মানবমনে উদ্ভূত নানান প্রশ্নের সমাধানসূত্র হল জ্ঞানের অন্বেষণ। প্রকৃত জ্ঞান মানুষের জিজ্ঞাসার উত্তর দেয় এবং সকল দিকের বিকাশ ঘটায়। শিক্ষা গ্রহণের সময় শিক্ষার্থীকে যদি কর্ম অভিজ্ঞতা বা সামাজিক কাজে অংশ নেওয়ার সুযােগ করে দেওয়া হয় তাহলে কাজের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়, অন্তর্নিহিত ক্ষমতার বিকাশ ঘটে। জ্ঞানার্জনের পাশাপাশি প্রতিটি শিক্ষার্থীকে কাজে দক্ষ হয়ে উঠতে হয়। শিক্ষার্থীকে এই দুই বিষয়ে পারদর্শী করতে বিদ্যালয় যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
জ্ঞানার্জনের শিক্ষা বাস্তবিকীকরণে বিদ্যালয়ের কর্মসূচি
শিক্ষার উদ্দেশ্যপূরণে প্রথম স্তম্ভ হল জ্ঞানার্জনের শিক্ষা। জ্ঞানার্জনের শিক্ষা বাস্তবিকীকরণে বিদ্যালয়ে যেসকল কর্মসূচি আয়ােজন করতে হবে তা হলㅡ
(১) সাধারণ ধর্মীয় শিক্ষা বাস্তবের সঙ্গে সামঞ্জস্যকরণ : জ্ঞানার্জনের জন্য সাধারণ ধর্মীয় শিক্ষা বিশেষ প্রয়ােজন। এই শিক্ষা ব্যক্তিকে জীবনব্যাপী অভিযােজনে সাহায্য করে, দৈনন্দিন সমস্যাসমাধানে সাহায্য করে। এই সাধারণধর্মী শিক্ষাকে বাস্তবের সঙ্গে সামঞ্জস্যবিধান করতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীর সাধারণ জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি বাস্তবের সঙ্গেও খাপ খাইয়ে নিতে পারে। তাই বিদ্যালয়ের কর্মসূচিতে বিভিন্ন সমস্যা সমাধান মূলক কর্মসূচির ব্যবস্থা রাখা প্রয়ােজন।
(২) জ্ঞানের মৌলিক উপাদানগুলির অনুশীলন : জ্ঞানের বিভিন্ন মৌলিক উপাদানগুলি হল স্মৃতি, মানসিক ক্ষমতা, মনােযােগ ইত্যাদি। এই উপাদানগুলির অনুশীলনের ব্যবস্থা করতে হবে। উপাদানগুলির অনুশীলনের মাধ্যমে ‘জ্ঞানার্জনের জন্য শিক্ষার উদ্দেশ্য পূরণ সম্ভব হবে। এজন্য বিদ্যালয়ে বিভিন্ন কর্মসূচির আয়ােজন করতে হবে। যেমন—ধ্যান, যােগ ইত্যাদি। চিন্তার ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য আবিষ্কার পদ্ধতি, সমস্যা সমাধান মূলক পদ্ধতি আরােহী ও অবরােহী পদ্ধতির উপর গুরুত্ব আরােপ করতে হবে।
(৩) স্মৃতিশক্তি ও চিন্তা শক্তির বিকাশসাধন : শিক্ষার উদ্দেশ্য হবে শিক্ষার্থীর স্মৃতিশক্তির বিকাশ ঘটানাে। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাজ হবে শিক্ষার্থীদের বিমূর্ত বিষয়ে চিন্তনের প্রতি আগ্রহী করে তােলা।
(৪) মনঃসংযোগ করতে শেখা : মনঃসংযােগ কাজটি শিক্ষার্থী যত গভীরভাবে করবে ততই জীবনে সাফল্য আসবে।
(৫) কৌতূহল বৃদ্ধি : জ্ঞানার্জনের জন্য শিক্ষার উদ্দেশ্যপূরণে শিক্ষার্থীর কৌতূহল বৃদ্ধি করতে হবে। আগ্রহ বা কৌতূহল হল জ্ঞানলাভের সােপান। তাই শিখনের কাজই হবে শিক্ষার্থীর মধ্যে বিভিন্ন পদ্ধতির সাহায্য নিয়ে আগ্রহ বৃদ্ধি করা।
কর্মের জন্য শিক্ষা বাস্তবিকীকরণে বিদ্যালয়ের কর্মসূচি
(১) সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি কর্মসূচি : কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিদ্যালয়ে। বিভিন্নরকম সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির ব্যবস্থা রাখতে হবে। বিশেষ করে, কর্মশিক্ষা ও উৎপাদনাত্মক কার্যাবলি।
(২) আগ্রহ ও সামর্থ্য ভিত্তিক কর্মসূচি : শিক্ষার্থীরা যাতে নিজেদের আগ্রহ ও সামর্থ্য অনুযায়ী কর্মী নির্বাচনের সুযােগ পায়, তার ব্যবস্থা করে দিতে হবে।
(৩) সৃজনাত্মক কর্মের বিকাশ : শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৃজনাত্মক প্রতিভার বিকাশে বিদ্যালয়ে বিভিন্ন ব্যবস্থা রাখতে হবে।
(৪) বৃত্তি শিক্ষার উপর গুরুত্ব প্রদান : সাধারণ ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি যাতে শিক্ষার্থীরা বৃত্তি শিক্ষার প্রতি আগ্রহী হয়, সে ব্যাপারে বিদ্যালয়ের ব্যবস্থা নিতে হবে। এক্ষেত্রে থাকবে হাতের কাজ, মাটির কাজ, কাঠের কাজ সহযােগে নতুন জিনিস তৈরির কাজ, যা শেখানাের উদ্যোগ নেবে বিদ্যালয়।
(৫) ব্যবহারিক কাজের গুরুত্ব প্রদান : শিক্ষার্থীরা যাতে বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে চলতে পারে তাই তাত্ত্বিক শিক্ষার পাশাপাশি ব্যাবহারিক কাজে উৎসাহ সৃষ্টি করতে হবে এবং সেই উপযোগী কর্মসূচির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
(৬) জীবনব্যাপী শিক্ষার সংগঠিত পরিকাঠামো : বিদ্যালয়ের পরিবেশের কাঠামাে হবে সংগঠিত, যা শিক্ষার্থীদের কর্মের প্রতি উৎসাহ প্রদান করবে।
(৭) তাত্ত্বিক শিক্ষা ও কর্মশিক্ষার সমন্বয়সাধন : তাত্ত্বিক শিক্ষা ও কর্মশিক্ষা যাতে সমান গুরুত্ব পায় সেই ব্যবস্থা করতে হবে।
কেবলমাত্র পাঠ্যপুস্তকের মধ্যে শিক্ষাব্যবস্থাকে সীমাবদ্ধ না রেখে সামাজিক বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীর জ্ঞানের বিকাশ ঘটাতে হবে।