ক্ষয়চক্রের বিভিন্ন পর্যায়
আমেরিকার ভূবিজ্ঞানী উইলিয়াম মরিস ডেভিস 1899 খ্রিস্টাব্দে ক্ষয়চক্রের ধারণাটি প্রথম প্রকাশ করেন। উত্থিত কোনাে ভূমিভাগ ক্ষয়কার্যের ফলে প্রাথমিক অবস্থা থেকে নির্দিষ্ট ক্রম অনুসারে কতকগুলি অন্তর্বর্তী পর্যায়ের মধ্যে দিয়ে অন্তিম পর্যায়ে পৌঁছােনােকে ক্ষয়চক্র বলে। ভূপৃষ্ঠের প্রায় 70 শতাংশ ভূমির ভাস্কর্য নদীর ক্ষয়কার্যের মাধ্যমে সাধিত হয় বলে নদীর এই ক্ষয়চক্রকে স্বাভাবিক ক্ষয়চক্র বলা হয়। ক্ষয়চক্রকে যৌবন, পরিণত ও বার্ধক্য – এই তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা হয়।
(১) যৌবন অবস্থা : ভূমির উত্থান পর্ব শেষ হওয়ার পর ভূমিরূপের যৌবন অবস্থার সূচনা হয়। এই মুহূর্ত থেকেই নদী ক্ষয় করতে শুরু করে। এই পর্যায়ে ভূমিভাগ যেসব বৈশিষ্ট্য লাভ করে সেগুলি হল一
- এই পর্যায়ে ভূমির প্রারম্ভিক ঢাল অনুযায়ী অনুগামী নদী ও উপনদীর সৃষ্টি হয়। উপনদীগুলি মস্তক ক্ষয়ের মাধ্যমে প্রসারিত হয়ে বৃক্ষরূপী জলনির্গম প্রণালী গড়ে তােলে।
- সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ভূমির উচ্চতা সর্বাধিক হওয়ায় নদী নিম্নক্ষয়ের মাধ্যমে গভীর ও সংকীর্ণ ‘v’ আকৃতির উপত্যকা গঠন করে।
- এই পর্যায়ে প্লাবনভূমি সাধারণত সৃষ্টি হয় না। তবে প্রধান নদী উপত্যকায় উত্থানকালের চিহ্ন থাকতে পারে।
(২) পরিণত অবস্থা : উখিত ভূমিভাগের প্রারম্ভিক চিহ্নসমূহ যখন একেবারে বিলুপ্ত হয়, তখন থেকেই পরিণত অবস্থার শুরু। এই পর্যায়ের বিশিষ্ট ভূমিরূপগুলি হল一
- এই পর্যায়ের প্রথম ভাগে জলবিভাজিকার শীর্ষদেশ সুতীক্ষ্ণ হয়। জলবিভাজিকাগুলি শৈলশিরার ন্যায় অবস্থান করে।
- নদীর নিম্নক্ষয় অপেক্ষা পার্শ্বক্ষয় বেশি হয় বলে নদী সঞ্চয়ের মাধ্যমে প্লাবনভূমি গড়ে তােলে।
- প্রশস্ত প্লাবনভূমিতে নদীবাঁকের বিস্তার বেশি হয় এবং প্লাবনভূমিতে নদীগুলি সহজেই তাদের স্থান পরিবর্তন করতে পারে।
(৩) বার্ধক্য অবস্থা : উপত্যকার নিম্নক্ষয় বন্ধ হওয়ার সময়কাল থেকে বার্ধক্য অবস্থার শুরু। এই পর্যায়ে নিম্নক্ষয় বন্ধ হওয়ায় স্থানীয় উচ্চতা হ্রাস পায়। এই পর্যায়ের বৈশিষ্ট্য一
- উপত্যকাগুলি অত্যন্ত প্রশস্ত এবং মৃদু ঢালযুক্ত হয়।
- নদীবাক বলয়ের চেয়ে প্লাবনভূমির বিস্তার বেশি হয়।
- এই পর্যায়ে নদীর সংখ্যা পরিণত পর্যায়ের থেকে কম হলেও যৌবন পর্যায়ের থেকে বেশি।
- প্লাবনভূমিতে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ, জলাভূমি প্রভৃতি লক্ষণীয়।