শাক্তসংগীত
অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে বাংলাদেশের শাক্ত সংগীত তথা শাক্ত পদাবলীর উদ্ভব ঘটে। এই ধারায় সংগীতের প্রকাশ পেয়েছে ভক্তি রসের আন্তরিকতা, ভক্তি হৃদয়ের সবুজ আকুতি। বাল্যলীলা, আগমনী, বিজয়া জগজ্জননীর রূপ, ভক্তের আকুতি, মনো দক্ষিণা, মাতৃ পূজা, সাধন শক্তি ইত্যাদি পর্যায়ে বিভক্ত শাক্ত সংগীত। এর দুটি ভাগ- উপমাসংগীত ও শ্যামা সংগীত। শ্যামা সংগীত গুলি সাধক মনের সরাসরি প্রকাশ সংগীতকে গীতি ধর্মী করে তুলেছে।
সাধক কবি রামপ্রসাদ
রামপ্রসাদ সেন ও কমলাকান্ত ভট্টাচার্য শাক্ত সংগীতের দুই বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। উপমা সংগীত ও শ্যামা সংগীত ধারা দুটির স্রষ্টা এবং শ্রেষ্ঠ কবি কবিনিরঞ্জন রামপ্রসাদ সেন একধারে ভক্ত, কবি এবং গায়ক। রামপ্রসাদের উপমা সঙ্গীতে ধর্ম ও ভক্তিভাব আবৃত হয়েছে, মেনকার সহজ-সরল স্নেহরসে। বাঙালি মায়ের চিরন্তরি হৃদয়াবেক ধরা পড়েছে রামপ্রসাদের আগমনী পর্যায়ের গানে-
“গিরি, এবার আমার উমা এলো, আর উমা পাঠাবো না বলে বলবে লোকে মন্দ, কারোর কথা শুনবো না।”
রামপ্রসাদের শ্যামা সংগীত গুলির মধ্যে তত্ত্বভাবনা ও ভক্তি সাধনার মেলবন্ধন ঘটেছে। রামপ্রসাদের গানে রাগ সংগীত ও দেশজ সুরের সমান্তরাল প্রবাহ লক্ষ্য করা যায়। কথাও সুরের সপ্রাণ আবেদনের রামপ্রসাদী গান আজও বাঙালির হৃদয়ের সম্পদ।
কবি কমলাকান্ত
শাক্ত সঙ্গীতের অন্য একজন শক্তিশালী কবি এবং গীতিকার কমলাকান্ত ভট্টাচার্য। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগ থেকে উনবিশ্বের শতকের প্রথম দশক পর্যন্ত গীতিচর্চা করেছেন কমলাকান্ত। টপার রিতির প্রভাব কমলাকান্তের শাক্ত সংগীত কে এক ধরনের বিশিষ্টতা দান করেছে। রামপ্রসাদ সেনের প্রভাব অস্বীকার করতে না পারলেও এই কোভিদ অধিকাংশ গানের মধ্যেই একটি নিজস্ব আন্তরিকতার সুর ধবনিত হয়েছে। জনপ্রিয়তা নিরিখের রামপ্রসাদের পরেই বাঙালির শ্রবণে কমলাকান্তের স্থান।
দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা সমস্ত অধ্যায় অনুযায়ী তার সব প্রশ্নের উত্তর