শিখনের সূত্রাবলী ও এর গুরুত্ব

থনডাইকের প্রচেষ্টা ও ভুলের শিখন কৌশলের ভিত্তিতে শিখনের আটটি সূত্রের কথা বলা হয়েছে যা নিম্নে আলোচনা করা হলো।

মুখ্য সূত্রাবলী

তিনটি মুখ্য সূত্রের কথা বলেছেন – (১) প্রস্তুতির সূত্র, (২) অনুশীলনের সূত্র (৩) ফললাভের সূত্র।

(১ )প্রস্তুতি সূত্র

ফোনটা শিখনের মুখ্যসূত্রে দৈহিক প্রস্তুতি কথা বলেছেন। তার মতে, উদ্দীপক ও তার প্রতিযোগী প্রতীকের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের জন্য ব্যাক্তি মধ্যে দৈহিক প্রস্তুতি থাকা প্রয়োজন। দৈহিক প্রস্তুতি থাকলে যে কোন ব্যক্তির পক্ষে কর্মসম্পাদন করা তৃপ্তি লাভ হবে। আর যদি এই প্রস্তুতি না থাকে তার কাজটি তার কাছে বিরক্তিকর মনে হবে।

থনডাইক মুখ্যসূত্রে দৈহিক প্রস্তুতি কথা বললেও গৌণ সূত্রে মানসিক প্রস্তুতির কথা বলেছেন। কারণ, মানসিক প্রস্তুতি ছাড়া কোন শিক্ষণ সম্ভব নয়।

শিক্ষা ক্ষেত্রে গুরুত্ব: শিখন নির্ভর করে শিক্ষার্থীদের দৈহিক ও মানুষ প্রস্তুতির ওপর। পাঠ্যদানের আগে শিক্ষক পাঠ সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয়ের অবতারণা করে শিক্ষার্থীর মানসিক প্রস্তুতি করতে পারেন। তিনি উপযুক্ত সময়ে প্রয়োজনীয় বিষয় উপস্থাপন করে শিখন প্রক্রিয়াকে সম্পন্ন করে তুলতে পারেন।

(২ )অনুশীলনের সূত্র

থনডাইকের মতে, শিখন পরিস্থিতিতে অন্যান্য অবস্থা অপরিবর্তিত রেখে কোন প্রতিক্রিয়ার মধ্যে যদি বারবার সংযোগ স্থাপিত হয়, তবে সেই সংযোগ দৃঢ় হয়। অন্যদিকে যদি কোনো উদ্দীপক ও প্রতিক্রিয়ের মধ্যে দীর্ঘদিন কোন সংযোগ স্থাপিত না হয় তবে সংযোগ দুর্বল হতে পারে। অর্থাৎ, এই সূত্রের মূল কথা হলো অনুশীলনের মাধ্যমে উদ্দীপক ও প্রতিক্রিয়ার সংযোগ কে দৃঢ় করা।

অনুশীলনের দুটি অংশ যথা –

(ক )অভ্যাসের সূত্র – উদ্দীপক ও প্রতিকার মধ্যে যখন সংযোগ সাধনযোগ্য বা যথার্থ বন্ধন তৈরি হয় এবং যদি অন্যান্য অবস্থা অপরিবর্তিত থাকে, তখন বন্ধন টি শক্তিশালী হয়। তাই একে বলা হয় অভ্যাসের সূত্র।

(খ) অন্ভ্যাসের সূত্র – যখন উদ্দীপক ও প্রতিক্রিয়ার মধ্যে সংশোধনযোগ্য বন্ধন দীর্ঘ সময় তৈরি হয়, তখন বন্ধন শক্তি ক্রমশ হ্রাস পায়। তাই একে বলা হয় অন্ভ্যাসের সূত্র।

শিক্ষা ক্ষেত্রে অনুশীলনের সূত্রের গুরুত্ব

শিক্ষাক্ষেত্রে অনুশীলন সূত্রে প্রয়োগ নিম্নে আলোচনা করা হলো –

(ক) কাজের মাধ্যমে অনুশীলন – বিদ্যালয়ে শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে শিক্ষাদানের সময় প্রত্যক্ষ প্রয়াগমূলক কাজের মধ্যে দিয়ে বিষয় অনুসরণের ব্যবস্থা করবেন।

যেমন – বিতর্ক সভা, শিক্ষামূলক ভ্রমণ ইত্যাদি।

(খ) বারবার চর্চা বা আলোচনা – শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক শিক্ষাদানের সময় জটিল বা নতুন বিষয়গুলি বারবার চর্চা বা একাধিকবার আলোচনা করবেন। যাতে আলোচনা যান্ত্রিক না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন।

(গ) জানা থেকে অজানা বিষয় যাওয়া – শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে শিক্ষাদানের সময় জানা থেকে অজানা বিষয়ে যাওয়ার নীতি অনুসরণ করবেন। শিক্ষার্থীকে এই নীতি অনুসরণ করে শিক্ষাদান করলে শিক্ষা গ্রহণে তারা অনেক বেশি আগ্রহী হবে।

(ঘ) ভুলত্রুটি পরিত্যাগ – আবহার সূত্রের মাধ্যমে ভুল অপ্রয়োজনীয় অংশগুলি যাতে প্রাথমিক পরিত্যক্ত হয় সেদিকে শিক্ষক বিশেষভাবে নজর রাখবেন।

(৩) ফললাভের সূত্র

থনডাইকের মতে, একটি উদ্দীপক ও প্রতিকার মধ্যে যে সংযোগ টি স্থাপিত হয় তা শিক্ষার্থীর কাছে তৃপ্ত হলে শিখন স্থায়ী হয়।

এক্ষেত্রে উদ্দীপক ও প্রতিক্রিয়ার যথাযথ সংযোগের ফল প্রাণীর পক্ষে তৃপ্তিদায়ক, যেহেতু বেড়ালটি দরজা খোলার কৌশলটি শিখে রাখলে এবং যেসব ভুল প্রতিক্রিয়ার জন্য সে খাদ্য লাভের অসমাপ্ত হয়েছিল সেগুলি ভুলে গেছে।

দ্বাদশ শ্রেণী শিক্ষাবিজ্ঞানের (education) সব প্রশ্ন উত্তর

প্রাচীন অনুবর্তন বলছে আমরা কি বুঝি?

প্যাভলবের প্রাচীন অনুবর্তন পরিবর্তন কৌশল ও তার পরীক্ষা

প্রাচীন অনুবর্তনের শর্তাবলী, নীতি ও গুরুত্ব?

অপারেট অনুবর্তন কি ও তার স্কিনার বক্সের পরীক্ষা

শিক্ষা ক্ষেত্রে অপারেন্ট অনুবর্তন এর বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব এবং পার্থক্য

প্রচেষ্টা ও ভুলের পরীক্ষা শিখন কৌশল থনডাইকের ভূমিকা

প্রচেষ্টা ও ভুলের তত্ত্বের শিক্ষাগত বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব

গৌণ সূত্রাবলী কি এবং তাদের বৈশিষ্ট্য

অন্তদৃষ্টি মূলক শিখন কৌশলে শিম্পাঞ্জলির পরীক্ষা ও সিদ্ধান্ত

অন্তদৃষ্টি মূলক শিখন এ শিক্ষার গুরুত্ব এবং পার্থক্য সমূহ

Leave a Comment