বিখ্যাত মনোবিদ বি.এফ. স্কিনার ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক শ্রেণীতে ছাত্র অবস্থায় ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্স পত্রিকায় একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেন।
এই প্রবন্ধে তিনি অপারেন্ট অনুবর্তনের ধারণা দেন। স্কিনার প্রাণীর আবর্ত প্রতিক্রিয়ার প্রকৃতি অনুশীলনের জন্য নানা ধরনের প্রাণীকে নিয়ে বহু রকমের পরীক্ষা করেছিলেন।
তিনি এইসব পরীক্ষায় বিশেষ ধরনের পরীক্ষা কৌশল এবং বিশেষ এক ধরনের যান্ত্রিক ব্যবস্থা ব্যবহার করেছিলেন। এই বিশেষ পরীক্ষামূলক শিখন কৌশলটি হল অপারেন্ট অনুবর্তন শিখন কৌশল।
পরীক্ষা
স্কিনার ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে অপারেন্ট অনুবর্তন এর পরীক্ষাটি করেন। এবং এই পরীক্ষাটি আমরা নিচে আলোচনা করিলাম।
১ পরীক্ষার জন্য প্রাণী ও প্রয়োজনীয় উপকরণ
কিনার পরীক্ষার জন্য ক্ষুধার্ত ইঁদুর এবং প্রয়োজনে উপকরণ গুলি হল – (ক) স্কিনার বক্স, (খ) ট্রে, (গ) খাদ্যবস্তু ইত্যাদি।
(ক) ইনার বক্সের বর্ণনা :- স্কিনার তার পরীক্ষার জন্য যে বিশেষ ধরনের যান্ত্রিক ব্যবস্থা ব্যবহার করেছেন তা স্কিনার বক্স নামে পরিচিত। এই বক্সটি বিশেষভাবে প্রস্তুত। এই বক্সে একটি সরল যান্ত্রিক ব্যবস্থা যুক্ত আছে। একটি লিভার থাকে। লিভারটিতে চাপ দিলে তার সামনে একটি ট্রেতে খাদ্য বস্তু এসে পড়ে। এ ছাড়া বক্স এর মধ্যে থাকা প্রাণীর আচরণের প্রকৃতির রেকর্ড করার জন্য বিশেষ বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা থাকে।

পরীক্ষা পরিস্থিতি ও পর্যবেক্ষণ গুলি আমরা বিভিন্ন পর্যায়ে দেখতে পাই তা হলো –
প্রথম পর্যায়
পরীক্ষার জন্য প্রথম দিকে স্ক্রীনের বক্সে ক্ষুধার্ত ইদুরটিকে ঢুকিয়ে দেন। পূর্ব থেকেই বক্সের মধ্যেকার ট্রে টিতে খাদ্য দেওয়া ছিল। ইঁদুরটি সঙ্গে সঙ্গে ওই ট্রেটি থেকে খাদ্য গ্রহণ করে এবং পরীক্ষামূলক পরিস্থিতির সঙ্গে পরিচিতি হয়। এই পর্যায়ে লিভারের চাপ দিয়ে ট্রিটটি খাদ্য আনা হয়নি।
দ্বিতীয় পর্যায়
ইঁদুরটিকে অন্য একদিন ওই বক্সে ঢুকিয়ে দেওয়ার পর লিভারের চাপ দিয়ে যান্ত্রিক কৌশলে সাহায্যের ট্রেতে খাদ্যবস্তু ফেলা হয়। এই পর্যায়ে স্কিনার নিজেই লিভারের চাপ দিয়ে ট্রেতিতে খাদ্যবস্তু ফেলেন। এখানে ইঁদুরটির কোন প্রচেষ্টা ছিল না, বক্সের পরিস্থিতি সম্পর্কে ইঁদুরটিকে পরিচিত করানো হয়।
তৃতীয় পর্যায়
আরো একদিন ক্ষুধার্ত দুটিকে বক্স মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এই পর্যায়ে ইদুরটির আচরণ স্কিনার বিশেষভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। ইঁদুরটিকে বক্সে ঢুকিয়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খাদ্যের প্রত্যাশের ট্রের দিকে দৌড়ে যায়। কিন্তু এই অবস্থায় ট্রেতে কোনো খাদ্য ছিল না। ফলে ইদুরটি খাদ্য সংগ্রহ করতে পারেনি।
তাই খাদ্য পাওয়ার প্রত্যাশায় সে নানা ধরনের অনুসন্ধানমূলক ও প্রতিক্রিয়ার আচরণ করতে থাকে। এভাবে অনুসন্ধানমূলক বই পত্রিকাগুলি করতে করতে এক সময় লিভারের চাপ দিয়ে ফেলে। এবং ট্রেতে খাদ্যবস্তু এসে পড়ে। তারপর সেই ইঁদুরটি খাদ্য বস্তু গ্রহণ করে।
পরবর্তী পর্যায়
কিনার এরপর সেই ইদুরটিকে নিয়ে পরীক্ষাটির পুনাবৃত্তি ঘটান এবং লক্ষ্য করেন যে পুনরাবৃত্তির ক্রম অনুযায়ী লিভারের চাপ দিয়ে ট্রেতে খাদ্য আনতে সময় কম লাগছে। পরবর্তী সময়ে বক্সে ইন্দুর থেকে ঢুকালেই সঙ্গে সঙ্গে লিভারের চাপ দিয়ে ট্রে টিতে খাদ্য আনতে সক্ষম হয়েছে। খাদ্য পাওয়ার প্রত্যাশায় চালিত হয়ে শিখন কৌশল আয়ত্ত করছে এবং নতুন আচরণ আয়ত্ত করেছেন।
সিদ্ধান্ত
অবশেষে এই পরীক্ষার পরে স্কিনার যে সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছেন তা হলো-
১ আচরণের ধরন: স্কিনার বহু পরীক্ষা করে ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে দুই ধরনের আচরণের কৌশল অস্তিত্বের কথা বলেন তিনি বলেন আচরণ দুই ধরনের হয়।
(ক) রেসপন্ডেন্ট যে আচরণ গুলি প্রাণী সম্পাদন করে সেগুলি বিশেষ বস্তুধর্মী জানা উদ্দীপকের সাহায্যে সৃষ্টি হয়। তাকে কি বলা হয় রেসপন্ডেন্ট।
যেমন – প্যাভলভ এর পরীক্ষায় খাদ্য বস্তুর পরিপ্রেক্ষিতে কুকুরটির লালা খোরনে আচরণ হলো একটি রেসপন্ডেন্ট আচরণ, কারণ খাদ্য বস্তুর সম্পর্কে পূর্বের বাস্তব জ্ঞান।
(খ) অপারেন্ট প্রাণীর মধ্যে এমন কতগুলো আচরণ দেখা যায় যেগুলি নির্দিষ্ট কোন বস্তু ধর্মী উদ্দীপকের সাহায্যে ঘটে না প্রত্যাশা মূলক উদ্দীপকে দ্বারা হয়, তাকে বলা হয় অপারেন্ট।
যেমন – স্কিনারের পরীক্ষায় লক্ষ্য করা যায়, ইদুটি খাদ্য পাওয়ার প্রত্যাশায় লিভারের চাপ দেওয়ার আচরনটি করে। এখানে খালত বস্তুর উদ্দীপক দ্বারা , ইঁদুরটি আচরণ করেনি।
মানুষের দৈনন্দিন জীবনে সম্পাদিত আচরণগুলির মধ্যে বেশিরভাগ আচরণ অপারেন্ট প্রকৃতির। কারণ এগুলি স্বাধীনভাবে পরিবেশের মধ্যে সম্পাদিত হয়। এবং প্রাণীকে প্রাথমিক চাহিদা পূরণে সাহায্য করে।
২ অনুবর্তন এর ধরন: স্কিনার দুই ধরনের আচরণ পরিপ্রেক্ষিতে শিখনের দুই ধরনের অনুবর্তন কৌশলে কথা বলেন। যথা –
(ক )এস টাইপ অনুবর্তন:- একটি জানা বস্তুধর্মী উদ্দীপকের পরিপেক্ষিতে একটি নতুন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়, এই জাতীয় প্রাচীন অনুবর্তন এর স্কিনার নাম দেন এস টাইপ অনুবর্তন। এখানে S বলতে (Stimulus) বোঝানো হয়েছে.
এই ধরনের আচরণের সংখ্যা দৈনন্দিন জীবনে খুবই কম দেখা যায়, তাই প্রাচীন অনুবর্তন কৌশল শিখনের ক্ষেত্রে বিশেষ পর্যপূর্ণ নয়।
(খ) আর টাইপ অনুবর্তন:- অপারেন্ট শ্রেণীর আচরণ গুলি যেভাবে সংঘটিত হয়, তাকে স্কিনার নাম দিয়েছে আর টাইপ অনুবর্তন। যে অনুবর্তনে কোন আচরণ নির্দিষ্ট উদ্দীপকের পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্টি হয় না, তাকে আর টাইপ অনুবর্তন বলে। এখানে R বলতে প্রতিক্রিয়াকে বোঝানো হয়েছে। এই ধরনের অনুবর্তন মানুষের দৈনন্দিন জীবনের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়।
৩ অপারেন্ট/ আর টাইপ অনুবর্তন সংগঠনের কাঠামো: কিনারের মতে শিক্ষার্থী শিখন পরিস্থিতিতে বিশেষ মানসিক প্রত্যাশায় একটি আচরণ সম্পাদন করে তাই হল অপারেন্ট।
দ্বাদশ শ্রেণী শিক্ষাবিজ্ঞানের (education) সব প্রশ্ন উত্তর
প্রাচীন অনুবর্তন বলছে আমরা কি বুঝি?
প্যাভলবের প্রাচীন অনুবর্তন পরিবর্তন কৌশল ও তার পরীক্ষা
প্রাচীন অনুবর্তনের শর্তাবলী, নীতি ও গুরুত্ব?
অপারেট অনুবর্তন কি ও তার স্কিনার বক্সের পরীক্ষা
শিক্ষা ক্ষেত্রে অপারেন্ট অনুবর্তন এর বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব এবং পার্থক্য
প্রচেষ্টা ও ভুলের পরীক্ষা শিখন কৌশল থনডাইকের ভূমিকা
প্রচেষ্টা ও ভুলের তত্ত্বের শিক্ষাগত বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব
গৌণ সূত্রাবলী কি এবং তাদের বৈশিষ্ট্য