‘ভারতবর্ষ’ গল্পে গল্পকার সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের যে বক্তব্য উন্মোচিত হয়েছে, তা নিজের ভাষায় বিশ্লেষণ করো?

ভূমিকা

কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ তার ‘ভারতবর্ষ’ গল্পে সাম্প্রদায়িকতা নামক ব্যাধিটি সমাজের পক্ষে যে কতখানি ক্ষতিকারক তা তুলে ধরেছে। গল্পে দেখা যায়, সাধারণ মানুষের কাছে আচারসর্বস্বতাই হল ধর্মের একমাত্র পরিচয়বাহক।

লেখকের সমাজসচেতনতা

স্বাধীনতা পরবর্তী ভারতবর্ষের যে সমাজ চিত্র লেখক তুলে ধরেছে তাতে দেখা যাচ্ছে মানুষ নিজের সম্প্রদায়, নিজের ধর্ম নিয়ে যতটা সহিষ্ণু; পরম ধর্ম নিয়ে ততটাই অহিষ্ণু। লেখক তার ‘ভারতবর্ষ’ গল্পে মনুষত্বই মানুষের একমাত্র ধর্ম হওয়া উচিত এই চিন্তা ধারায় তুলে ধরতে চেয়েছেন।

কাহিনী বিন্যাস

গল্পের শুরুতেই দেখা যায়-পিছে রাস্তার বাঁকে গড়ে উঠেছে একটি বাজার। বাজারের ঠিক পিছনেই একটি গ্রাম, বাঁশ বনে ঢাকা, বিদ্যুৎ হীন। এই ছোট বাজারটি কে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয় গোটা গল্প। গ্রামে সেইরকম কোন বিনোদন নেই। তাই যখন ‘পৌষে বাদলা’ পরিবর্তিত হয় ‘ফাঁপি’তে, তখন গ্রামের মানুষজন চায়ের দোকানে জড়ো হয় ‘সভ্যতার ছোট উনোনের পাশে হাত পা সেঁকে নিতে।’ক্রমে সেখানে এসে হাজির হয় এক থুথ্থুরে রাক্ষুসে বুড়ি এবং পরবর্তী সময় দেখা যায় বট তোলার খোলা আশ্রয় তার মৃত্যু হয়েছে বলে ধরে নিয়ে হিন্দু-মুসলমানের ধর্মগত হানাহানি শুরু হয়ে যায়, বুড়ির মৃতদেহের অধিকার কে কেন্দ্র করে। কিন্তু দেখা যায় বুড়ি আদৌ মারা যায়নি। সে এই ধর্মের সংকীর্ণতার অন্ধকারে ডুবে থাকা মানুষগুলোকে অগ্রহ করে দূরে মিলিয়ে যায়।

অন্তর্নিহিত সত্য

ধর্মের প্রতি মানুষের অন্ধ মোহ সমাজের অসারতার দিকটিই প্রকট করে। যে কারণে ধর্মের ধ্বজাধারী গ্রামবাসীদের কাছে বৃদ্ধা বেঁচে আছে না মারা গেছে তার থেকেও বড় হয়ে ওঠে বৃদ্ধার ধর্মীয় পরিচয়। এখানেই ধর্মের অন্ধ মহির কাছে পরাজিত হয় মানবিকতা। এই সমাজ সভ্যতার আলোকে আলোক প্রাপ্ত হলেও সংকীর্ণ ধর্মন্ধতার অন্ধকার পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেনি-এই কথায় লেখক তুলে ধরতে চেয়েছেন ‘ভারতবর্ষ’ গল্পের মাধ্যমে।

দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা সমস্ত অধ্যায় অনুযায়ী তার সব প্রশ্নের উত্তর

Leave a Comment