১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারত বর্ষ স্বাধীন লাভ করেন। স্বাধীনতা ফল হিসাবে ইংরেজরা প্রায় দুই শত বছর আমাদের দেশে শাসন, শোষণ ও নিপীড়ন করে রেখে গিয়েছে অসংখ্য খাদ্যহীন, স্বাস্থ্যহীন ও শিক্ষাহীন নারানারি। পরবর্তীকালে এই সমস্ত সমস্যার সমাধানের জন্য কমিশন বিভিন্ন ধরনের শিক্ষার লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য নিয়ে আসেন। তেমনি একটি হল কমিশনের উচ্চশিক্ষা লক্ষ্য আমরা পয়েন্ট আকারে নিচে আলোচনা করলাম।
১ নবভারত গঠন
যে সমাজ ব্যবস্থার মধ্যে বসবাসের উপযোগী নাগরিক আমরা গড়ে তুলতে চাই, যে মানব সভ্যতা আমরা আগামী দিন গড়ে তুলতে চাই অর্থাৎ, যে নবভারত গঠন করতে চাই তাতে ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির দায়িত্ব ও কর্তব্য অন্তত ব্যাপক হওয়া দরকার।
এইসব কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকে জীবন ও আদর্শ দেশের প্রশাসন ব্যবস্থা, রাজনীতি, শিল্প বাণিজ্য থেকে আলাদা করা চলবে না।
২ গণতান্ত্রিক চেতনার বিকাশ
গণতান্ত্রিক মূল ভিত্তি হলো ব্যাক্তি স্বাধীনতা, সাম্য, ভ্রাতৃত্ববোধ ও ন্যায়বিচার। সমাজের উপরি ব্যক্তির উন্নতি নির্ভর করে। তাই সামাজিক কল্যাণী শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য হওয়া দরকার। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ হল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের উপযোগী শিক্ষা প্রদান করা।
৩ নেতৃত্বের যোগ্যতা অর্জন
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য হলে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্বদানের সক্ষম ব্যক্তি গড়ে তোলা। দেশের সামগ্রিক অগ্রগতির জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত বৈজ্ঞানিক, শিল্পী, কারিগর, রাজনৈতিকবিদ, সাহিত্যিক প্রমুখ ও ব্যক্তিবর্গের বিশ্ববিদ্যালয়ের মৌলিক কাজ হল নেতৃত্বের প্রশিক্ষণ।
৪ কৃষ্টি সংরক্ষণ ও উন্নতি সাধন
উচ্চশিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য হল ভারতীয় সাংস্কৃতিক সম্পর্কের শিক্ষার্থীদের সচেতন করে তোলা এবং তার সঞ্চালন ঘটানো। বিশ্ববিদ্যালয় সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে চলার দায়িত্ব হওয়া উচিত শিক্ষকদের।
৫ চারিত্রিক উন্নতি সাধন
কোন সভ্যতার অগ্রগতি নির্ভর করে ব্যক্তির চারিত্রিক দৃঢ়তার উপর। চারিত্রিক উন্নতির জন্য শিক্ষার্থীরা যাতে বিশ্ব সাহিত্যে লিপিবদ্ধ থাকা অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করার সুযোগ পায়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়কে। বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীকে নবজীবনের শিক্ষাদান।
৬ জ্ঞানের রাজ্য অভিযান
বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল শুধুমাত্র তথ্য জ্ঞান দান নয়, নতুন নতুন জ্ঞানের রাজ্যে অভিযান করা। জ্ঞানের রাজ্যে দুঃসাহিক অভিযানের মাধ্যমে দেশকে আরো দ্রুত উন্নতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।
৭ প্রাকৃতিক ও মানব সম্পদের যথাযথ ব্যবহার
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য হলো জীবনের সর্বপ্রেক্ষা অগ্রগতির জন্য মানসিক ও মানব সম্পদের যথাযথ ব্যবহার করা, জাতির উন্নয়নের জন্য যে প্রাকৃতিক ও মানব শক্তি প্রয়োজন তা বিশ্ববিদ্যালয়কে ব্যবস্থা করতে হবে।
৮ সামাজিক ন্যায় বিচারের পথ সুগম
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার লক্ষ্য হবে ব্যক্তির নিজস্ব অন্তর্নিহিত সুপ্ত সম্পূর্ণ গুলির পরিপূর্ণ বিকাশের মধ্যে দিয়ে তাকে সামাজিক পরিবর্তন ও উন্নতির সক্রিয় মাধ্যম রূপে গড়ে তুলতে সাহায্য করা। এর মাধ্যমে সামাজিক ন্যায় বিচারের পথ সুগম হবে।
৯ বিজ্ঞান, কারিগরি ও কৃষিশিক্ষার প্রসার
জাতির অগ্রগতি ও আর্থিক উন্নতির জন্য আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যার যথাযথ প্রয়োগ একান্ত প্রয়োজন। তাই বিশ্ববিদ্যালয়কে উচ্চ মানের বিজ্ঞান ও কারিগরি বিদ্যার শিক্ষাদানের ওপর গুরুত্ব প্রদান করতে হবে।
১০ জাতীয় সংহতি ও আন্তর্জাতিকতাবাদের শিক্ষা
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার লক্ষ্য হলো , ভারতীয় সংস্কৃতির সাহিত্য সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সচেতন করার সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের অন্তর্নিহিত মূল সত্য, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, আন্তর্জাতিক সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান প্রকৃতি বিষয়ে শিক্ষা দিতে হবে।
১১ ধর্ম ও নীতি শিক্ষা
কমিশনার মতে, ভারতের ধর্ম শিক্ষা ছাড়া শিক্ষা সম্পন্ন হতে পারে না। শিক্ষার সঙ্গে ধর্মের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ধর্ম ও নীতি শিক্ষাদান অন্যতম লক্ষ্য।
তাই কমিশনের মতে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্তরের শিক্ষা বিভিন্ন জ্ঞানের ক্ষেত্রের মধ্যে সম্বন্ধসাধন করে। ছাত্রছাত্রীদের মনে প্রজ্ঞার উন্মেষের গুরুত্ব অলোপ করবে। শিক্ষা সম্পর্কে এই জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গি স্বাধীন ভারতীয় সমাজ ও ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব গঠনের সাহায্য করবে।