“অনেক, অনেক দূরে আছে মেঘ-মদির মহুয়ার দেশ,”- সেই মহুয়ার দেশ কবি মনকে প্রভাবিত করেছে কিভাবে তা কবিতা অবলম্বনে ব্যাখ্যা করো?

যান্ত্রিক সভ্যতা নগর জীবনের সর্ব সৌন্দর্যকে ধ্বংস করেছে। অত্যধিক শিল্পায়নের ধোঁয়া গ্রাস করেছে নির্মল আকাশকে। নগর থেকে পালিয়ে তাই কবি যেতে চান স্বপ্নের মহুয়ার দেশ। মহুয়া ফুল ও মহুয়ার গন্ধে পেতে চান প্রকৃতির উজ্জ্বল মদিরতার রূপ। যেভাবে ক্লান্তি উপশমের জন্য কবি আকুল হয়ে উঠেছেন ‘মহুয়ার দেশ’ এ পৌঁছানোর জন্য তাতে ‘মহুয়ার দেশ’ হয়ে উঠেছে কবির স্বপ্নের অকালপুরী।

মহুয়ার দেশের প্রতি আকর্ষণ

আলোচ্য কবিতায় কবির শহর জীবনের যে চিত্র এঁকেছেন, তা কবি মনে সৌন্দর্যের বাতাবরণ নির্মাণ করলে ও শহরে দূষিত পরিবেশের তার বিস্তার সুদূরপ্রসারী হতে পারেনি। অস্তগামী সূর্যের স্বর্ণালীর আলোর আভায় যখন জল তোলে প্রতিবিম্বত হয়ে ‘উজ্জ্বল আলোর স্তম্ভ’ আর সেই আলোই যখন জলের উপর ভাসমান ফেনায় লাগিয়ে দেয় আগুনের রং, তখন শহরের সেই সন্ধ্যা কালীন সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে যায় কবি মন। কিন্তু নিমিষেই ‘ধোঁয়ার বঙ্কিম নিঃশ্বাস’ ‘শীতের দুঃস্বপ্নের মত’ কবির চেতনাকে চারপাশ থেকে চেপে ধরে, কবির বেঁচে থাকাকে বিস্বাদ করে তোলে। ফলত দূরের মহুয়ার দেশ কবির গাছে হয়ে দাঁড়ায় অপ্রতিরোধ্য আকর্ষণের কেন্দ্রস্থল। কেন-না কবি জানেন-

“সমস্তক্ষণ সেখানে পথের দু’ধারে ছায়া ফেলে দেবদারুর দীর্ঘ রহস্য, আর দূর সমুদ্রে দীর্ঘশ্বাস রাতের নির্জন নিঃসঙ্গ তাকে আলোরিত করে।”

দূষণমুক্ত প্রকৃতির এই স্নেহময় আবেশ ক্লান্ত অবসন্ন শহুরে কবির তাই পরমাকাঙ্ক্ষিত আশ্রয়স্থল হয়ে দাঁড়ায়। অনেক, দূরে এই ‘মেঘ-মদির মহুয়ার দেশ’ কবির অসহ্য ক্লান্তির উপর শান্তির বারিবর্ষণ করবে বলে কবি বিশ্বাস করেন। তাই তার মন মুক্তির আস্বা পায়না এই মহুয়ার দেশে।

দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা সমস্ত অধ্যায় অনুযায়ী তার সব প্রশ্নের উত্তর

Leave a Comment