বাল্যকালের পর্যায় বলতে কী বােঝায়? বাল্যকালের বৈশিষ্ট্যগুলি আলােচনা করাে। এই স্তরের শিশুদের শিক্ষার উদ্দেশ্যগুলি বর্ণনা করাে।

বাল্যকালের পর্যায়

বাল্যকালের সময়সীমা সম্পর্কে মনােবিদগণের মধ্যে মতভেদ দেখা যায়। পিকুনাসের মতে আড়াই বছর থেকে বারাে বছর পর্যন্ত বাল্যকালের ব্যাপ্তি। বাল্যকালকে তিনি তিনটি পর্যায়ে ভাগ করেছেন প্রারম্ভিক কাল (আড়াই বছর থেকে পাঁচ বছর) মধ্যবাল্য (পাঁচ বছর থেকে নয় বছর) এবং প্রান্তীয় বাল্য (নয় বছর থেকে বারাে বছর)। আবার জোন্স শিশুর পাঁচ বছর থেকে বারাে বছরকে বাল্যকাল বলে অভিহিত করেছেন।

বাল্যকালের বিকাশগত বৈশিষ্ট্য

ছয় বছর থেকে বারাে বছর পর্যন্ত বয়সকে বাল্যকাল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এই কালের বিকাশগত বৈশিষ্ট্যগুলি হল一

(১) দৈহিক বিকাশগত বৈশিষ্ট্য: বাল্যে দৈহিক বিকাশের হার শৈশবের দৈহিক বিকাশের হারের থেকে তুলনামূলকভাবে কম থাকে। তবে দৈহিক সমস্ত দিকেই পরিবর্তন দেখা যায়। এই স্তরে মেয়েদের দৈহিক বিকাশ ছেলেদের দৈহিক বিকাশের তুলনায় একটু বেশি হয়। এই স্তরে ছেলেমেয়েদের মস্তিষ্কের বিকাশ প্রায় পূর্ণতা লাভ করে।

(২) মানসিক বিকাশগত বৈশিষ্ট্য: বাল্যে মানসিক বিকাশ খুবই দ্রুত হয়। এই সময় ভাষার বিকাশের ফলে ছেলেমেয়েদের শব্দভাণ্ডার বাড়ে, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়, লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়। শিশু তার নিজের এবং বহির্বিশ্বের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারে। বাল্যের একেবারে শেষের দিকে লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ এবং মনােযােগ বৃদ্ধি পায়।

(৩) প্রাক্ষোভিক বিকাশগত বৈশিষ্ট্য: বাল্যের শেষ দিকে সামাজিক পরিস্থিতি অনুযায়ী আবেগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা জন্মায়। আবেগের বিকাশ আগের মতো সামগ্রিক হয় না, তা নির্দিষ্ট রূপ পায়। উল্লাস, আনন্দ, ভালােবাসা, কৌতূহল, বিষাদ এই বয়সের ছেলেমেয়েদের মধ্যে দেখা যায়।

(৪) সামাজিক বিকাশগত বৈশিষ্ট্য: এই সময়েই সমবয়সি বালকবালিকাদের মধ্যে দল তৈরি হয় এবং গৃহপরিবেশের বাইরে তাদের মধ্যে মেলামেশা, বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। এই দল (Peer group) সামাজিকীকরণে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা হিসেবে কাজ করে। এই বয়সেই দলগত চেতনার বিকাশ হয় ও আত্মকেন্দ্রিকতা হ্রাস পায়। সহযােগিতার মানসিকতা বৃদ্ধি পায়। এই বয়সের ছেলেমেয়েদের মধ্যে নৈতিক মূল্যবােধ গড়ে ওঠে।

এই বৈশিষ্ট্যগুলির পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, শৈশবের তুলনায় বাল্যের বিকাশগত বৈশিষ্ট্য অনেক বেশি সংযত এবং সংহত। জীবনবিকাশের স্তরের এই পর্যায়টি তাই মানবজীবনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য

বাল্যকালে শিশু যে প্রথাগত শিক্ষা লাভ করে থাকে তা প্রাথমিক শিক্ষা নামে পরিচিত। প্রাথমিক শিক্ষা হল ব্যক্তির পক্ষে ন্যূনতম আবশ্যিক শিক্ষা যা তাকে গণতন্ত্রের উপযুক্ত নাগরিক হয়ে উঠতে সাহায্য করে। প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্যগুলি হল一

(১) দৈহিক বিকাশ: শৈশবে শিশুর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অপরিণত অবস্থায় থাকে। শরীরচর্চা, ব্যায়াম, খেলাধুলা প্রভৃতি নানান ধরনের সঞ্চালনমূলক কাজের মাধ্যমে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েদের স্বাস্থ্য গড়ে তােলার চেষ্টা করা হয়।

(২) মানসিক বিকাশ: প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য হল ছেলেমেয়েদের মধ্যে চিন্তডাশক্তি, বিচারক্ষমতা, সৃজনশীলতা, কল্পনাশক্তি প্রভৃতির যথাযথ বিকাশে সাহায্য করা।

(৩) স্বাস্থ্য সচেতনতার বিকাশ: প্রাথমিক শিক্ষার আর-একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হল ছেলেমেয়েদের মধ্যে স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত সু-অভ্যাস গড়ে তােলা। যেমন-প্রতিদিন দাঁতমাজা, দাঁত দিয়ে নখ না কাটা, যত্রতত্র থুতু না ফেলা ইত্যাদি।

(৪) সামাজিক বিকাশ: নানান সামাজিক সেবামূলক কাজের মধ্য দিয়ে ছেলেমেয়েদের মধ্যে সামাজিক কর্তব্যবােধ জাগিয়ে তােলা হল প্রাথমিক শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য।

(৫) প্রক্ষোভিক বিকাশ: প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য হল শিশুর নানারকম প্রক্ষোভজনিত আচরণের যথাযথ বিকাশে সহায়তা করা।

(৬) জ্ঞানের বিকাশ: প্রাথমিক শিক্ষার আর-একটি উদ্দেশ্য হল ছেলেমেয়েদের বিজ্ঞান, গণিত, ভাষা, ইতিহাস, ভূগােল প্রভৃতি বিষয়ে জ্ঞানার্জনে সাহায্য করা।

(৭) নাগরিকতার শিক্ষা: শিক্ষার্থীদের মধ্যে নাগরিক জীবনের দায়িত্ব এবং কর্তব্য সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা গড়ে তােলা হল প্রাথমিক শিক্ষার অপর একটি উদ্দেশ্য।

(৮) শ্রমের মর্যাদা বিষয়ে শিক্ষা: ‘কোনো কাজই ছােটো নয়’ শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই বােধ জাগিয়ে তােলা প্রাথমিক শিক্ষার আর-একটি উদ্দেশ্য।

প্রাথমিক শিক্ষা যেহেতু জাতির উন্নয়নের মূলভিত্তি সেজন্য এই শিক্ষার উদ্দেশ্যপূরণে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া প্রয়ােজন। এরই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মধ্যে জাতীয় ভাবধারার প্রয়ােজনীয় পুপপুলির যথাযথ বিকাশসাধন এই শিক্ষার উদ্দেশ্য।

Education সব প্রশ্ন উত্তর (একাদশ শ্রেণীর)

Leave a Comment