কর্তব্য
সাধারণভাবে কর্তব্য হল সচেতন নাগরিক হিসেবে সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি কয়েকটি দায়দায়িত্ব পালন। প্রকৃতি অনুসারে কর্তব্যকে দু-ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন-[1] নৈতিক কর্তব্য, [2] আইনগত কর্তব্য।
সংবিধানে মৌলিক কর্তব্যগুলির অন্তর্ভুক্তি
১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর গণপরিষদ কর্তৃক গৃহীত ভারতের মূল সংবিধানে কোনাে মৌলিক কর্তব্যের উল্লেখ ছিল না।
১৯৭৬ সালের ৪২ তম এবং ২০০২ সালে ৮৬ তম সংশােধনের মাধ্যমে সংবিধানে কয়েকটি মৌলিক কর্তব্যের উল্লেখ করা হয়েছে। এই উদ্দেশ্যে চতুর্থ অধ্যায় (ক) নামে একটি নতুন অধ্যায় এবং ৫১(ক) নামে একটি নতুন ধারা সংযােজন করা হয়। এই ধারায় ভারতীয় নাগরিকদের ১১টি মৌলিক কর্তব্য পালনের কথা বলা হয়েছে।
ভারতীয় নাগরিকদের মৌলিক কর্তব্যসমূহ
ভারতের মূল সংবিধানে নাগরিকদের মৌলিক কর্তব্যের কোনাে উল্লেখ ছিল না। পরবর্তীকালে সংবিধানের ৪২তম সংশােধনীর (১৯৭৬) সাহায্যে নাগরিকদের মৌলিক কর্তব্যগুলি সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এজন্য সংবিধানের চতুর্থ অংশের ৫১ নং ধারায় ৫১(ক) উপধারার সংযােজন করে Part IV (A) নামে নতুন একটি অধ্যায় সংযােজিত হয়।
এই ধারায় ভারতীয় নাগরিকদের জন্য মোট ১০টি মৌলিক কর্তব্য লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল। সম্প্রতি ২০০২ সালে ৮৬তম সংবিধান সংশােধনের মাধ্যমে ৫১(ক) ধারায় নতুন একটি কর্তব্য সংযােজিত হওয়ায় বর্তমানে মৌলিক কর্তব্যের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১টি। কর্তব্যগুলি হল一
- [1] সংবিধান মেনে চলা ও সংবিধানের আদর্শ, জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সংগীতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন।
- [2] যেসব মহান আদর্শ জাতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামে অনুপ্রেরপারূপে কাজ করেছিল সেগুলিকে যত্নসহকারে রক্ষা এবং অনুসরণ করা।
- [3] ভারতের সার্বভৌমত্ব, একতা ও সংহতির প্রতি সমর্থন প্রদর্শন ও সংরক্ষণ করা।
- [4] দেশরক্ষা এবং জাতীয় সেবামূলক কাজের আহ্বানে এগিয়ে আসা।
- [5] ধর্মগত, ভাষাগত, অঞ্চলগত বা শ্রেণিগত বিভেদের ঊর্ধ্বে উঠে সমস্ত ভারতীয়দের মধ্যে একতা ও ভ্রাতৃত্ববােধ সম্প্রসারিত করা এবং নারীর মর্যাদাহানিকর প্রথাগুলিকে পরিত্যাগ করা।
- [6] ভারতের মিশ্র সংস্কৃতির গৌরবময় ঐতিহ্যকে মূল্য দেওয়া ও সংরক্ষণ করা।
- [7] বনভূমি, হ্রদ, নদী, বন্যপ্রাণী-সহ প্রাকৃতিক পরিবেশকে সংরক্ষণ করা এবং জীবজন্তুর প্রতি মমত্ববােধ প্রকাশ করা।
- [8] বিজ্ঞানসম্মত দৃষ্টিভঙ্গি, মানবিকতা, অনুসন্ধিৎসা ও সংস্কারমুখী দৃষ্টিভঙ্গির প্রসার ঘটানাে।
- [9] জাতীয় সম্পত্তি রক্ষা করা এবং হিংসার পথ পরিহার করা।
- [10] সবক্ষেত্রে জাতীয় উন্নতির গতি বজায় রাখতে ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত সব কাজে চরম উৎকর্ষসাধনের জন্য সচেষ্ট হওয়া।
- [11] ৬-১৪ বছর বয়সি প্রতিটি বালকবালিকার শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা তার পিতা-মাতা এবং অভিভাবকের কর্তব্য।
মৌলিক কর্তব্যগুলির প্রকৃতি বাধ্যতামূলক নয়। জনগণ কোনাে মৌলিক কর্তব্য অমান্য করলে রাষ্ট্রের কিছু করার থাকে না। রাষ্ট্র কোনােভাবেই জনগণকে মৌলিক কর্তব্য পালনে বাধ্য করতে পারে না, এমনকি এগুলি অমান্য করা হলে তার বিরুদ্ধে আদালতেও যাওয়া যায় না।