কম্পিউটার সিস্টেম কি ? কম্পিউটারের কয়টি অংশ ও কি কি?

আমরা সবাই বর্তমানে কম্পিউটার ব্যবহার করেছি বা দেখেছি। সুতরাং আপনি যদি কোনো সাইবার ক্যাপ বা কম্পিউটার দোকানে গিয়ে থাকেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একটা কথা শুনতে পাবেন কম্পিউটার সিস্টেম

আসলে কি কম্পিউটার সিস্টেম? কম্পিউটার বা কম্পিউটার সিস্টেম বিষয় দুটি আলাদা নাকি একই? ও তাছাড়া এই প্রশ্নের পাশাপাশি আমরা জানবো কম্পিউটারের কয়টি অংশ ও কি কি।

তাহলে চলুন আর সময় নষ্ট করে আমাদের আজকের আর্টিকেলের মূল বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা শুরু করি। – কম্পিউটার সিস্টেম কি ? কম্পিউটারের কয়টি অংশ ও কি কি?

Table of Contents

কম্পিউটার সিস্টেম কি ? (What is Computer System in Bengoli?)

প্রথমে আমাদের বুঝতে হবে কম্পিউটার এবং কম্পিউটার সিস্টেম কিন্তু দুটি বিষয়ে কিন্তু সম্পূর্ণ আলাদা। কম্পিউটার সিস্টেম হল একটি কম্পিউটারের পূর্ণাঙ্গ রূপ, অর্থাৎ একটি কম্পিউটার গঠিত হওয়ার জন্য যা যা সামগ্রী বা অংশের দরকার।

একটি কম্পিউটার হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার, নেটওয়ার্ক, স্টোরেজ ডিভাইস, অপারেটিং সিস্টেম, মাদারবোর্ড, ইনপুট ও আউটপুট ডিভাইস ও নানান সমস্ত ডিভাইস নিয়ে একটি কম্পিউটার সিস্টেম তৈরি হয়।

অর্থাৎ একটি কম্পিউটার কে সঠিকভাবে পরিচালনা বা ব্যবহার করার জন্য যা কিছু সফটওয়্যার হার্ডওয়ার অথবা বিভিন্ন থার্ড পার্টি অ্যাপ্লিকেশন যাই কিছু দরকার হয়ে থাকে না কেন সবটাই একত্রে মিলে আমরা একটি কম্পিউটার সিস্টেম বলে থাকি।

কম্পিউটার সিস্টেমের কয়টি অংশ বা প্রধান উপাদান গুলি কি কি ?

সুতরাং একটি কম্পিউটার সিস্টেম সঠিকভাবে গঠন হওয়ার জন্য বিভিন্ন অংশের প্রয়োজন হয়ে থাকে। তবে তার মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশ রয়েছে।

তবে কম্পিউটার সিস্টেমের কয়েকটি অংশ বা প্রধান উপাদান গুলি কি কি এগুলোকে নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যার দ্বারা বোঝানো সম্ভব নয়।

কারণ যত টেকনোলজি দ্রুতগতিতে উন্নত হচ্ছে, দিনকে দিন কম্পিউটারের বিভিন্ন অংশ সংযুক্ত হচ্ছে। তাই আজকে যদি কম্পিউটার সিস্টেমের প্রধান পাট একটি হয়ে থাকে অপরদিকে কিন্তু আরেকটি হয়ে যাবে।

তবুও বর্তমানের কম্পিউটার সিস্টেম এর উপর নির্ভর করে কম্পিউটারের সিস্টেমের কয়টি অংশ বা প্রধান উপাদান গুলি কি কি আলোচনা করবো।

১. প্রসেসিং ইউনিট বা CPU :

প্রসেসিং ইউনিট বা CPU হলো – কম্পিউটারের একটি প্রধান হার্ডওয়ার উপাদান। এটি কম্পিউটার বিভিন্ন কাজকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং অপারেটিং সিস্টেম এবং সফটওয়্যার এর সম্পর্কিত কাজ গুলি সম্পাদন করে অর্থাৎ আমরা যখন কিবোর্ডের মাধ্যমে কোনো কিছু টাইপ করি A,B,C,D। সেই ইনপুট গুলোকে প্রসেসিং ইউনিট বা সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট (Central Processing Unit, CPU) প্রসেসিং করে কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেমকে বোঝায়।

এবং এই CPU এর মধ্যে সাধারণত তিনটি অংশ থাকে-

অ্যারিথমেটিক এন্ড লজিক ইউনিট (Arithmetic and Logic Unit, ALU):

এটি হলো কম্পিউটারের প্রসেসিং ইউনিটের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ অ্যারিথমেটিক এন্ড লজিক ইউনিট বা ALU। এর সাহায্যে সি পি ইউ বিভিন্ন সংখ্যাগ্নিতিক গণনা বা লজিক্যালি কোনো কাজ করতে পারে। বিভিন্ন অ্যারিথমেটিক অপারেশন (যেমন যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ) সহজেই করতে পারবে।

কন্ট্রোল ইউনিট (Control Unit)

cpu মধ্যে থাকা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল – কন্ট্রোল ইউনিট। এই কন্ট্রোল ইউনিট কন্ট্রোল (CU) প্রসেসিং ইউনিট (CPU) থেকে বিভিন্ন নির্দেশ নিয়ে তা কাজ করে। অর্থাৎ যখনই কোনো কিছু ইনপুট দিয়ে থাকি, সেগুলিকে বাইনারিতে বাইনারি অর্থাৎ কম্পিউটারের ভাষা তে কম্পিউটার কে বোঝানো।

রেজিস্টার (Register)

রেজিস্টার এর প্রধান কাজ হল কম্পিউটারে ইন্টারনাল থেকে বিভিন্ন কাজগুলিকে সঠিক জায়গায় পৌঁছে দেওয়া, অর্থাৎ কম্পিউটারের মাধ্যমে কোন ব্যক্তি যদি ক্যালকুলেটরে ফুলের যোগ-বিয়োগ গুন করতে চায়, তাহলে এই রেজিস্টার কম্পিউটারের ALU অংশে সেই কাজটিকে পাঠিয়ে দেবে।

ও তার পাশাপাশি কম্পিউটারের প্রসেসিং ইউনিট যাতে খুব তাড়াতাড়ি কাজ করে তার জন্য তাকে সিদ্ধান্ত দিতে হয় কোন সময় কোন কাজটি করলে দ্রুত কাজটি সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।

২ . মেমোরি বা Memory

মেমোরি হল কম্পিউটারের সিস্টেমের বিভিন্ন সাধারণ জিনিসগুলো মনে রাখার একটি কৌশল বা প্রক্রিয়া। । অর্থাৎ এই অংশে কম্পিউটার সিস্টেমকে মনে করে দেয় সাধারণ কিছু কাজ গুলো।

যেমন ধরুন আপনি যদি কম্পিউটার চালু করেন, তাহলে কিন্তু আপনার সামনে কম্পিউটারে অপারেটিং সিস্টেম মাইক্রোসফট লোগো কিন্তু এমনিতেই চলে আসবে।

কিংবা আপনি যদি কোন কিছু ফাইল সেভ করতে চান তাহলে অটোমেটিকলি – আপনাকে অপশন দেখাবে আপনি ওই ফাইলটি কোন জায়গায় সেভ করাতে চান।

সুতরাং কম্পিউটার সিস্টেমের যে সাধারণ কিছু কাজ বা মনে রাখার ব্যাপার সেগুলি পুরোটাই কাজ করে মেমোরি। অর্থাৎ এখানে কম্পিউটারের মেমোরি মনে রাখে কোন সময় কি কাজটি করতে হবে?

তবে এক্ষেত্রে কম্পিউটারের কিছু মেমোরি আছে যেগুলি অটোমেটিকলি ভুলে যায় অর্থাৎ মনে রাখতে পারে না। কম্পিউটার মেমোরি কি আবার দুটি ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে যেমন- ১ RAM, 2 ROM।

র‍্যান্ডম অ্যাক্সেস মেমোরি (Random Access Memory, RAM):

Ram হল এক ধরনের অস্থায়ী মেমরি অর্থাৎ এখানে যতক্ষণ না কোন কিছু ফাইল সেভ করবেন তা মনে রাখতে পারেনা।

যেমন ধরুন আপনি কোন কিছু ওয়ার্ড বা ফটো এডিটিং করছেন, এই কাজটিই আপনি আপনার কম্পিউটারের সেভ না করেই কম্পিউটারটি বন্ধ করে দিলেন, পরবর্তীকালে আপনি যখন কম্পিউটার চালু করবেন আপনি কিন্তু ফাইভ ইয়ার দেখতে পাবেন না।

রিড অনলি মেমোরি (Read-Only Memory, ROM):

ROM হল ইনবিল্ড একটি মেমোরি, অর্থাৎ যখন কোন কম্পিউটার সিস্টেম তৈরি হয় তখনই এই মেমোরিতে দিয়ে কিছু নির্দেশ বলি দেওয়া থাকে, এবং এই নির্দেশগুলি চাইলেও আপনি পরিবর্তন করতে পারবেন না।

যেমন যখন কোন কম্পিউটার চালু হবে তখন সেই সেই কম্পিউটার সিস্টেমে অপারেটিং সিস্টেমের দেখাতে শুরু করবে তারপর হবে।

এই সমস্ত কাজগুলি আগে থেকেই অপারেটিং সিস্টেমে সেভ করে থাকে যা ROM কোনদিনও ভোলে না।

৩. স্টোরেজ ডিভাইস বা Storage Devices

আমাদের কম্পিউটারের যত কিছু তথ্য সঞ্চয় রয়েছে তা কিন্তু সবটাই স্টোরেজ ডিভাইসের মধ্যে থাকে, অর্থাৎ ভিডিও থেকে অডিও ও আপনার লেখা থেকে ছবি পর্যন্ত। সবটাই কিন্তু ডিভাইসের মধ্যে সঞ্চয় থেকে থাকে তবে কিন্তু আবার বিভিন্নভাবে ভাগ করা যায়, – HDD,SSD।

হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ (Hard Disk Drive, HDD)

আমরা সবাই কিন্তু কম বেশি এই হার্ডডিস্ক পরিচিতি। অর্থাৎ যখন আমরা কোন কিছু তথ্য সঞ্চয় করতে চাই তখন কিন্তু হার্ডডিক্স এর বিভিন্ন সার্কিট বা ডিস্ক থাকে তার মধ্যে দীর্ঘ সময়ের জন্য আমাদের ডেটা গুলো সংযোগ থাকে। তবে হার্ডডিস্ক এর ডেটা গুলো লোড হতে অনেকটা সময় নেয়।

যতকিছু আমরা অপারেটিং সিস্টেম কম্পিউটার ব্যবহার করে থাকি তার সবটাই কি কিন্তু আমাদের স্টোরেজ ডিভাইসের মধ্যে থাকে।

সলিড স্টেট ড্রাইভ (Solid State Drive, SSD):

এটিও হার্ডডিক্স এর মত সমান ভাবে কাজ করে, তবে এক্ষেত্রে এই স্টোরেজ ডিভাইসের মধ্যে বিভিন্ন সার্কিট থাকে, , যার সাহায্যে দ্রুত আমরা কাজ করতে পারি, এবং এটি হার্ডডিস্কের তুলনায় অনেক ছোট ও তুলনামূলক কম ভারী হয়ে থাকে।

৪. ইনপুট ডিভাইস বা Input Devices

যখনই আমরা কম্পিউটারকে কোন কিছু বলি বা তথ্য প্রদান করি তার জন্য যে মাধ্যম আমরা ব্যবহার করে থাকি সেটি হল ইনপুট ডিভাইস। সাধারণত ইনপুট ডিভাইসটা কেবলমাত্র ইউজারের কাজে আসে, অর্থাৎ যাতে করে কোন ইউজার সহজে কম্পিউটারকে কোনো নির্দেশ দিতে পারে।

এবং এই ইনপুট ডিভাইসের বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন ভাগে কাজ করতে সক্ষম যেমন –

কীবোর্ড (Keyboard):

সবাই জানি, কোন কিছু লেখা কোন কিছু, কোনো কিছু সংখ্যা কোনো বিশেষ চিত্র ইত্যাদি লেখার জন্য কিন্তু আমরা কিবোর্ডে টাইপ করে থাকি।

মাউস (Mouse)

লেখার পাসওয়ার্ড যখন আমরা কম্পিউটারকে বিভিন্ন টার্গেট দিয়ে থাকি, যেমন কোন কিছুতে ক্লিক করা স্ক্রল ডাউন করা, এই সম্পর্কিত বিভিন্ন কাজ করার জন্য আমরা কিন্তু মাউসের ব্যবহার করে থাকি।

টাচস্ক্রিন (Touchscreen)

বর্তমানে যে টেকনোলজি খুব উন্নত হচ্ছে তার কোন সন্দেহ নেই, । তার বড় একটি উদাহরণ টাচ স্কিন এর সাহায্যে আপনি লেখালেখির পাশাপাশি ক্লিক করা, স্ক্রল ডাউন, চিত্র আঁকা সবকিছু করতে পারবেন।

স্ক্যানার (Scanner):

আমরা যদি কোন কিছু ডকুমেন্টকে ভার্চুয়াল ভাবে কাউকে পাঠাতে চাই, তার জন্য কিন্তু আমরা স্ক্যানার ডিভাইসে ব্যবহার করে থাকি।

মাইক্রোফোন (Microphone)

ঠিক একই রকম ভাবে বিভিন্ন ভয়েস ইনপুট করার জন্য আমরা মাইক্রোফোন ইনপুট ডিভাইসের ব্যবহার করে থাকি।

উইবক্যাম (Webcam:)

যখন আমরা কোন কিছু ছবি ক্যাপচার করি, বা বিভিন্ন ভিডিও করে এক জায়গা থেকে অন্য কারো সঙ্গে কথা বলি তখন কি তোমাদের উইবক্যামইনপুটমেন্ট এর প্রয়োজন হয়ে থাকে।

৫ আউটপুট ডিভাইস বা Output Devices

কম্পিউটার সিস্টেম থেকে আশা বিভিন্ন তথ্য দেখার জন্য যে সমস্ত ডিভাইসের আমরা ব্যবহার করে থাকি সেই সব ডিভাইসকে আউটপুট ডিভাই বলা হয়ে থাকে। এবং এই ডিভাইসের মধ্যে অনেকগুলি ভাগ রয়েছে যেমন –

মনিটর (Monitor)

এই আউটপুট টিএইচ ব্যবহার করে আমরা বিভিন্ন ভিডিওসহ চিত্র আমরা দেখতে পাই।

প্রিন্টার (Printer)

কোন কিছু ভার্চুয়াল কাগজ বা ডকুমেন্ট ফিজিক্যাল ভাবে হাতে দেখার জন্য ওরা প্রিন্টার ব্যবহার করে থাকি।

স্পিকার (Speaker)

স্পিকার সম্পর্কে তোমরা সবাই জানে, কোন কিছু শব্দ সম্পর্কিত শুনতে গেলে আমাদের স্পিকারের প্রয়োজন হয়ে থাকে।

৬. মাদারবোর্ড বা Motherboard

মাদারবোর্ড হল একটি কম্পিউটারের মূল বিষয়বস্তু বা কম্পোনেন্ট যার মধ্যে সমস্ত কম্পিউটারের সার্কিট বা পোর্ট গুলো একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। ইনপুট ড্রেস থেকে আউটপুট ডিভাইস, স্পিকার থেকে হেডফোন থেকে কম্পিউটারে মনিটর – সবটাই কিন্তু একে অপরের সঙ্গে বিভিন্ন পোর্টদ্বারা কানেকশন থাকে।

এক কথায় মাদারবোর্ড বিভিন্ন কাজকে প্রসেসিং না করলেও সবাই কে একসঙ্গে একত্রিতভাবে সংযুক্ত রাখার কাজ করে।

৭ . পাওয়ার সাপ্লাই বা Power Supply

অবশেষে পাওয়ার সাপ্লাই হলো কম্পিউটারের প্রধান এবং সব থেকে বড় একটি অংশ। অর্থাৎ যখনই আমাদের কম্পিউটার চলার জন্য বৈদ্যুতিক শক্তির প্রয়োজন হবে – তখন কিন্তু এই পাওয়ার সাপ্লাই এর সাহায্যে ওই বৈদ্যুতিক শক্তিটিকে কম্পিউটারের মধ্যে সরবরাহ করা সম্ভব হয়।

তবে এক্ষেত্রে পাশের প্রধান একটি অংশ হল SMPS (Switched Mode Power Supply)

SMPS

এস এম পি এস হলো একটি মূলঅংশ পাওয়ার সাপ্লাই করার। । কারণ কম্পিউটার কোনদিনও এসি (AC) কারেন্ট চলে না।

অর্থাৎ কম্পিউটারের জন্য (DC) ডিসি এনার্জি প্রয়োজন হয়ে থাকে, এবং এস এম পি এস এসি কারেন্ট কে ডিসিতে রূপান্তরিত করে। পাওয়ার সাপ্লাই এর মাধ্যমে কম্পিউটার কে চলতে সাহায্য করে।

Leave a Comment