প্রাসাদ শাসনকে জাতীয় শাসনে রূপান্তরে ক্রমওয়েলের উদ্যোগ
ইউরােপের সংস্কার আন্দোলন বা রিফরমেশনের পূর্ব পর্যন্ত ইংল্যান্ডের রাজা ও তাঁর নিকটাত্মীয়রা যাবতীয় শাসন ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতেন। যােগ্যব্যক্তির পরিবর্তে তাদের নেতৃত্বে পরিচালিত এই শাসন ইতিহাসে ‘প্রাসাদ শাসন নামে পরিচিত। অষ্টম হেনরির আমলে তার প্রধান পরামর্শদাতা টমাস ফ্রমওয়েল এই প্রাসাদ শাসনকে জাতীয় শাসনে রূপান্তরিত করার উদ্যোগ নেন।
[1] সরকারি প্রশাসনের পুনর্গঠন: রিফরমেশনের আগে পর্যন্ত রাজা এবং তার প্রাসাদের কর্মচারীরা ছিলেন প্রশাসনিক প্রধান। কিন্তু ক্রমওয়েল এই ব্যবস্থা বদলে দিয়ে প্রশাসনিক কেন্দ্রে মন্ত্রীসভাকে স্থান দেন। উনিশজন মন্ত্রী নিয়ে তিনি গঠন করেন প্রিভি কাউন্সিল। ক্রমওয়েল রাজার একটি সচিবালয় গড়ে তােলেন এবং একটি প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি পদ সৃষ্টি করে নিজে সেই পদে বসেন।
[2] স্থানীয় শাসনের পুনর্গঠন: জনগণের আন্দোলন মােকাবিলার জন্য ক্রমওয়েলের উদ্যোগে উত্তর ইংল্যান্ডের কাউন্সিলকে নতুনভাবে গঠন করা হয়। এই নবগঠিত কাউন্সিলকে প্রশাসনিক ও বিচারক্ষমতা দান করা হয়। এই কাউন্সিলের সক্রিয় ভূমিকায় উত্তর ইংল্যান্ডে শান্তিশৃঙ্খলা ফিরে আসে। একইভাবে স্কটল্যান্ডের ওয়েলস প্রদেশে এবং পশ্চিম ইংল্যান্ডে ক্রমওয়েল আর-একটি কাউন্সিল গঠন করেন।
[3] আর্থিক বিভাগের পুনর্গঠন: টমাস ক্রমওয়েল আর্থিক ব্যবস্থাকে পুনর্গঠিত করেন। তিনি অর্থবিভাগের নতুন পদ সৃষ্টি করেন (১৫৩৪ খ্রি.)। পাশাপাশি চার্চের কর নির্ধারণ ও কর আদায়ের জন্য নতুন কোণাধ্যক্ষ পদ সৃষ্টি করেন।রাজস্ব বিষয়ক বিভিন্ন মামলার নিষ্পত্তির জন্য গঠিত হয় রাজস্ব আদালত।
[4] সংসদীয় আইনের প্রাধান্য: টমাস ফ্রমওয়েল সর্বপ্রথম সংসদীয় আইনের গুরুত্ব অনুভব করেন। সংসদ অনুমােদিত আইনগুলিকে তিনি জাতীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে প্রয়ােগ করতে শুরু করেন। ফলে সংসদীয় আইনের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
চার্চতন্ত্রের প্রাধান্য রােধে ক্রমওয়েলের উদ্যোগ
টমাস ক্রমওয়েল ইংল্যান্ডে চার্চতন্ত্রের প্রাধান্য প্রতিরােধের লক্ষ্যে একাধিক উদ্যোগ নেন।
[1] ধর্মসংস্কার আন্দোলনে সমর্থন: চার্চতন্ত্র ও পােপতন্ত্রের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা ইংল্যান্ডের ধর্মসংস্কার আন্দোলনের প্রতি ক্রমওয়েল সমর্থন জানান। শুধু তাই নয়, তিনি উলসির বিপরীত নীতি গ্রহণের মাধ্যমে ইংল্যান্ডের ধর্মসংস্কার আন্দোলনকে সফল করার উদ্যোগ নেন। পার্লামেন্টের আইন মেনে তিনি পােপের প্রাধান্য হ্রাস করেন। ইংল্যান্ডের চার্চগুলিতে পােপের প্রাধান্য বাতিল করে তিনি রাজার প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করেন।
[2] অ্যাক্ট অফ সুপ্রিমেসি আইন: টমাস ক্রমওয়েল। ইংল্যান্ডের মুখ্য ধর্মীয় আধিকারিকের পদ গ্রহণ করেন। এই পদে থাকাকালীন তিনি ‘অ্যাক্ট অব সুপ্রিমেসি’ নামে এক আইন পাস করান (১৫৩৪ খ্রি.)। এই আইনের দ্বারা তিনি ইংল্যান্ডের চার্চগুলিকে রাজার নিয়ন্ত্রণে আনার উদ্যোগ নেন। পাশাপাশি চার্চের যাবতীয় সম্পত্তি রাজার অধীনে আনা হয়।
[3] মঠগুলির বাজেয়াপ্তকরণ ও নিয়ন্ত্রণ: ক্রমওয়েল রাষ্ট্রীয় তরফে ইংল্যান্ডের ছােটো ছােটো মঠগুলি বাজেয়াপ্ত করার উদ্যোগ নেন, আর বড়াে মঠগুলির ওপররাষ্ট্রের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন। এভাবে তিনি রাজকোশের আর্থিক আয় বৃদ্ধি করেন।