তেলেনাপােতা আবিষ্কার গল্পে কথক ও যামিনীর শেষ সাক্ষাৎ | তেলেনাপােতা আবিষ্কার ছােটোগল্প অবলম্বনে গল্পকথকের সঙ্গে যামিনীর শেষ সাক্ষাৎকারটি বর্ণনা

তখন হয়তাে জানতে পারবেন যে, প্রসঙ্গ উল্লেখ করে উদ্ধৃত অংশে কী জানতে পারার কথা বলা হয়েছে লেখাে

প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘তেলেনাপােতা আবিষ্কার’ ছোট গল্প দেখা যায়, গল্পকথক তেলেনাপােতার পানাপুকুরে সারাদিন বসে থেকেও একটিও মাছ ধরতে অসমর্থ হন। এরপর ব্যর্থ হয়ে তিনি ঘরে ফিরে এসে দেখেন যে, তাঁর মাছ ধরার অসফলতার কাহিনি ইতিমধ্যেই তার বন্ধুদের মধ্যে রাষ্ট্র হয়ে গেছে।

তার দুই বন্ধুই জেনে গেছে যে, ডুবে যাওয়া ফাতনা ভেসে ওঠার পর গল্পকথক যখন ছিপে টান দেন, তখন দেখা যায়, বড়শিতে মাছ তাে নেই-ই, এমনকি টোপও নেই। ঘুমকাতুরে বন্ধু এবং পানরসিক বন্ধু মণি এই ব্যাপার নিয়ে কথকের সঙ্গে উপহাস করলে তিনি ব্যথিত হয়ে বন্ধুদের কাছে জানতে চাইলেন যে, কোথা থেকে তারা সে খবর পেয়েছেন।

মণিবাবু তখন কথককে জানান যে, অন্য কেউ নয়, স্বয়ং যামিনীই তা জানিয়েছে। এরপর যামিনীর পরিচয় জিজ্ঞাসা করার পর কথক প্রশ্নপত্রে উদ্ধৃত উক্তিটি করেন। কথক অতঃপর বুঝতে পারেন যে, পুকুরঘাটে যে অবাস্তব করুণনয়না’ মেয়েটিকে তিনি দেখেছিলেন, সে তাঁর পানরসিক বন্ধু মণির জ্ঞাতিবােন যামিনী।

তেলেনাপােতা আবিষ্কার ছােটোগল্প অবলম্বনে গল্পকথকের সঙ্গে যামিনীর শেষ সাক্ষাৎকারটি বর্ণনা করাে।

প্রেমেন্দ্র মিত্রের তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পের গল্পকথকের সঙ্গে যামিনীর পঞ্চম তথা শেষ বার সাক্ষাৎকার ঘটে তেলেনাপােতা থেকে কথকদের ফিরে যাওয়ার মুহূর্তে।

মণিবাবুদের পােড়ােবাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকা গােরুর গাড়িতে গল্পকথকরা উঠে পড়ার পর যখন গাড়িটি ছাড়বার উপক্রম করছিল, তখন যামিনী গল্পকথকের দিকে করুণ চোখ মেলে বলেছিল, তার ছিপটিপ সবকিছুই যে পড়ে রইল।

শুনে গল্পকথক হেসে বলেন যে, সেসব সেখানেই থাকুক। তেলেনাপােতায় এসে প্রথমবার মাছ শিকারে ব্যর্থ হয়েছেন বলে, বারবার তেলেনাপােতার মাছ কিন্তু মােটেও তাকে ফাঁকি দিতে পারবে না। কথাগুলি শুনে যামিনী কিন্তু মুখ ফিরিয়ে নেয় না। যামিনীর মুখের দিকে তাকিয়ে কথকের মনে হল, তার দু-চোখের মধ্য থেকে মধুময় কৃতজ্ঞতার হাসি শরতের সাদা মেঘের মতাে কথকের মনকে জুড়িয়ে দিয়ে যেন ভেসে যাচ্ছে।

শেষ সাক্ষাৎকারটির মধ্য দিয়ে কথকের প্রতি যামিনীর পূর্বরাগ এবং তার বুদ্ধিদীপ্ত মনােভাবের পরিচয় পাওয়া যায়। আর গল্পকথকের প্রেমময়তা এবং অসাধারণ বাকচাতুর্য লক্ষ করা যায়।

তেলেনাপােতা আবিষ্কার গল্পে কথক ও যামিনীর শেষ সাক্ষাৎ-এর আগে কোথায়, কী পরিস্থিতিতে দেখা হয়েছিল?

প্রেমেন্দ্র মিত্রের তেলেনাপােতা আবিষ্কার গল্পে কথক ও যামিনীর শেষ সাক্ষাৎ-এর আগে, অর্থাৎ চতুর্থবার যামিনী এবং গল্পকথকের সাক্ষাৎ ঘটে যামিনীর মায়ের দোতলার ঘরে। মণিবাবুর সঙ্গে যামিনীর মার ঘরে ঢুকে গল্পকথক দেখতে পান যে, ঘর জুড়ে থাকা একটি ভাঙা তত্তাপােশে ছেঁড়া-কাথা-জড়ানাে কঙ্কালসার চেহারার যামিনীর মা শুয়ে রয়েছেন।

চৌকির একপাশে পাথরের প্রতিমার মতাে দাঁড়িয়ে রয়েছে যামিনী। দুই বন্ধুর পায়ের শব্দ শুনে বৃদ্ধা মনে করলেন যে, যামিনী যার বাগদত্তা, সেই নিরঞ্জনই নিশ্চিতভাবে এসেছে। বন্ধু মণি ও যামিনীকে স্তম্ভিত করে দিয়ে গল্পকথক এরপর নিরঞ্জনের ভূমিকায় অভিনয় করে যামিনীর অসহায়, অন্ধ, বৃদ্ধা মাকে যামিনীকে বিবাহ করার ব্যাপারে আশ্বাস দিয়ে আসেন।

এরপর দুশ্চিন্তামুক্ত যামিনীর মা নিরঞ্জন ভেবে গল্পকথককে আরও অনেক কথা বলে হাঁপাতে থাকলে কথক যামিনীর দিকে তাকান। এইসময় বৃদ্ধা আরও জানান যে, যামিনীকে নিয়ে তিনি সুখী হবেন এবং প্রসঙ্গক্রমে যামিনীর অনেক প্রশংসাও করেন।

বৃদ্ধার সেই আকুতিভরা কথাগুলি শুনে কথক কোনােদিকে তাকাতে পারেন না, পাছে চোখের জল তিনি গােপন করতে ব্যর্থ হন। তাই বৃদ্ধা এরপর যখন আবার তাকে প্রশ্ন করেন, “যামিনীকে তুই নিবি ত বাবা”, তখন গল্পকথক স্পষ্টভাবেই তাঁকে কথা দেন যে, ‘আমি তােমায় কথা দিচ্ছি মাসিমা। আমার কথার নড়চড় হবে না।’

তেলেনাপােতা আবিষ্কার গল্পের গল্পকথক তেলেনাপােতার পানাপুকুরে ছিপ ফেলে যখন বসে ছিলেন, তখন বিভিন্ন প্রাণী কীভাবে তাকে বিরক্ত করেছিল?

প্রখ্যাত সাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্রের তেলেনাপােতা আবিষ্কার গল্পে দেখা যায়, গল্পকথক তেলেনাপােতার পানাপুকুরে বড়শি ফেলে ঘাটে একাকী বসেছিলেন মাছ ধরার অপেক্ষায়।

বেলা বাড়লে তিনি দেখেন যে, পুকুরটির অন্য পাড়ে নুয়ে পড়া একটি বাঁশের ডগায় বসে থাকা একটি মাছরাঙা পাখি মাঝেমাঝেই পুকুরের জলে ঝাঁপিয়ে পড়ছে এবং ঠোটে মাছ নিয়ে সার্থকতার আনন্দে আবার বাঁশের মাথায় ফিরে যাচ্ছে।

মাছরাঙাটির আনন্দ ও উচ্ছ্বাস দেখে গল্পকথকের মনে হয় যে, তাঁর মাছ ধরার ক্ষেত্রে ব্যর্থতার কারণেই মাছরাঙাটি যেন তাকে পরিহাস ও বিদ্রুপ করার জন্য এমনটা করছে।

একটা মোটা, লম্বা সাপ গল্পকথককে বিস্মিত করে দিয়ে ভাঙা ঘাটটির কোনাে ফাটল থেকে বেরিয়ে ধীর-স্থির ভাবে সাঁতরে পুকুরের ওপারে গিয়ে ওঠে। দুটি ফড়িং যেন প্রতিযােগিতা করে তাদের পাতলা কাচের মতাে পাখা নেড়ে গল্পকথকের বড়শির ফাতনার ওপর বসার চেষ্টা করতে থাকে। ঘুঘু পাখি মাঝে মাঝেই তার উদাস করে দেওয়া সুরে ডাক দিয়ে গল্পকথককে আনমনা করে দিতে থাকে। এভাবেই বিভিন্ন প্রাণী পানাপুকুরে ছিপ ফেলে মাছ ধরার সময় কথককে বিরক্ত করেছিল।

বাংলা সব প্রশ্ন উত্তর (একাদশ শ্রেণি)

Leave a Comment