তেলেনাপােতা আবিষ্কার গল্প অবলম্বনে গল্পকথকের রাত্রিকালীন ছাদ-ভ্রমণের অভিজ্ঞতা | তেলেনাপােতা আবিষ্কার গল্পের গল্পকথকদের গােরুর গাড়িতে করে তেলেনাপােতা যাওয়ার বর্ণনা

তেলেনাপােতা আবিষ্কার গল্পের গল্পকথকদের গােরুর গাড়িতে করে তেলেনাপােতা যাওয়ার বর্ণনা দাও

প্রেমেন্দ্র মিত্রের তেলেনাপােতা আবিষ্কার গল্পে গল্পের কথক এবং তার দুই বন্ধু কলকাতা থেকে ঘণ্টা-দুই বাসযাত্রা করে একটি নির্দিষ্ট বাসস্টপে নামেন।

নালার পাশে দাঁড়িয়ে বেশ কিছুক্ষণ কেটে যাওয়ার পর পাশের জঙ্গলের মধ্যে থেকে ভেসে আসা এক অপরূপ শ্রুতিবিস্ময়কর আওয়াজ শােনার পর প্রতীক্ষা চঞ্চল গল্পকথকরা দেখতে পেলেন, জঙ্গলের ভেতর থেকে শ্লথ, শান্ত ও দোলায়মান গতিতে একটি গােরুর গাড়ি তাঁদেরই উদ্দেশে এগিয়ে আসছে।

গােরুর গাড়িটি সামনে এলে গল্পকথকরা তিনজন সেই গােরুর গাড়ির অপ্রশস্ত ছই-এর ভিতর কোনােক্রমে গাদাগাদি করে বসলেন। তারপর যে পথে এসেছিল, সেই জঙ্গলে ঘেরা পথেই গােরুর গাড়িটি ফিরে চলতে শুরু করলে গল্পকথকরা বিস্মিত হয়ে দেখেন যে, গাড়িটি সেই ঘনান্ধকার দুর্ভেদ্য জঙ্গলে সুড়ঙ্গের মতাে অপরিসর পথ একটু একটু করে কেটে বের করে নিয়ে ধীরগতিতে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে।

গাড়ির ঝাকুনিতে গল্পকথকের সঙ্গে তাঁর বন্ধুদের অনিচ্ছাকৃত সংঘর্ষও ঘটতে লাগল মাঝেমধ্যেই। এরপর কথক ক্রমশ অনুভব করলেন যে, চারপাশের জমাট অন্ধকারে তার চৈতন্যের শেষ দ্বীপটিও বুঝি ডুবে গেল। শেষে ক্যানেস্তারা পেটানাের শব্দে চেতনা ফিরে পেলে কথক ছইয়ের ভেতর থেকেই আকাশের তারা দেখতে পেলেন এবং গাড়ােয়ানের কাছ থেকে জানতে পারেন যে, ক্যানেস্তারা বাজিয়ে সে আসলে চিতাবাঘ তাড়াচ্ছে।

ছই-এর মধ্যে বসেই কৃয়পক্ষের বিলম্বিত, ক্ষয়প্রাপ্ত চাদের আলােয় গল্পকথক দেখতে পেলেন যে, চলমান গােরুর গাড়ির দু-পাশ দিয়ে ক্রমশ সরে যাচ্ছে পুরােনাে মন্দির এবং প্রাসাদের বিভিন্ন ভগ্নাংশ—যেমন স্তম্ভ, দেউড়ির খিলান ইত্যাদি। দু-তিনবার বাঁক ঘুরে গােরুর গাড়িটি অবশেষে একটি জীর্ণ অট্টালিকার সামনে এসে কথকদের নামিয়ে দেয়।

তেলেনাপােতা আবিষ্কার গল্প অবলম্বনে গল্পকথকদের তেলেনাপােতা যাওয়ার পথে গােরুর গাড়িতে ওঠার আগে পর্যন্ত যাত্রার বিবরণ দাও।

কোনাে এক শনি বা মঙ্গলবার, সম্ভবত মঙ্গলবার, বিকেলের পড়ন্ত রােদে প্রেমেন্দ্র মিত্রের তলেনাপােতা আবিষ্কার গল্পের গল্পকথক দুই বন্ধুসহ উঠে বসেন জিনিসপত্র-মানুষে গাদাগাদি একটি বাসে। ভাদ্র মাসের পচা গরমে প্রায় দুঘণ্টা ধরে তিনি পথের ঝাকুনি এবং মানুষের ঠেলা খেয়ে চললেন।

তারপর পথের ধুলাে ও শরীরের ঘামে আঠালাে হয়ে যাওয়া দেহ নিয়ে হঠাৎই নেমে পড়লেন একটা বাসস্টপে। একটি জল-জমা নীচু জায়গার ওপর দিয়ে যে সেতু চলে গেছে, সামনের সেই সেতুতেই রাস্তাটা গিয়ে মিশেছে।

বাসটি সেই সেতুর ওপর দিয়ে বৈচিত্র্যপূর্ণ ঘর্ঘর শব্দ করতে করতে পথের ওধারে অদৃশ্য হতেই গল্পকথক তাকিয়ে দেখলেন যে, সূর্য অস্ত না গেলেও চারদিক জঙ্গলে ভরা বলে অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে আছে, কোথাও কোনাে মানুষজনের চিহ্ন পর্যন্ত নেই।

সেই অন্ধকারে মশাদের আক্রমণে বিরক্ত হয়ে গল্পকথক মনে মনে ভাবা শুরু করলেন যে, বড়াে রাস্তায় চলে গিয়ে কলকাতায় ফেরার কোনাে বাস ধরবেন। ঠিক এমন সময়েই সেই জঙ্গলের ভেতরকার সরু রাস্তার শেষপ্রান্ত থেকে অপূর্ব এবং বিস্ময়কর একটা শব্দ তিনি শুনতে পেলেন। শব্দটা শুনে প্রতীক্ষায় চঞ্চল হয়ে তাঁরা প্রথমে অস্পষ্ট অন্ধকারে একটা সূক্ষ্ম আলাে দুলতে দেখেন। তারপর দেখা যায় একটা গােরুর গাড়ি জঙ্গলের ভেতর থেকে শ্লথ, শান্ত, দোলায়মান গতিতে তাঁদের দিকে এগিয়ে আসছে।

তেলেনাপােতায় জীর্ণ প্রাসাদের অপেক্ষাকৃত বাসযােগ্য ঘরটিতে কীভাবে রাত কেটেছিল গল্পকথকদের?

প্রেমেন্দ্র মিত্রের তেলেনাপােতা আবিষ্কার গল্পে জীর্ণ প্রাসাদের অপেক্ষাকৃত বাসযােগ্য একটি ঘরে কথকদের নিয়ে আসা গাড়ােয়ান একটি ভাঙা লণ্ঠন নিয়ে এসে বসিয়ে দেয় এবং এক কলশি জল দিয়ে চলে যায়। এরপর যখন মেঝেতে শতরঞ্জি পাতা হয়, তখন গল্পকথকের ঘুমকাতুরে বন্ধুটি সেখানে নিজেকে সঁপে দিয়ে কিছুক্ষণ পরই নাক ডাকতে শুরু করেন। অপর বন্ধু মণি পানপাত্রে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে নিমজ্জিত করে দেন।

ঘরে প্রবেশ করার পর সেখানকার ঝুল, জঞ্জাল, ধুলাে এবং একপ্রকার ভ্যাপসা গন্ধ অনুভব করে কথক বুঝতে পারেন যে, বহুকাল পরে তারাই আবার মনুষ্যজাতির প্রতিনিধি হিসেবে সেই ঘরটিতে প্রবেশ করেছেন। তা ছাড়া ঘরটি এতটাই জীর্ণ ছিল যে, একটু-আধটু হাঁটাচলা করলেই ঘরটির ছাদ ও দেওয়াল থেকে ভাঙা প্লাস্টার নীচে খসে পড়ছিল ঘরের অধিষ্ঠাত্রী রুষ্ট আত্মার অভিশাপের মতাে।

ঘরটিতে বাসা বাঁধা দু-তিনটে চামচিকে ওড়াউড়ি শুরু করে দেয়। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কথকদের আক্রমণ করতে শুরু করে অ্যানােফিলিস মশা। এরপর ঘরের গুমােট গরম থেকে মুক্তির জন্য প্রায় ভেঙে যাওয়া একটি সিঁড়ি বেয়ে টর্চ-হাতে ছাদে ওঠেন গল্পকথক। বেশ কিছুক্ষণ ছাদে কাটিয়ে দিয়ে তারপর সাবধানে নীচে নেমে এসে গল্পকথক ঘুমন্ত দুই বন্ধুর পাশে একটু জায়গা করে নিয়ে শুয়ে পড়েন। এ ভাবেই সে-ঘরে রাত কেটেছিল তাদের।

তেলেনাপােতা আবিষ্কার গল্প অবলম্বনে গল্পকথকের রাত্রিকালীন ছাদ-ভ্রমণের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করাে।

প্রেমেন্দ্র মিত্রের তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পে তেলেনাপােতায় রাতে কথক মশার কামড় এবং গুমােট গরম থেকে রক্ষা পেতে ঘুমন্ত বন্ধু-দুজনকে রেখে টর্চ হাতে, ভাঙা সিঁড়ি দিয়ে বাড়ির ছাদে উঠে যান।

ছাদে উঠে গল্পকথক দেখেন যে, ভাঙা আলিসা এবং ছাদের মাঝখানের ফাটলগুলিতে এমনভাবে গাছ গজিয়ে উঠেছে যে, তাদের শিকড় ভেতরে ভেতরে জীর্ণ প্রাসাদটিকে ধ্বংসের শেষ প্রান্তে নিয়ে চলেছে। এসব সত্ত্বেও কৃয়পক্ষের ম্লান আলােয় চারিদিকটা কেমন যেন অপূর্ব মােহময় হয়ে উঠেছে।

কথকের মনে হল, মরণ-নিদ্রায়-আচ্ছন্ন সেই ছলনাপুরীর কোনো গােপন ঘরে যেন কারারুদ্ধ রাজকুমারী সােনার কাঠি ও রুপাের কাঠি পাশে নিয়ে যুগ যুগান্তরের গভীর ঘুমে অচৈতন্য হয়ে আছেন।

সেই প্রাসাদেরই পাশের সরু রাস্তার ওপারের জীর্ণ বাড়ির একটি জানলায় একটি আলােকরেখা দেখতে পান কথক। তারপর সেই আলােকরেখা অনুসরণ করে কথক দেখেন যে, আলাের সেই রেখা আড়াল করে একটি রহস্যময় অশরীরী মূর্তি সেখানে এসে দাঁড়ায়।

গভীর রাতে, জানলার পাশে দাঁড়ানাে ছায়ামূর্তিটি কার, কেনই বা সেই নারীর চোখে ঘুম নেই-এসব প্রশ্নে ভাবিত হন কথক। কিছুক্ষণ পরই অবশ্য তাঁর অনুভব হয় যে, ইতিপূর্বে দেখা দৃশ্যটা হয়তাে বা তাঁর দৃষ্টিভ্রম। কেননা, একটু পরেই জানলার পাশে দাঁড়ানাে ছায়ামূর্তিটি অন্তর্হিত হয় এবং আলাের ক্ষীণ রেখাটিও মুছে যায়।

বাংলা সব প্রশ্ন উত্তর (একাদশ শ্রেণি)

Leave a Comment