মাধ্যমিক শিক্ষা
মাধ্যমিক শিক্ষা হল প্রাথমিক শিক্ষার পর এমন একটি পাঁচ-ছয় বছরের পূর্ণাঙ্গ শিক্ষার স্তর যা শিক্ষার্থীকে গুণগত ও সমাজজীবনে অভিযােজনের জন্য উপযুক্ত যোগ্যতা অর্জনে সাহায্য করে এবং উচ্চশিক্ষা গ্রহণে উপযােগী করে তোলে।
মাধ্যমিক শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য
মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরটি শিক্ষার্থীদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই স্তরের লক্ষ্য হল শিক্ষার্থীকে চরিত্রবান, ন্যায়পরায়ণ, সুনাগরিক, জীবিকা অর্জনে সক্ষম এবং সার্থকভাবে সামাজিক অভিযােজনে সমর্থ করে তােলা। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তােলা, তাদের মধ্যে নৈতিক এবং আধ্যাত্মিক মূল্যবােধ গড়ে তােলা ইত্যাদিও এই শিক্ষার উদ্দেশ্য। নীচে এই শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্যগুলি উল্লেখ করা হল-
(১) সর্বাঙ্গীণ বিকাশে সহায়তা: প্রচলিত মাধ্যমিক শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য হল শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীণ বিকাশে সহায়তা করা।
(২) নাগরিকতার বিকাশে সহায়তা: শিক্ষার্থীকে গণতান্ত্রিক সমাজের দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করা এই শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য।
(৩) সামাজিক সংস্কৃতি বিকাশে সহায়তা: মাধ্যমিক শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীর মধ্যে সামাজিক মূল্যবােধ ও সামাজিক গুণাবলির বিকাশ ঘটানাে।
(৪) বৃত্তিশিক্ষায় সহায়তা: মাধ্যমিক শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য হল শিক্ষার্থীর আগ্রহ ও ক্ষমতা অনুযায়ী তাকে বৃত্তিশিক্ষায় শিক্ষিত করা।
(৫) স্বাস্থ্যাভ্যাস গঠনে সহায়তা: শিক্ষার্থীর মধ্যে স্বাস্থ্যাভ্যাস গঠন করা মাধ্যমিক শিক্ষার আর-একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য।
(৬) সৃজনশীলতার বিকাশে সহায়তা: মাধ্যমিক শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীর সৃজনশীল ক্ষমতার বিকাশে সহায়তা করা।
(৭) বিজ্ঞানসম্মত মনোভাব গঠনে সহায়তা: মাধ্যমিক শিক্ষার আর-একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হল শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রগতিশীল, বিজ্ঞানসম্মত মনােভাব গড়ে তােলা।
(৮) নৈতিক ও আধ্যাত্মিক বিকাশে সহায়তা: মাধ্যমিক শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হল শিক্ষার্থীর নৈতিক এবং আধ্যাত্মিক বিকাশে সহায়তা করা।
মাধ্যমিক শিক্ষার পাঠক্রম
পশ্চিমবঙ্গে মাধ্যমিক শিক্ষার স্তর বলতে নবম এবং দশম শ্রেণির শিক্ষাকে বােঝায়। এই স্তরের পাঠক্রমকে প্রধানত চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়—ভাষা বিভাগ, বিজ্ঞান বিভাগ, ভারত ও তার জনগণ সম্পর্কীয় বিভাগ বা সমাজবিজ্ঞান বিভাগ এবং অতিরিক্ত বা ঐচ্ছিক বিষয়ের বিভাগ।
(১) ভাষা বিভাগ: পশ্চিমবঙ্গে মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে ভাষা বিভাগে পূর্বে ত্রিভাষা সূত্র অনুসৃত হলেও, বর্তমানে প্রথম ভাষা হিসেবে মাতৃভাষা এবং দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে ইংরেজি, ক্ষেত্রবিশেষে হিন্দি পড়ানাে হয়।
(২) বিজ্ঞান বিভাগ: মাধ্যমিক স্তরে বিজ্ঞান বিভাগে গণিত, প্রাকৃতিক বিজ্ঞান এবং জীবনবিজ্ঞান পড়ানাে হয়।
(৩) সমাজবিজ্ঞান বিভাগ: এই বিভাগে ইতিহাস এবং ভূগােল—এই দুটি বিষয়ের দ্বারা ভারত এবং তার জনগণ সম্পর্কে শিক্ষাদান করা হয়।
(৪) ঐচ্ছিক বিষয়ের বিভাগ: পশ্চিমবঙ্গে মাধ্যমিক শিক্ষায় একাধিক বিষয়কে ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে রাখা হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা এর মধ্য থেকে যেকোনাে একটি বিষয় বেছে নিতে পারে। কোঠারি কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান মাধ্যমিক স্তরের পাঠক্রমটি প্রণয়ন করা হলেও এটি শিক্ষার্থীদের প্রকৃত অর্থে কর্মভিত্তিক অভিজ্ঞতা অর্জনে সাহায্য করতে পারে না।