১৬১২ সালের মে মাসে তিনি চিঠিতে লিখলেন | এই স্বভাবই শেষ জীবনে তার অশেষ দুঃখের কারণ হলাে | গালিলিও-র ছাত্রজীবন | ‘গালিলিও’ প্রবন্ধটির নামকরণের সার্থকতা

“১৬১২ সালের মে মাসে তিনি চিঠিতে লিখলেন”—চিঠি লেখার প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে চিঠিটির বক্তব্য নিজের ভাষায় লেখাে

সত্যেন্দ্রনাথ বসুর ‘গালিলিও প্রবন্ধ অবলম্বনে জানা যায় যে, ১৬১১ খ্রিস্টাব্দে নিজের নগররাষ্ট্র তাস্কানীতে ফিরে এসে গালিলিও এক নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করলেন। তাস্কানী তথা সমগ্র ইতালির শিক্ষিত জনসাধারণের কাছে তিনি তাঁর আবিষ্কার এবং মতামতগুলিকে পৌঁছে দিতে সচেষ্ট হলেন। খ্রিস্টান ধর্মের এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চার জন্য প্রচলিত ঐতিহ্যশালী ইউরােপীয় ভাষা লাতিন ত্যাগ করে মাতৃভাষা ইটালিয়ান-এ লেখালেখি করার মনস্থ করলেন গালিলিও। তার এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্তকে প্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্যেই ১৬১২ খ্রিস্টাব্দে গালিলিও আলােচ্য চিঠিটি লিখেছিলেন।

উল্লিখিত চিঠিতে গালিলিও লিখেছিলেন যে, দেশের যুবকরা যে-কোনাে একটা খেতাব পাওয়ার উদ্দেশ্যেই ডাক্তার বা দার্শনিক বা অন্য কিছু হতে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করে। তারপর এমন পেশায় তারা প্রবেশ করে, যে পেশায় তারা একেবারেই উপযুক্ত নয়। কিন্তু যাঁরা জ্ঞান-বিজ্ঞানচর্চার জন্য যথার্থই উপযুক্ত ব্যক্তি, তারা নিজেদের জীবিকার কারণে বা দৈনন্দিন নানা চিন্তা ভাবনার জন্য জ্ঞানচর্চা করে উঠতে পারেন না। আবার, এইসব অন্য পেশার উপযুক্ত মানুষগুলি লাতিন ভাষা বােঝেন না বলেও জ্ঞানচর্চা থেকে দূরে থাকেন। কিন্তু গালিলিও চান তাদের মধ্যে এই যথার্থ জ্ঞানের উন্মেষ ঘটাতে, বিশ্বপ্রকৃতির মর্মকথা প্রকাশ করতে। চিঠির এই যুক্তির নিরিখেই গালিলিও গ্রহণ করেন আপামর জনসাধারণের ভাষা, ইটালিয়ান।

“এই স্বভাবই শেষ জীবনে তার অশেষ দুঃখের কারণ হলাে” -কার কোন্ স্বভাবের কথা বলা হয়েছে? সেই স্বভাব তার শেষ জীবনে অশেষ দুঃখের কারণ হলাে কীভাবে?

সত্যেন্দ্রনাথ বসুর ‘গালিলিও’ প্রবন্ধে যুক্তিতর্কের প্রতি গালিলিওর অবিচল প্রবণতার দিক, যা তার কিছুটা তীব্র একগুঁয়েমির শামিল—সেই স্বভাবের কথাই বলা হয়েছে।

জগতের সকল মানুষ বিশ্বপ্রকৃতির মর্মকথা বােধবুদ্ধি দিয়ে উপলদ্ধি করুক ও তাদের মধ্যে যথার্থ সত্য জ্ঞানের উদ্বোধন ঘটুক, এই লক্ষ্য ছিল গালিলিওর। তাঁর ইটালিয়ান ভাষায় লেখা জ্যোতিষ ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের বইয়ের বিরুদ্ধতা করলেন সনাতনীরা। ফ্লেরেন্সের ডােমিনিকান সম্প্রদায়ের সন্ন্যাসীরা যেমন বিরােধিতা করলেন, তেমনি তার আবিষ্কার ও গবেষণার বিষয়কে মানতে পারলেন না বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ছাত্ররা। ধর্মযাজকেরা প্রচার করলেন গালিলিওর অধ্যাপনা ধর্মবিশ্বাসের পরিপন্থী, বাইবেলের প্রতি মানুষের আস্থার ওপর আঘাতকারী। ১৬১৬ খ্রিস্টাব্দে ক্ষুধ পােপ কার্ডিনাল বেলারিমিনকে দায়িত্ব দিলেন গালিলিওকে বােঝানাের। কিন্তু নতুন পােপ টমেমি ও কোপারনিকাসের বিশ্ববিন্যাসের গুণাগুণ সংক্রান্ত আলােচনার বইকে গালিলিওর বৃথা গর্বের অজ্ঞতা ও অসতর্কতার নিদর্শন হিসেবে গণ্য করে তাকে কারারুদ্ধ করলেন। অনুতাপব্যঞ্জক সাদা পােশাক পরিয়ে হাঁটু গেড়ে তাকে বলতে হল কোপারনিকাসের মত তিনি ত্যাগ করেছেন। এরপরও ক্যাথলিক ধর্মপন্থীদের অনুশাসনে জীবনের শেষ ন-টি বছর গৃহে অন্তরিন অবস্থায় তাকে অশেষ দুঃখে কাটাতে হয়, সে জন্য নিশ্চিতভাবে দায়ী তাঁর স্বভাবের অটল দৃঢ়তা।

গালিলিও-র ছাত্রজীবন সম্পর্কে যা জান লেখাে।

সত্যেন্দ্রনাথ বসুর লেখা ‘গালিলিও প্রবন্ধটিতে পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী গালিলিওর ছাত্রজীবন নিখুঁতভাবে বর্ণিত হয়েছে। ছােটোবেলা থেকেই গালিলিও ছিলেন একজন মেধাবী ছাত্র। পরিবারের ইচ্ছায় গালিলিও তেরাে বছর বয়সে বেনেডিটিন সম্প্রদায়ের ভ্যালাম-ব্রোসার মঠে সাহিত্য, ন্যায় ও ধর্মশাস্ত্রের অধ্যয়ন করতে যান। সন্তানের সন্ন্যাসী হয়ে ঘর ছাড়ার ভয়ে অতঃপর গালিলিওর পিতা তাঁকে মঠ ছাড়িয়ে ১৫৮১ খ্রিস্টাব্দে মাত্র ১৭ বছর বয়সে পিসা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাক্তারি পড়তে পাঠান। যদিও গালিলিও পিতার মতােই সংগীতশাস্ত্র ও চিত্রকলা ভালােবাসতেন এবং হয়তাে বড়াে চিত্রকরও হতে পারতেন। সেইসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক ছাত্রকেই দর্শন পড়তে হত। সেটি ছিল আরিস্টটলের যুগ। কিন্তু ছােটোবেলা থেকেই যুক্তিবাদী গালিলিও বিনা প্রশ্নে বা বিনা তর্কে কোনাে কিছুই অভ্রান্ত বলে মেনে নিতেন না। মাঝে মাঝে শিক্ষকের সঙ্গেও তার বাকযুদ্ধ বেঁধে যেত। এই সময়েই তিনি ডাক্তারি পড়া ছেড়ে গণিত অধ্যয়ন করতে শুরু করেন। অল্প সময়েই গণিত ও পদার্থবিদ্যায় পারদর্শী হয়ে ওঠেন। তার পাণ্ডিত্যের খ্যাতি ক্রমে ক্রমে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল।

‘গালিলিও’ প্রবন্ধটির নামকরণের সার্থকতা বিচার করাে।

গ্যালিলিও রচনাটিতে প্রখ্যাত বিজ্ঞানী গালিলিও গালিলাই-এর জীবনকাহিনি বর্ণনা করা হয়েছে। আলােচ্য প্রবন্ধটি থেকে জানা যায় যে, ১৫৬৪ খ্রিস্টাব্দের ১৫ ফেব্রুয়ারি ইতালির তাস্কানীর পিসা শহরে জন্মগ্রহণ করেন গালিলিও। ১৩ বছর বয়সে প্রথমে ভ্যালাম ব্রোসাতে বেনেডিটিন সম্প্রদায়ের মঠ থেকে সাহিত্য, ন্যায়শাস্ত্র ও ধর্মশাস্ত্রের পাঠ নেওয়ার পর ১৭ বছর বয়সে ডাক্তারি পড়তে পিসা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভরতি হন তিনি। এরপর ফ্লোরেন্সে চলে আসার পরে গালিলিও তাঁর পিতৃবন্ধু, বিখ্যাত এক গণিত বিশারদের কাছে গণিত ও পদার্থবিদ্যার পাঠ নিতে শুরু করেন। ১৫৯২ খ্রিস্টাব্দে গালিলিও ভেনিসের পাড়ুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার চাকরি নিয়ে চলে যান। ১৬০৯ খ্রিস্টাব্দে এক হল্যান্ডবাসীর আবিষ্কারের কথা শুনে গালিলিও দূরবিন, আবিষ্কার করে চাঁদের পাহাড়, ছায়াপথের প্রকৃতি, বৃহস্পতির চারটি উপগ্রহ প্রভৃতি পর্যবেক্ষণ করেন। এইসময় কোপারনিকাসের সূর্যকেন্দ্রিক বিশ্বমতবাদের সত্যতার সপক্ষে ইটালিয়ান ভাষায় একটি গ্রন্থ রচনা করলে দেশের অধিকাংশ শিক্ষিত মানুষ এবং ধর্মযাজকদের শত্রু হয়ে যান। পােপের রায় অনুসারে তার জীবনের শেষ ন-বছর চরম দুঃখকষ্টে কাটে। অবশেষে ১৬৪২ খ্রিস্টাব্দের ৮ জানুয়ারি এই মহান বিজ্ঞানীর মৃত্যু হয়।

গালিলিওর জীবনে নানা ওঠাপড়া, তাঁর সাফল্য ব্যর্থতা, আবিষ্কার ও আপসের নানা দৃষ্টান্ত, জীবনের শেষ পর্যায়ের বিভিন্ন দিক এই প্রবন্ধে বিবৃত হওয়ায় আলােচ্য প্রবন্ধের বস্তুধর্মী নামকরণকে আমরা সার্থক ও যথাযথ বলতে পারি।

বাংলা সব প্রশ্ন উত্তর (একাদশ শ্রেণি)

Leave a Comment