১৯৯১ খ্রিস্টাব্দের পর ঠান্ডা লড়াই পরবর্তী দুনিয়ায় মার্কিনি আধিপত্যের আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে বোঝাতে ‘একমেরুকরণ’ কথাটি ব্যবহার করা হয়। সাধারণভাবে এর অর্থ হল আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় একটিমাত্র মেরুর
উপস্থিতি। পন্ডিতদের মতে, ‘একমেরুকরণ’ হল এমন এক রাজনৈতিক পরিবেশ যেখানে বহুকেন্দ্রিকতা বা বহুত্ববাদের কোনো জায়গা নেই। সারা বিশ্বের রাজনৈতিক ব্যবস্থাটি একটিমাত্র কেন্দ্র থেকে পরিচালিত হয়। এককথায় একমেরুকরণের ধারণায় আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে একটিমাত্র মহাশক্তিধর রাষ্ট্র। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের একটি অভিধানে (The Penguin Dictionary of International Relations) একমেব্রুকরণের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলা হয়েছে, ‘একমেরুকরণ হল এমন এক ধরনের কাঠামোগত ব্যবস্থা যেখানে একটিমাত্র মেরু অথবা একটিমাত্র মেরু নিয়ন্ত্রণকারীর আধিপত্য বিদ্যমান’ (Unipolarity is a type of system or structure with one pole or a polar actor being identified as predominant) |
১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে সোভিয়েতের পতনের পর ঠান্ডা লড়াইয়ের অবসান ঘটে, জন্ম হয় একমেরুকরণের। আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার ভরকেন্দ্র একক শক্তিধর রাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অধীনে স্থানান্তরিত হয়। ঠান্ডা লড়াই পরবর্তী দুনিয়ায় একমাত্র মহাশক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা এখন একমেরুকেন্দ্রিক বা আমেরিকাকেন্দ্রিক। বর্তমানে বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রয়েছে একমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় একটিমাত্র অতিবৃহৎ শক্তির এই প্রাধান্য হল একমেরুকরণ। একমেরুকরণকে অবশ্য শুধুমাত্র সামরিক শক্তির প্রেক্ষাপটে দেখলে চলবে না। এটা ঠিক যে পৃথিবীর কোনো রাষ্ট্রই সামরিক ক্ষমতায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমকক্ষ নয়। তবে একমেরুকরণে সামরিক ক্ষমতাই যথেষ্ট নয়, তার সঙ্গে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উপাদানও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মার্কিনি বহুজাতিক সংস্থা বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলি বর্তমানে বিশ্ববাণিজ্যের সিংহভাগ নিজেদের দখলে রেখেছে। একক বৃহৎ শক্তি হিসেবে নিজের প্রাধান্য বজায় রাখতে এর গুরুত্বও কম নয়। সব মিলিয়ে বলা যায় ঠান্ডা লড়াইমুক্ত বর্তমান দুনিয়ার বাস্তবতা ছিল দ্বিমেরুকরণ থেকে একমেব্লকরণে উত্তরণ।