শিক্ষা ক্ষেত্রে অপারেন্ট অনুবর্তনের বৈশিষ্ট্য
অপারেন্ট অনুবর্তন এর শিখন কৌশল বিশ্লেষণ করলে যে সকল বৈশিষ্ট্যের সন্ধান পাওয়া যায় তা নিয়ে আলোচনা করা হলো।
১ প্রস্তুতি: অপারেন্ট অনুবর্তন এর জন্য পূর্ব প্রস্তুতি প্রয়োজন। এই পর্যায়ে প্রাণীর সম্ভাব্য আচরণ গুলিকে বিভিন্ন দিক থেকে সুবিন্যাসটা করা প্রয়োজন। পূর্ববর্তী আচরণ গুলি সুবিন্যাস্ত ঘটাতে না পারলে অপারেন্ট বা আচরণ সৃষ্টি হয় না।
স্কিনার তার পরীক্ষায় প্রথম দুটি পর্যায়ে ইঁদুরকে বক্সের মধ্যে ঢুকিয়ে পরীক্ষামূলক পরিস্থিতি সঙ্গে পরিচয় করিয়ে আচরণ সৃষ্টির জন্য প্রস্তুতি আনেন।
২ আকৃতি প্রদান: যে পরিস্থিতিতে প্রাণীর কাঙ্ক্ষিত আচরণ সম্প্রদানের জন্য পর্যায়কমে আচরণের শৃঙ্খলা তৈরি করে সেই পরিস্থিতিতে প্রাণীর আচরণের একটি প্রকৃতি দান করার চেষ্টা করা হয়। কে কে প্রকৃতি দান বলে।
স্কিনার প্রাণীর আচরণের কাঙ্ক্ষিত আকৃতি দান প্রসঙ্গে তিনটি মনোবৈজ্ঞানিক নীতির কথা উল্লেখ করেছেন তা হল –
(ক) সামান্যীকরণ: প্রাণী তার কোন একটি শিখন বা অভিজ্ঞতা পরবর্তী কোন শিখন এর ক্ষেত্রে কাজে লাগায় তখন তাকে সামান্যীকরণ বা সাধারনীকরণ বলে।
(a) উদ্দীপকের সামান্যীকরণ কোনো একটি উদ্দীপকের জন্য প্রাণী যে ধরনের আচরণ করে, সেই ধরনের অন্য কোন উদ্দীপকের সামান্যীকরণের ফলে এরকম প্রতিক্রিয়া সম্পাদন করে।
(b) প্রতিক্রিয়ার সামান্যীকরণ এক্ষেত্রে একটি অভিজ্ঞতার জন্য প্রাণী যেমন প্রতিক্রিয়া করেছে, ঠিক পরবর্তী কোনো কর্ম সম্পাদনের পূর্বে প্রতিক্রিয়া টিকে একইভাবে কাজে লাগায়।
(খ) প্রতিযোগী স্বভাব: বহুবিধ আচরণের মধ্যে সঠিক আচরণটি প্রাণী জানতে পারলে অন্য আচরনের সঙ্গে তার প্রতিযোগিতা আরম্ভ হয় এবং সঠিক প্রতিক্রিয়ার স্বাভাবিকই জয়লাভ করে।
(গ) খণ্ডাংশের আংশিক ধারাবাহিক শৃঙ্খল কন্ঠন: কোন কাঙ্ক্ষিত আচরণকে খন্ডাংশের মাধ্যমে শিখন ঘটাতে হলে প্রতিটি সঠিক আচরণ পরবর্তী আচরণের সঙ্গে শৃঙ্খলিত হয়ে থাকে। টুকরো টুকরো শিখনের শৃঙ্খলিত সামগ্রিক পূর্ণ শিখন।
(৩) শক্তিদায়ক সত্তা: আচরণ একবার সম্পাদিত হওয়ার পর, সে উদ্দীপক প্রাণীর চাহিদাকে পরিতৃপ্তি করতে পারে, তাই হলো শক্তিদায়ক সত্তা।
স্কিনার এর পরীক্ষায় খাদ্যবস্তু হলো শক্তি দায়ক সত্তা, খাদ্য প্রাপ্তির লিভারে চাপ দেওয়া, ইদুরটির আচরণের শক্তিকে বাড়িয়ে দিয়েছিল।
আবার অপরদিকে স্কিনারের শক্তিদায়ক সত্তাকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।
(a) ধনাত্মক শক্তিদায়ক সত্তা– যে উদ্দীপক আচরণের পুনরাবৃত্তিতে প্রাণীতে অনুপ্রাণিত করে তা হই হল ধনাত্মকীয় সত্তা।
যেমন – খাদ্য ক্ষুধার্থ ইঁদুরের কাছে ধনাত্মক শক্তিদায়ক সত্তা।
(b) ঋণাত্মক শক্তিদায়ক সত্তা– যে উদ্দীপকগুলি বিশেষ আচরণের পরিপ্রেক্ষিতে বিকল্প কোনো আচরণ সম্পাদনে প্রাণীকে শক্তি জোগায়, তাকে বলা হয় ঋণাত্মক শক্তি এক সত্তা।
যেমন- শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলে বিকল্প আচরণের স্বরূপ পড়ার সময় বাড়ি দেয়।
(c) শাস্তিমূলক শক্তি দায়ী সত্তা – যে উদ্দীপক অপারেন্ট বা আচরণের পুনরাবৃত্তিতে বাধা দান করে, তাকেই বলা হয় শাস্তি মূলক শক্তিদায়ক সত্তা।
৪ অবলুপ্তি: – যখন প্রতিক্রিয়া ও শক্তিদায়ক সত্তার মধ্যে সঠিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়, অপ্রয়োজনীয় বিষয়গুলি অবলুপ্তি ঘটে।
(৫) শক্তিদায়ক সত্তার সিডিউল:- অপারেন্ট অনুবর্তনের শক্তির এক সত্তার উপস্থাপনের ওপর প্রাণীর আচরণের স্থায়িত্ব নির্ভর করে। শক্তিদায়ক সত্তার প্রকৃতি অনুসারে তাকে তিনটি ভাগে ভাগ করেছেন।
(৬) অপারেন্ট শৃঙ্খল :- অপারেন্ট অনুবর্তনের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হলো এখানে কয়েকটি অপারেন্ট একটি শৃঙ্খল গঠনের মাধ্যমে একটি জটিল আচরণ সম্পাদন করতে সাহায্য করে। , তাই এই বৈশিষ্ট্যকে শৃঙ্খল রচনা প্রক্রিয়া বলা হয়।
শিক্ষা ক্ষেত্রে অপারেন্ট অনুবর্তন তত্ত্বের গুরুত্ব
বি. এফ. স্কিনারের অপারেন্ট অনুবর্তন এর তত্ত্বের মাধ্যমে শিশুর শিখন প্রক্রিয়াটিকে অনেক বেশি বিজ্ঞানসম্মত ভাবে বিশ্লেষণ করা হল। তাই শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে শিক্ষাদানের কাজে অপারেন্ট অনুবর্তনের কৌশল কে প্রয়োগ করে থাকেন। তা নিম্নে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হইল।
১ প্রস্তুতি: শিশুর যেকোনো শিখনের জন্য প্রয়োজন প্রস্তুতি। শিক্ষক, শিক্ষার্থীর কাঙ্ক্ষিত আচরণের জন্যই শ্রেণীকক্ষে প্রয়োজনীয়র এমন পরিবেশ তৈরি করবেন যাতে শিক্ষার্থী বহুমুখী প্রতিক্রিয়া সহজে সম্পাদন করতে পারে।
২ শাস্তিদানের নীতি পরিত্যাগ: অপারেন্ট অনুবর্তন তত্ত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো শাস্তিদানের নীতি পরিত্যাগ। শিক্ষক শিক্ষার্থীকে শিক্ষাদানের সময় শাস্তি দানের নীতি পরিত্যাগ করে উপযুক্ত শক্তি দেওয়া উদ্দীপক উপস্থাপনের ব্যবস্থা করবেন।
৩ শক্তিদায়ক উদ্দীপকের উপস্থাপন: শিশুর শিক্ষা কালীন আচরণ পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়াকে কার্যকারী করে তুলতে হলে নতুন আচরণ সম্পাদনের সঙ্গে সঙ্গে তাকে শক্তিদায়ক উদ্দীপক বা পুরস্কার দিতে হবে। এর সঙ্গে সঙ্গে মৌখিক প্রশংসা ও উৎসাহ দানকে কাজে লাগাতে হবে।
৪ শিক্ষার্থীর সক্রিয়তা: অপারেন্ট অনুবর্তনে শিক্ষার্থীর আচরণের জন্য সক্রিয়তার প্রয়োজন। শিক্ষার্থী শ্রেণিকক্ষে সক্রিয়তার দরুন নতুন আচরণ সম্পাদন করে। এর জন্য শিক্ষককে আদর্শ শিক্ষণ পরিবেশ তৈরি করতে হবে এবং শিক্ষার্থীকে স্বাভাবিকভাবে প্রতিক্রিয়া সম্প্রদানের নতুন সুযোগ দিতে হবে। ফলে শিক্ষার্থীর নিকট শিখন অনেক সহজ অর্থপূর্ণ হয়ে উঠবে।
৫ সু অভ্যাস গঠন: অনুবর্তন কৌশলের অন্যতম গুরুত্ব হল সু অভ্যাস গঠনে সাহায্য করা। শিশু সু-অভ্যাস গঠনের জন্য যে সকল আচরণ করবে তার জন্য তাকে পুরস্কৃত করতে হবে।
৬ অপারেন্ট শৃংখল গঠন: শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি পরিপূর্ণ সামগ্রিক আচরণ সৃষ্টি বা শৃংখল গঠন করতে হলে অপারেন্ট প্রতিক্রিয়া গুলিকে তার মধ্যে পর্যায়ক্রমে সৃষ্টি করতে হবে। এই উদ্দেশ্যে আমাদের শিখনের বিষয়গুলিকে সঠিক পরিকল্পিত রূপ দিতে হবে।
৭ গণিত, বানান ও শব্দ শেখা: অপারেন্ট অনুবর্তনের নীতি শিশুর গণিত, বানান ও শব্দ ইত্যাদি শিখনের ক্ষেত্রে বিশেষ উপযোগী।
৮ ব্যক্তিত্বের বিকাশ: শিশুর ব্যক্তিত্ব বিকাশে অপারেন্ট অনুবর্তনের নীতি বিশেষভাবে ব্যবহার করা হয়।
অতএব ওপরের সমস্ত আলোচনা থেকে বলা যায় যে অপারেন্ট অনুবর্তনে দ্বারা মানুষের বেশিরভাগ আচরণের প্রকৃতিকে ব্যাখ্যা করা যায় এবং শিক্ষাক্ষেত্রে এর প্রয়োগও খুব ব্যাপক।
প্রাচীন অনুবর্তন এর সঙ্গে সক্রিয় অনুবর্তন/ অপারেন্ট অনুবর্তন এর পার্থক্য
প্রথম প্রাচীন অনুবর্তনের প্রবক্তা হলেন রাশিয়ান তথ্যবিদ আইভান প্যাভলভ। এবং অপরদিকে অপারেট অনুবর্তনের প্রবক্তা হলেন আমেরিকান মনোবৈজ্ঞানিক স্কিনার।
দ্বিতীয় প্রাচীন অনুবর্তনে প্রতিক্রিয়া প্রত্যাশা মূলক। এবং অপরদিকে অপারেন্ট অনুবর্তনে প্রতিক্রিয়াটি নির্দেশমূলক।
তৃতীয় প্রাচীন অনুবর্তনে প্রতিক্রিয়া মূলক স্বতন্ত্র দ্বারা নির্মিত হয়, কিন্তু অপরদিকে অপরেন্ট অনুবর্তনে প্রতিক্রিয়া প্রাণীর কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র দ্বারা নির্মিত হয়।
চতুর্থ প্রাচীন অনুবর্তনে চারটি উপাদান দুটি উদ্দীপক এবং দুটি প্রতিক্রিয়া, এবং অপরদিকে অপারেট অনুবর্তনে এক একটি প্রতিক্রিয়া এবং এক একটি উদ্দীপকের জোড়া হিসেবে ধরা হয়ে থাকে।
পঞ্চম প্রাচীন অনুবর্তনের প্রতিক্রিয়া অনাবর্তিত উদ্দীপক দ্বারা জোর করে সৃষ্টি করা হয়, কিন্তু অপরদিকে অপারেট অনুবর্তনে অনুবর্তিত প্রতিক্রিয়া নিজে থেকে সইচ্ছায় আসে।
ষষ্ঠ প্রাচীন অনুবর্তনে উদ্দীপক প্রতিক্রিয়ার সংযোগ তাদের সাজুয্যের দ্বারা নির্ধারিত হয়, কিন্তু অপরদিকে অপারেন্ট অনুবর্তনের উদ্দীপক প্রতিক্রিয়া সংযোগ ফলের দ্বারা নির্ধারিত হয়।
সপ্তম প্রাচীন অনুবর্তনের ক্ষেত্রে একটি উদ্দীপকের দ্বারা কেবলমাত্র একটি প্রতিক্রিয়ার কথা ভাবা হয়, কিন্তু অপরদিকে অপারেট অনুবর্তনের একটি উদ্দীপকের পরিপ্রেক্ষিতে পর্যায়ক্রমে অনেকগুলি প্রতিকারের কথা বিবেচনা করা হয়, তাদের মধ্যে একটি স্থায়ী হয়।
অষ্টম এই প্রাচীন অনুবর্তনকে বলা হয় উদ্দীপক প্রধান প্রতিক্রিয়া, কিন্তু অপরদিকে অপারেন্ট অনুবর্তন এর প্রতিক্রিয়াকে প্রধান প্রতিক্রিয়া বলা হয়।
নবম প্রাচীন অনুবর্তনে প্রতিক্রিয়ার পূর্বেই শক্তিদায়ক উদ্দীপক উপস্থাপন করা হয়, কিন্তু অপারেন্ট অনুবর্তনের ক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হলে শক্তি দায়ক সত্তা উপস্থিত হয়।
দশম প্রারম্ভিক পর্যায়ে প্রাচীন অনুবর্তন প্রক্রিয়া শক্তি শূন্য হয়ে থাকে কিন্তু অপরদিকে অপারেন্ট অনুবর্তন এর ক্ষেত্রে একটি অপারেন্ট কখনোই শূন্য শক্তি সম্পন্ন হয় না।
একাদশ প্রাচীন অনুবর্তনে একটি বিচ্ছিন্ন প্রতিটা সৃষ্টি করা হয়। কিন্তু অপরদিকে অপারেট অনুবর্তনে শৃঙ্খলিত প্রতীকে সৃষ্টি হয়।
দ্বাদশ শিশুর শিখন এর ক্ষেত্রে অনেক বেশি ব্যবহার করা হয়ে থাকে প্রাচীন অনুবর্তনের প্রক্রিয়াগুলো কিন্তু অপরদিকে অপারেন্ট অনুবর্তন দৈনন্দিন জীবনে এই শিখন কৌশলটি বেশি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
দ্বাদশ শ্রেণী শিক্ষাবিজ্ঞানের (education) সব প্রশ্ন উত্তর
প্রাচীন অনুবর্তন বলছে আমরা কি বুঝি?
প্যাভলবের প্রাচীন অনুবর্তন পরিবর্তন কৌশল ও তার পরীক্ষা
প্রাচীন অনুবর্তনের শর্তাবলী, নীতি ও গুরুত্ব?
অপারেট অনুবর্তন কি ও তার স্কিনার বক্সের পরীক্ষা
শিক্ষা ক্ষেত্রে অপারেন্ট অনুবর্তন এর বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব এবং পার্থক্য
প্রচেষ্টা ও ভুলের পরীক্ষা শিখন কৌশল থনডাইকের ভূমিকা
প্রচেষ্টা ও ভুলের তত্ত্বের শিক্ষাগত বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব
গৌণ সূত্রাবলী কি এবং তাদের বৈশিষ্ট্য