শৈশবে শিশুর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের বিশৃঙ্খল আচরণ দেখা। এসব আচরণ গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- নেতিবাচক মনোভাব, অবাধ্যতা ও একগুয়েমি এবং স্কুল-পালানো।
নেতিবাচক মনােভাব, অবাধ্যতা ও একগুয়েমি
নেতিবাচক মনোভাব, অবাধ্যতা ও একগুঁয়েমি— এসব আচরণকে সমস্যামুলক বিশৃঙ্খল আচরণ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অনেক শিশু আছে যাদের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব লক্ষ্য করা যায়। শুধুমাত্র তারা যে স্কুলে শিক্ষকদের কথা শোনে না তা নয়, বাড়িতে অভিভাবকদের প্রতি এরকম মানসিকতা দেখা যায়। এরা গুরুজনদের কথা শোনে না , তাদের পরামর্শে গুরুত্ব আরোপ করে না, যা বলা হয় সর্বদা তার উল্টো দিকে যাওয়ার মানসিকতা লক্ষ্য করা যায়, এরা খুব অস্থির প্রকৃতির হয়, একে নেতিবাচক মনোভাব বা অবাধ্যতা বলা হয়। এই প্রকৃতির ছেলে মেয়েরা ভীষণ জেদি হয়। ভালো-মন্দ বিচার করে না, নিজেদের যেটা ইচ্ছা হয় সেটা তারা করবেই, বােঝালেও বােঝে না, কোনো রকম অনুরোধ করলেও তাদের কিছু এসে যায় না, তাদেরকে একগুঁয়েমি স্বভাব বলে।
নেতিবাচক মনােভাব, অবাধ্যতা ও একগুয়েমি আচরণের কারণ
(১) পারিবারিক সমস্যা: পিতা-মাতা বা অভিভাবকদের অবহেলা, পিতা-মাতার মধ্যে সম্পর্কের অভাব—এই সকল শিশুরা ভালোবাসা ও নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। এই সমস্ত কারণে এদের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব একগুঁয়েমি স্বভাব দেখা যায়।
(২) পক্ষপাতিত্ব : বিদ্যালয়ে শিক্ষকের অবহেলা, পক্ষপাতমূলক আচরণের ফলে শিশুর মধ্যে এই ধরনের স্বভাব তৈরি হয়।
(৩) অতিরিক্ত সমালোচনা : শিশুর কাজে প্রশংসা না করে যদি বারবার সমালােচনা ও তিরস্কার করা হয় তাহলে শিশুর মধ্যে অপরাধমূলক আচরণ লক্ষ করা যায়।
(৪) অধিক অনুশাসন : অনেকসময় অধিক নিয়মে রাখলে বা অতিরিক্ত শাসন করলে ও শাস্তি পেলে তাদের মধ্যে অবাধ্যতা ও একগুঁয়েমি আচরণ লক্ষ করা যায়।
(৫) একাকিত্ব : একাকিত্ব থেকে তারা জেদি ও অবাধ্য হয়।
(৬) অভিভাবকহীন : শিক্ষার্থীর তথা শিশুরা একা একা বড় হলে তারা বড়া দের কথা শুনতে চায় না।
নেতিবাচক মনােভাব, অবাধ্যতা ও একগুয়েমি প্রতিকারের উপায়
শিশুর ইতিবাচক মনোভাব, একগুঁয়েমি দূর করার জন্য অভিভাবক, শিক্ষক সকলকেই যত্নবান হতে হবে। প্রতিকারের উপায় গুলো হল –
(১) সন্তানদের সময় দেওয়া : অভিভাবকদের উচিত সন্তানদের সঙ্গে বেশি করে সময় কাটান, তাদের খেলার সঙ্গী হওয়া, অবহেলা না করা।
(২) পক্ষপাত শূন্যতা : শিক্ষকদের আচরণ যেন পক্ষপাত শূন্য হয়। তাদের আচরণ যেন উৎসাহমূলক হয়। সকলের প্রতি সমান মনোযোগী হয়।
(৩) যথাযথ নির্দেশনা : বিদ্যালয়ে যথাযথ নির্দেশনা ও পরামর্শদানের ব্যবস্থা করা উচিৎ।
(৪) প্রত্যাশার সীমাবদ্ধতা : ক্ষমতা ও সামর্থ্য অনুযায়ী বিদ্যার্থীদের থেকে প্রত্যাশা করা উচিৎ।
স্কুল-পালানোর কারণ
নির্দিষ্ট সময়ের আগে স্কুলে কর্তৃপক্ষ অনুমতি না নিয়ে স্কুলত্যাগকে বলে স্কুল-পালানাে। বারবার ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে এটি অপরাধমূলক আচরণের পর্যায়ে পড়ে।
(১) অভিযোজনে অক্ষম : বিদ্যালয়ের পরিবেশের সঙ্গে সঙ্গতির অভাব।
(২) আকর্ষণীয় : পঠনপাঠনের প্রতি আকর্ষণ কম।
(৩) পাঠদান পদ্ধতি : একঘেয়েমি শিক্ষণ পদ্ধতি ভালো না লাগা।
(৪) শিক্ষকের আচরণ : শিক্ষকের কঠোর শাসন, পড়া তৈরি না হলে কঠোর শাস্তি।
(৫) অবাঞ্ছিত কাজে লিপ্ত : ক্লাসে সহপাঠীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব না হওয়া সহপাঠীদের উপহাস, সিনেমা যাওয়া, ক্লাসে পড়া তৈরি না করা, অবাঞ্ছিত কাজ ইত্যাদি।
(৬) বিদ্যালয়ের নিয়ম নীতি : বিদ্যালয়ের নিয়ম নীতি, শৃঙ্খলার সঙ্গে অভিযোজন করতে না পারা ইত্যাদি।
স্কুল-পালানোর প্রতিকার
(১) মনোবিজ্ঞানসম্মত : পঠন পাঠন কে আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে।
(২) শিক্ষণ পদ্ধতি : শিক্ষণ পদ্ধতির বৈচিত্র্য আনা তত্ত্বগত বিষয়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্যবহারিক পদ্ধতিতে শিক্ষাদান করতে হবে।
(৩) শিক্ষকের আচরণ : শিক্ষক কঠোর শাসন পরিত্যাগ করবেন।
(৪) নির্দেশনা ও পরামর্শদানের : বিদ্যালয়ের নিয়ম নীতি ও শৃঙ্খলার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা ও পরামর্শদানের ব্যবস্থা করবে।
(৫) আনন্দদায়ক পরিবেশ : বিদ্যালয় পরিবেশ হতে হবে আনন্দদায়ক, যা শিক্ষার্থীদের ধরে রাখবে।
(৬) শিক্ষা সহায়ক উপকরণ : শিক্ষক মহাশয় যেমন শিক্ষার্থীদের বক্তব্য মনােযােগ দিয়ে শুনবেন ঠিক তেমনি শিক্ষা-সহায়ক উপকরণ সহযোগে শ্রেণির শিক্ষণ কে আকর্ষণীয় করে তুলবেন।