সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ‘ভারতবর্ষ’ গল্পের গ্রাম জীবন ও লোক বিশ্বাসের প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করো?

ভূমিকা

ভারতের সভ্যতা গ্রাম প্রধান।’ভারতবর্ষ’ গল্পটিতেও তার লক্ষ্য করা যায়। সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ছোটগল্পে প্রায় অনিবার্য পটভূমি হল বাংলার নিম্নবর্গীয় গ্রাম জীবন, যেখানে তার মূল অন্বেষণ মানুষ ও প্রকৃতি এবং এই দুইয়ের মধ্যেকার সম্পর্ক। সেই সূত্রে তিনি এ গল্প এনেছেন লোকায়ত গ্রাম জীবনের গূঢ় প্রেক্ষিত।

কাহিনীর বিস্তারে গ্রামজীবন

গল্পের শুরুতেই ধরা পড়ে গ্রামের কথা-“পিচের সড়ক বাঁকা নিয়ে যেখানে, সেখানে গড়ে উঠেছে একটা ছোট্ট বাজার। পিছনে গ্রাম, ঘন বাশঁ বনের ঢাকা।” ক্রমে সূক্ষ্মরেখায় আসে গ্রাম শহরের তুলনা। গ্রাম বিদ্যুৎ হীন, শহর এলাকা আলোকিত, গ্রামে বিনোদন নেই, শহরে তা অনেকাংশেই প্রতুল। তাই যখন ‘পৌষে বাদলা’ শহরে চা দোকানে জড়ো হয়- ‘সভ্যতার ছোট উনুনের পাশে হাত-পা সেঁকে নিতে।’ এইসব মানুষজন কিন্তু শেষমেষ গ্রামীণ। অনেক শহুরে প্রসঙ্গের মধ্যে তাই যখন আলোচনার বিষয় হয়, সারা বাউরির প্রসঙ্গ। লেখকের কোথায় – “জোর কথা কাটাকাটি হয় চা ওলার বিক্রিবাটা বাড়ে। ধানের মরসুম-আজ না হোক, কাল পয়সা পাবেই, তাই ধারের অংক বেড়েই চলে।” এ ছবি একান্তই গ্রাম কেন্দ্রিক।

লোকজীবন ও লোকবিশ্বাস

লোকায়ত জীবনের অনুষঙ্গেই লেখক দেখান কিভাবে বাঁশ বনে ঢাকা গ্রামে বিমর্ষ সভ্যতার মুখ ধৃষ্ট হয়। রাঢ়বাংলার শীত রূপ বদল করে কিভাবে ‘ডাওর’ বা ফাঁসি তে পরিণত হয়, ‘এর বচন এবং তাতে এই বদলার অস্তিত্ব সম্পর্কে মতামত লোক বিশ্বাসের দিকটিকে নিশ্চিত করে- ‘শনিতে সাত, মঙ্গলে পাঁচ, বুধে তিন-বাকি সব দিন দিন। অর্থাৎ শনিতে বদলা লাগলে সাত দিন থাকবে, মঙ্গলে পাঁচ দিন, বুধে তিন দিন। অন্যদিকে লাগলে একদিনের ব্যাপার।”

ভাষাগত দিক

ভাষা প্রয়োগের ক্ষেত্রেও দেখা যায় -‘তোর শতগুষ্টি মরুক’ , ‘তোমাদের কর্তাবাবা টাট্টু’, ‘নরকখেকোরা’, ‘শকুনচোখোরা’ ইত্যাদি শব্দ নিয়ে গঠিত বাক্যাংশ গুলি লৌকিক।

দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা সমস্ত অধ্যায় অনুযায়ী তার সব প্রশ্নের উত্তর

Leave a Comment