উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার সমস্যা ও তার সমাধান সম্পর্কে লেখাে।

উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার সমস্যা

একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষাক্রম উচ্চমাধ্যমিক বা +2′ নামে পরিচিত। পশ্চিমবঙ্গে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে অনেক সমস্যা লক্ষ করা যায়। এগুলির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হল—

(১) ভরতির সমস্যা: পরিকাঠামাের অভাবে বহু বিদ্যালয়ই অতিরিক্ত ছাত্রসংখ্যা ভরতি করতে পারছে না। ফলে উচ্চমাধ্যমিকের ভরতি-সংক্রান্ত সমস্যাটি প্রকট আকার ধারণ করেছে।

(২) উপযুক্ত শিক্ষকের অভাব: অধিকাংশ বিদ্যালয়ে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের ছাত্রছাত্রীদের পড়ানাের জন্য উপযুক্ত শিক্ষাগত যােগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষকশিক্ষিকার অভাব রয়েছে।

(৩) পরীক্ষাগার ও গ্রন্থাগারের অভাব: অনেক বিদ্যালয়েই উচ্চমাধ্যমিক স্তরে বিজ্ঞান পড়ানাের জন্য পরীক্ষাগারের অভাব রয়েছে। বহু বিদ্যালয়েই গ্রন্থাগার নেই।

(৪) পাঠক্রমের ত্রুটি: উচ্চমাধ্যমিক পাঠক্রমটি এতই বিশাল যে সদ্য মাধ্যমিক উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীদের পক্ষে তা আয়ত্ত করা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য ব্যাপার।

(৫) বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রসারের অপ্রতুলতা: উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যবস্থা খুবই কম। তাই ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বহু ছাত্রছাত্রী এই শিক্ষার সুযােগ থেকে বতি হয়।

(৬) সময়ের অভাব: উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাক্রমে দুই বছর বা চব্বিশ মাস ধার্য করা হলেও, বাস্তবে ছাত্রছাত্রীরা কুড়ি মাস মতাে সময় পায়। সময়ের অভাবে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী কেউই সিলেবাস শেষ করতে পারে না।

(৭) পরীক্ষার সমস্যা: উচ্চমাধ্যমিক স্তরে পরীক্ষার সমস্যা অত্যন্ত প্রকট, বিশেষ করে উত্তরপত্র মূল্যায়নের ক্ষেত্রে। উপযুক্ত সংখ্যক যােগ্য পরীক্ষকের অভাব এর অন্যতম কারণ।

(৮) অন্যান্য সমস্যা: এই সমস্যাগুলি ছাড়াও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক সমস্যা, মুটিপূর্ণ মূল্যায়ন ব্যবস্থা, প্রাইভেট কোচিং নামক সমান্তরাল শিক্ষাব্যবস্থা প্রভৃতি নানাধরনের সমস্যা রয়েছে।

উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার সমস্যা সমাধানের উপায়

উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে যেসব সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, তার সমাধানের জন্য নিম্নলিখিত কর্মসূচি গ্রহণ করা উচিত一

(১) পরিকাঠামোর উন্নতি: বিদ্যালয়ের পরিকাঠামাের উন্নতি করতে হবে। যেমন আরও শ্রেণিকক্ষ, সমৃদ্ধ লাইব্রেরি, রিডিং রুম এবং পরীক্ষাগারের আধুনিকীকরণ ইত্যাদির ব্যবস্থা করতে হবে।

(২) অধিক সংখ্যক বিদ্যালয় স্থাপন: অধিক সংখ্যক বিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে।

(৩) যােগ্য শিক্ষক নিয়োগ: উপযুক্ত যােগ্যতাসম্পন্ন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকবেশি করে নিয়ােগ করতে হবে।

(৪) পাঠক্রমের আধুনিকীকরণ: পাঠক্রমের আধুনিকীকরণ করতে হবে।

(৫) পাঠক্রমের মানোন্নয়ন: মাধ্যমিক এবং স্নাতক স্তরের সঙ্গে উচ্চমাধ্যমিকের পাঠক্রম যাতে আরও বেশি করে সম্পর্কযুক্ত হয়, তার ব্যবস্থা করতে হবে।

(৬) পরীক্ষাব্যবস্থার সংস্কার: পরীক্ষাব্যবস্থায় সংস্কার আনতে হবে।

(৭) সুষ্ঠু পরিচালনা: প্রশাসনিক সমস্যার সমাধান করে বিদ্যালয়কে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে হবে।

(৮) বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসার: উচ্চমাধ্যমিক স্তরে বিজ্ঞান বিভাগ খােলার জন্য উৎসাহ দিতে হবে।

উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাক্রমের সমস্যাগুলি শনাক্ত করে সমাধানের ব্যবস্থা করলে শিক্ষাব্যবস্থাটি ছাত্রছাত্রীদের কাছে আরও বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে এবং আরও বেশি সংখ্যক ছাত্রছাত্রীকে উচ্চশিক্ষা অভিমুখী করে তোলা যাবে।

Education সব প্রশ্ন উত্তর (একাদশ শ্রেণীর)

Leave a Comment