রাওলাট সত্যাগ্রহ কি? জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের পটভূমি উল্লেখ করো?

রাওলাট সত্যাগ্রহ

গান্ধীজী এক সময় ভারতের ব্রিটিশ শাসনকে ঈশ্বরের আশীর্বাদ বলে মনে করলেও কুখ্যাত রাওলাট আইন সুপারিশ গুলি কংগ্রেসের উদীয়মান নেতা মহাত্মা গান্ধীকে বিস্মিত করে। এই আইনের পরিপ্রেক্ষিতে গান্ধীজীর ব্রিটিশ শাসনকে শয়তানবাদ বলে অবহিত করেন। ডক্টর তারা চাঁদের মতে, গান্ধীজীর মনের এই পরিবর্তন ভারতের সাম্রাজ্যের নৈতিক ভিত্তি কে দুর্বল করে দিয়েছিল। তিনি এই আইনের বিরুদ্ধে তীব্র সত্যাগ্রহ আন্দোলন গড়ে তোলে। এ আন্দোলন রাওলাট সত্যাগ্রহ নামে পরিচিত।

১. প্রস্তুতি

প্রথম দিকে হোমরুল লীগের কিছু ধর্মীয় কয়েকটি পন্থি গোষ্ঠী সমর্থন নিয়ে গান্ধীজীর রাওলাট সত্যাগ্রহের শামিল হন। অহিংস্য উপায়ে এবং শান্তিপূর্ণভাবে আইন অমান্য করে কারাবরণ করা ছিল রাওলাট সত্যাগ্রহের প্রধান কর্ম প্রথা। মার্চ এপ্রিলের মধ্যে তিনি দিল্লি, বোম্বাই, এলাহাবাদ, লক্ষ্ণৌ ও দক্ষিণ ভারতে বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করে আন্দোলনের সমর্থনে ব্যাপক প্রচার চালান। এই উদ্দেশ্যে বিভিন্ন প্রচার পুস্তিকা ও প্রকাশিত হয়।

২. কংগ্রেসের উদ্যোগ

রাওলাট সত্যাগ্রহের মাধ্যমে গান্ধীজি জাতীয় কংগ্রেসকে প্রত্যক্ষ ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে শামিল করেন। কংগ্রেস এই আন্দোলনকে শহরে, গ্রামে, শিক্ষিত, অশিক্ষিত, ধনী ও দরিদ্র প্রভৃতি সকল স্তরের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়। এভাবে কংগ্রেস তার দুর্বলতা কাটিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে আবার সক্রিয় হয়ে ওঠে।

৩. সত্যাগ্রহ সভা

রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর উদ্দেশ্যে গান্ধীজীর সভাপতিত্বে সত্যাগ্রহ সভা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং রাওলাট সত্যাগ্রহ শুরু হয়। এর সদর দপ্তর প্রতিষ্ঠিত হয় বোম্বাই শহরে।

৪. ধর্মঘট

গান্ধীজিকে ডাকে ৬ এপ্রিল ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে সারা দেশে অভুতপূর্ব ও স্বতঃস্ফূর্ত ধর্মঘট পালিত হয়। এটিই ছিল প্রথম সর্বভারতীয় ধর্মঘট। দিল্লিতে পুলিশের গুলিতে ৮ জন নিহত ও প্রায় ১০০ জন আহত হলে আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে। এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদের দিল্লি অন্তত সাতজন অচল থাকে। ১০ এপ্রিল পুলিশ গান্ধীজিকে গ্রেফতার করলে দেশ বিক্ষোভে জ্বলে ওঠে।

৫. মুসলিমদের ভূমিকা

মুসলিম সম্প্রদায়ের একটি বড় অংশ রাওলাট সত্যাগ্রহের শামিল হয়। জাফর আলী খান, কবি মুহাম্মদ ইকবাল, যুব নেতা আনসারি প্রমদ মুসলিম নেতৃত্ব মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে রাওলাট সত্যাগ্রহের প্রসার ঘটান। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে সারা দেশে এত তীব্র আন্দোলন সাথে ও সরকার কিন্তু ও রাওলাট আইন প্রত্যাহার করেনি।

জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের পটভূমি

বিডি সরকার ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে তীব্র দমন মূলক রাহুল আইন পাস করলে এই আইনের বিরুদ্ধে পাঞ্জাবে প্রতিবাদ আন্দোলন ভয়াবহ আকার ধারণ করে। পাঞ্জাবের রাওলাট বিরোধী আন্দোলনের সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য ও মর্মান্তিক ঘটনা ছিল ১৩ এপ্রিল ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে জালিয়ানওয়ালাবাগের মাঠে একটি শান্তিপূর্ণ জমায়েতে ইংরেজ পুলিশে নির্বাচনে গুলি গুলি চালান এবং এর ফলে অন্তত দশ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। এই ভয়াবহ হত্যাকান্ডের পটভূমি নিচে উল্লেখ করা হলো-

১. পাঞ্জাবে নির্যাতন

জুলুম চালিয়ে যুদ্ধের জন্য পাঞ্জাব থেকে সেনা ও অর্থ সংগ্রহ, ‘গদর’ বিদ্রোহ প্রতিরোধে প্রভৃতি উদ্দেশ্যে সরকার পাঞ্জাবি তীব্র দমন পীড়ন চালালে পাঞ্জাব ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। পাঞ্জাবে কর্মচুক্তি সেনাদের সমাবেশ এই ক্ষোভ তীব্র হয়ে ওঠে। এই অবস্থায় পাঞ্জাবির গর্ভনর মাইকেল ও ডায়ারের অত্যাচারী শাসন পাঞ্জাবকে জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডে পরিণত করে।

২. রাওলাট আইন

ভারতীয়দের স্বাধীনতা ও অধিকার হরণ এবং আন্দোলন কঠোর হাতে দমনের উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ সরকার ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে নগ্ন সাম্রাজ্যবাদী আইন প্রবর্তন করে। এই নিষ্ঠুর দমন মুলক আইনের বিরুদ্ধে দেশের সর্বস্তরের মানুষ প্রতিবাদে সবর হয়ে ওঠে এই আইনের প্রতিবাদে পাঞ্জাব বারুদের স্তুপে পরিণত হয়।

৩. নেতৃবৃন্দের গ্রেফতার

‘পিপলস কমিটি’ নামে একটি গণসংগঠন লাহোর ও অমৃতসরে রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে। রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে পাঞ্জাবে ব্যাপক আন্দোলন ছড়িয়ে পড়লে আন্দোলন ও হিংসা নাট্য কর্মকাণ্ডের মদদ দেওয়ার অভিযোগ সরকার অমৃতসরের ২ নেতা ডঃ সৈফুদ্দিন কিচলু ও ডক্টর সত্য পালকে ১০ এপ্রিল ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে গ্রেফতার করে। ফলে পাঞ্জাবের সাধারণ মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়ে। এদিকে গান্ধীজিকে গ্রেফতারের খবর ছড়িয়ে পড়লে লাহোরের ব্যাপক ধর্মঘট শুরু হয়। পাঞ্জাবের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে জনতার খন্ড যুদ্ধ বেধে যায়। উত্তেজিত জনতা সরকারি অফিস আদাল, টেলিগ্রাফ লাইন ও অন্যান্য সরকারি সম্পত্তিতে আক্রমণ চালায়।

৪. অমৃতসরে সামরিক শাসন

রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন ক্রমশ জোরদার হয়ে উঠলে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইকেলে ও ডায়ারের নেতৃত্বে সামরিক বাহিনীর হাতে অমৃতসর শহরের শাসনভার তুলে দেওয়া হয়। এই বাহিনী অমৃতসরের সামরিক আইন জারি করে ১১ এপ্রিল শহরে জনসভা ও সমাবেশ নিষিদ্ধ করে।

উপসংহার

রাহুল আর সত্যাগ্রহ আন্দোলনের নেতৃত্বে দিয়ে গান্ধীজি স্বাধীনতা আন্দোলনের পাদপ্রদীপের সমান উঠে আসেন। ডক্টর রবীন্দ্র কুমার বলেন যে এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে গান্ধীজি প্রমাণ করেন যে, সর্বভারতীয় নেতৃত্ব গ্রহণের যোগ্যতা তার আছে। জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে ঘৃণাহুতি দেয়। অবশ্য রাওলাট সত্যাগ্রহের হিংসার প্রবেশ করলে গান্ধীজি মর্মাহত হয়ে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে জুলাই মাসে এই আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন।

উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস বইয়ের সমস্ত প্রশ্নের উত্তর

Leave a Comment