেকে কলকাতা তথা সমগ্র ব্রিটিশ ভারতে ছড়িয়ে পড়ে। ৭৮ টি সমুদ্র জাহাজ, কুড়িটি তীর প্রতিষ্ঠান এবং ২০,০০০ নাবিক এই বিদ্রোহের অংশ নেয়।

২. বিদ্রোহের কারণ

নৌ বিদ্রোহের অন্যতম কয়েকটি কারণ ছিল –

(১) আই. এন. এ. সেনাদের বিচার : যুদ্ধবন্দী আইন আই. এন. এ.-র ৩ সেনাপতির গুরুদয়াল সিং ধারন, প্রেম সেহগল, শাহান‌ওয়াজ খানকে দিল্লির লালকেল্লা নিয়ে আসা হয় প্রকাশ্যে বিচারের জন্য। সাতান দিন ধরে চলা এই মামলায় ৫ই নভেম্বর -৩১শে ডিসেম্বর ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে আজাদিন সেনাদের বীরত্বপূর্ণ লড়াইও আত্মত্যাগের কাহিনী প্রকাশিত হয়, যা নৌ সেনাদের উদ্বুদ্ধ করে। গান্ধীজি বলেন -‘যাদের বিচার হচ্ছে ভারত তাদের শ্রদ্ধা করে”।

(২) ব্রিটিশ খারাপ ব্যবহার : নৌ সেনাবাহিনীতে জাতিগত বিদেশের কারণে ইংরেজ নো অফিসাররা ভারতীয় নাবিকদের অকারনে গালিগালাজ, অপমান ও খারাপ ব্যবহার করত। ব্রিটিশ উচ্চপদস্থ কমান্ডার এফ. ডব্লিউ. কিং ভারতীয় জাতির প্রতি কুৎসা রটালে তা ভারতীয় নৌসেনাদের মনে যথেষ্ট অসন্তোষ সৃষ্টি করে। ভারতীয় সেনারা ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার অনুরোধ করে এসব ঘটনা কোন প্রতিকার পায়নি।

(৩) বেতন বৈষম্য : সাম যোগ্যতার সাথে ভারতীয় নৌকর্মচারীদের তখনই ব্রিটিশ কর্মচারীদের সমপরিমাণ বেতন দেওয়া হতো না। বেআইনিভাবে ব্রিটিশ সরকার এই বেতন বৈষম্য বজায় রেখেছিল। একই কাজের ধরনের বৈষম্যের ভারতীয় নৌ সেনাদের মনে ক্ষোভের সঞ্চার হয়।

(৪) নিম্নমানের খাদ্য সরবরাহ : ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে ভারতীয় নৌ সেনাদের অসন্তোষের অন্যতম কারণ ছিল তাদের নিম্নমানের খাদ্য সরবরাহ। বহুবার ভালো খাবারের আবেদন করলেও ভারতীয় নৌ সেনারা তা পায়নি, ফলে তাদের মনে এক ক্ষোভ পুঞ্জিভূত হয়েছিল। প্রতিবাদসহ বোম্বাইয়ের নৌ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তলোয়ার নামে জাহাজে ১৫০০ জন নাবিক নিম্নমানের খাদ্য বর্জন করে।

(৫) বিভেদ মূলক আচরণ : পদস্থ ব্রিটিশ নৌ কর্মচারীদের বিভেদ মূলক আচরণের জন্য নৌ বাহিনী দুটি বিভাগে বিভাজিত হয়। ইংরেজ শ্বেতাঙ্গ সম্প্রদায় British Other Ranks’ (BOR) নামে পরিচিতি পায়, আর ভারতীয় নৌ-কর্মচারীরা ‘Indian Others Ranks’ (IOR) নামে পরিচিতি পায় ভারতীয় কর্মচারীদের ঊর্ধ্ববতন কর্তৃপক্ষের স্বেচ্ছাচারিতার শিকার হতে হয়।

(৬) পদোন্নতির সুযোগ না থাকা

ভারতীয় কর্মচারীদের কোন দিনই পদোন্নতি হতো না। উপরন্ত নতুন করে কয়েকশো ইংরেজ অফিসারদের নৌবাহিনীদের নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। চাকরির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরে ভারতীয় নৌ সেনাদের পূর্ণর্বাসনের কোন ব্যবস্থা ছিল না।

(৭) দক্ষিণ এশিয়ার মুক্তি সংগ্রাম : ভারতীয় নৌসেনাদের তরফ থেকে ইন্দ্রোনেশিয়া প্রেরিত ভারতীয় নাবিকদের প্রত্যাবর্তনের দাবি জানানো হয়।‌ কাম্পুচিয়া, ভিয়েতনামা, লাওস ও মায়ানামার উপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে যে গণ আন্দোলন গড়ে ওঠে ভারতীয় সেনাদের ওপর ও তার প্রভাব পড়েছিল।

(৮) পূর্বেকার সেনা বিদ্রোহ গুলির প্রভাব : নৌ বিদ্রোহের আগেও বিভিন্ন সময় ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর ভারতীয় সেনারা একাধিকবার বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল, যেমন- (i) ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে আইন অমান্য আন্দোলন চলাকালীন গাড়‌ওয়ালি সেনাদের স্বদেশীদের ওপর গুলি চালাতে অস্বীকার করে। (ii) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা লগ্নে ২১ তম ভারতীয় অশ্বারোহী মাইনে ১১৪ জন সেনা সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধের অভিযোগ এনে দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ রক্ষণক্ষেত্রে যেতে অস্বীকার করে। (iii) ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে ১৮৪ ইন্ডিয়ান রেলওয়ে মেনটেন্যান্স কোম্পানিতে 800 জন সিপাহী অন্যায় শাস্তির প্রতিবাদে হিসেবে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল।

(৯) সেনাদের পদচ্যুতি : ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে প্রচুর ভারতীয় কে নৌবাহিনীতে নিয়োগ করা হয়। কিন্তু যুদ্ধের পর অতিরিক্ত সেনার প্রয়োজন না থাকায় সরকার বহু সেনাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে। এতে তারা বেকার হয়ে যায়। এর ফলে নৌ বাহিনীতে ক্ষোভের সঞ্চার হয়।

৩. বিদ্রোহের প্রসার

তলোয়ার জাহাজের বিদ্রোহের পর শীঘ্রই বোম্বাই আরো ২২ টি জাহাজে নাবিক বিদ্রোহ শুরু হয়। ক্রমে করাচি, কলকাতা, মাদ্রাজ, কোচিন, জামনগর, চট্টগ্রাম, বিশাখাপত্তনম, আন্দোলন দ্বীপপুঞ্জে প্রভৃতি স্থানে বিদ্রোহের আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ইংরেজ ভারত ছাড়া ধবনী বিদ্রোহীরা মুখরিত হয়। করাচিতে ব্রিটিশ জাহাজের অগ্নিসংযোগ করা হয়। ইংরেজ সেনাবাহিনী বিদ্রোহ নৌ সেনাদের ওপর গুলি চালালে বিদ্রোহীরা ও তার পাল্টা জবাব দেয়। বিদ্রোহীরা কয়েকটি ইংরেজ জাহাজ ও নৌবাহিনীর অস্ত্র গারো দখল করে নেয়। বোম্বাই শহরে কয়েক দিনের জন্য ইংরেজ শাসন লোভ পায়। পুনাতেও ব্রিটিশ শাসন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।

৪. বিদ্রোহীদের ভূমিকা

দেশের ছাত্রসমাজ ও সাধারণ মানুষ বিদ্রোহের সমর্থন করে। বিদ্রোহীদের সমর্থনে ২২ ফেব্রুয়ারি বোম্বাইয়ের সর্বানাত্মক ধর্মঘট পালিত হয়। ১০ লক্ষ শ্রমিক ধর্মঘটে সামিল হয়। শোভাযাত্রায় পুলিশ গুলি চালালে বোম্বাইয়ের রাজপথ ও ডগ অঞ্চলে জনতা পুলিশ রক্তাক্ত সংঘর্ষ চলে। বিদ্রোহীরা ইম্পিরিয়াল ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা, ডাকঘর, পুলিশ ফাঁড়ি প্রভৃতি আক্রমণ করে সেনাবাহিনী চল্লিশটি লরি তারা জ্বালিয়ে দেয়। সংঘর্ষে প্রায় ৩০০ লোক নিহত এবং ২০০০ লোক আহত হয়।

৫. স্ট্রাইক কমিটির দাবি

নৌ সংগ্রাম পরিচালনা ও বিভিন্ন বিদ্রোহ কেন্দ্রের মধ্যে সমন্বয় সাধনের জন্য বিদ্রোহীরা একজন হয় নৌ সেনা কেন্দ্রীয় ধর্মঘট সমিতি গঠন করে ১৯ ফেব্রুয়ারি এই কমিটির প্রেসিডেন্ট হন এম. এস. খান, ভাইস-প্রেসিডেন্ট হন মদন সিং। স্টাইক কমিটি বেশ কিছু দাবি ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করে। এই দাবিগুলি হল –

(১) আই. এন. এ. সেনাদের ও অন্যান্য রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তিদান।

(২) তলোয়ার জাহাজের সেনা প্রধান কামান্ডার এফ. ডব্লিউ. কিং এর বিরুদ্ধে শাস্তি গ্রহণ।

(৩) ভারতীয় নৌ সেনাদের চাকরির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর তাদের পূর্ণবাসনের ব্যবস্থা করা।

(৪) উন্নত মানের খাবারের ব্যবস্থা করা।

(৫) ইন্দোনেশিয়া থেকে ভারতীয় সেনাদের ফিরিয়ে আনা।

(৬) ক্যান্টিনে ব্রিটিশ ও ভারতীয় নারীদের মধ্যে বৈষম্যের অবসান ঘটানো।

(৭) নৌবাহিনী ছেড়ে যাওয়ার সময় পোশাক ফেরত না নেওয়া। নৌসেনা কেন্দ্রীয় ধর্মঘট সমিতির সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে বলে -“এখন থেকে নৌবাহিনী নাবিকরা শুধুমাত্র জাতীয় নেতাদের নির্দেশই গ্রহণ করবে”।

৬. আন্দোলন অবসান

২১ ফেব্রুয়ারি ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সরাসরি বিদ্রোহের সঙ্গে সংঘর্ষনে নামে। বিদ্রোহ নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হলে নৌ সেনাধ্যক্ষ অ্যাডমিরাল গটফ্রের নির্দেশ দাগ অঞ্চলে বিমান থেকে গোলা বর্ষণ করা হয়। সাত ঘন্টা ধরে দু’পক্ষের লড়াইয়ে বোম্বাই রাজপথে রক্তাক্ত রণক্ষেত্র পরিণত হয়। অবশেষে সরদার বল্লভ ভাই প্যাটেলের নির্দেশে বিদ্রোহীদের আত্মসমর্পণ করে ২৩ ফেব্রুয়ারি। বিদ্রোহীরা ঘোষণা করে, “আমরা আত্মসমর্পণ করেছি ব্রিটিশ এর কাছে নয়, ভারতের কাছে”।

৭. জাতীয় নেতার প্রতিক্রিয়া

জাতীয় নেতাদের সকলেই নৌ সেনাদের বিদ্রোহকে সমালোচনা করেন। গান্ধীজী ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, হিংসাত্মক কাজের জন্য হিন্দু মুসলমান ও অন্যান্যদের মিলন অপবিত্র। গান্ধীজীর মতে, মুম্বাইয়ে নৌ বিদ্রোহের এই ঘটনা ছিল চিন্তাবিহীন উন্মত্ত হিংসা। মোহাম্মদ আলী জিন্না বলেন -নৌ বিদ্রোহ এক অসময়োচিত ও দায়িত্বজ্ঞানীহীন কাণ্ড। সরদার বল্লভ ভাই প্যাটেলের মতে -নৌ বিদ্রোহ হচ্ছে অরাজকতা, একে কখনোই বন্ধ করা দরকার।। মুসলিম লীগ, কমিউনিস্ট পার্টি কেউই এই বিদ্রোহকে সমর্থন করেনি। তা জহরলাল ভারতীয় জনগণ ও সেনাবাহিনীর মধ্যে লৌহ প্রাচীন ভেঙে ফেলার জন্য নৌ বিদ্রোহীনদের অভিনন্দন জানান।

নৌ বিদ্রোহের গুরুত্ব

জাতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের নৌ বিদ্রোহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। নৌ বিদ্রোহের উচ্চপ্রশংসা করে রজনী পামদত্ত বলেছেন, “নৌ বিদ্রোহ ছিল ভারতের ইতিহাসের নবযুগের সূচনাকারী”। ডক্টর সুমিত সরকার বলেছেন, “এই বিরচিত সংগ্রাম ভারতের ইতিহাসে অনেকাংশেই এক বিস্মিত অধ্যায়ন হলেও আজাধীন ফৌজের মুক্তিযুদ্ধের চেয়েও তা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

১. আলাপ-আলোচনার ওপর গুরুত্ব

নৌ বিদ্রোহের গুরুত্ব উপলব্ধি করেই ব্রিটিশ এই প্রথম সামরিক শক্তি সাহায্য না নিয়ে ভারতবাসী স্বাধীনতা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে। আলাপ আলোচনার মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তরের ওপর ব্রিটিশ গুরুত্ব আরোপ করতে শুরু করে

২. ব্রিটিশের বোধোদয়ে

সিপাহী বিদ্রোহের প্রথম এবং নৌ বিদ্রোহের শেষবারের মতো ভারতীয় সেনার ব্রিটিশের বিরুদ্ধে যেভাবে বিদ্রোহ হয়েছিল তাদের ব্রিটিশ বলছিল ভারতীয় সেনাদের উপরে ভরসা করে আর বেশি দিন ভারতের রাজত্ব চালানো সম্ভব নয়। নৌ বিদ্রোহের পর ব্রিটিশ প্রশাসন বুঝে গিয়েছিল এদেশে তাদের দিন শেষ। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্লিমেন্ট এটলি পার্লামেন্টের জরুরি বৈঠক ডেকে বলেছেন -“সেনাবাহিনীর মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে, ভারত ব্রিটিশ শাসন টিকিয়ে রাখা অসম্ভব।

৩. স্বাধীনতা দানের সিদ্ধান্ত

নৌ বিদ্রোহের জন্য ব্রিটিশ প্রশাসন ক্ষমতা হস্তান্তরের অর্থাৎ ভারতকে স্বাধীনতা প্রদানের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছিল। শীঘ্রই তারা ক্যাবিনেটে মিশন বা মন্ত্রী মিশনকে ভারতে পাঠাতে বাধ্য হয়েছিল।

৪. ব্রিটিশ ভিত্তির অবসানে

নৌ সেনাদের বিদ্রোহ সাধারণ মানুষ মনে ব্রিটিশ ভিত্তি দূর করেছিল। দেশের সেনা ও সাধারণ প্রজাদের মধ্যে ব্যবধান দূর হয়েছিল।

৫. হিন্দু-মুসলিম ঐকো সাধন

নৌ বিদ্রোহের হিন্দু মুসলিম ঐক্যের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছিল। হিন্দু মুসলিম নাবিক, এমনকি সাধারণ হিন্দু মুসলিম প্রজারা ও বিদ্রোহের সাম্প্রদায়িক গণিতের পরিচয় দিয়েছিল। মার্কসবাদ লেখক রজনী পামদত্ত ইন্ডিয়ান হিস্ট্রি গ্রন্থে লিখেছেন – নৌ-নাবিকদের অভ্যুত্থান, সাধারণ মানুষদের সমর্থন এবং বোম্বাইয়ের শ্রমিক শ্রেণীর নায়ক ও সিদ্ধান্ত ভারতে যুবকদের সংকেতে দিয়েছিল এবং এটিই ছিল ভারতের ইতিহাসের এক মহত্তম দিক চিহ্ন।

মূল্যায়ন

নৌ বিদ্রোহ ছিল ভারতের স্বাধীনতা লাভের প্রাক্কালে শেষ উল্লেখযোগ্য সংগ্রাম। নৌ বিদ্রোহ পরিসমাপ্তি মুহূর্তে কেন্দ্রীয় ধর্মঘট সমিতি ঘোষণা করেছিল -“আমাদের জনগণের কাছে আমাদের শেষ কথা, আমাদের জাতীয় জীবনে এই ধর্মঘট এক যুগান্তকারী ঘটনা। এই প্রথম জনগণের এবং সৈনিকগণের শোণিত একত্রে মিলিত হয়ে বয়ে চলেছে এক সাধারণ উদ্দেশ্য।

উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস বইয়ের সমস্ত প্রশ্নের উত্তর

Leave a Comment