সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ‘ভারতবর্ষ’ গল্পের প্রকৃতির অস্তিত্ব তথা আবহাওয়া আবহসংগীতের মতো কাজ করেছে-আলোচনা করো?

ভূমিকা

প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক সৈয়দ মোস্তফা সিরাজের ‘ভারতবর্ষ’ গল্পটিতে প্রকৃতি ও আবহাওয়া একটি বিশেষ ভূমিকায় অবতীর্ণ। যদিও রাঢ়বাংলায় এক তীব্র প্রাকৃতিক দুর্যোগের চিত্র এখানে প্রাধান্য লাভ করেছে, তবুও তা দিয়ে গল্পের বক্তব্যে পৌঁছাতে তিনি প্রসঙ্গ টিকে শানিত অস্ত্রের মতো ব্যবহার করেছেন।

প্রকৃতির স্বরপ

গল্পের শুরুতেই প্রকৃতি যেন স্বকন্ঠে কথা বলে ওঠে। গ্রাম্য প্রকৃতি, গ্রামকে মাঝে রেখে গড়ে ওঠা প্রকৃতির বর্ণনায় লেখক নিষ্ঠ। কিন্তু কিছু পরেই প্রকৃতির আপাত ক্ষুদ্র স্থানিক পটভূমিতে রুদ্ররূপে ছায়া পাত ঘটনা লেখক, যেখানে শীতের রাঢ়বঙ্গে প্রকৃতির প্রমত্ততা ভয়ংকর আকার ধারণ করে। শীতের উত্তরে হাওয়া যখন এমনিতেই হার কাপায়, তখন ঝড়-বৃষ্টি সহযোগে ‘ডাওর’ হয়ে ওঠে ‘ফাঁপি’। মাঠের পাকা ধান পড়ে থাকে, চাষীরা দুশ্চিন্তাই পরে। প্রবল শৈত্য প্রবাহ মানুষকে এনে হাজির করে শহরের চা দোকানের একটি উত্তাপের সন্ধানে। সবাই যখন শীতে জবুথবু, তখন শহরে চা দোকানে আগমন ঘটে এক থুথুড়ে বুড়ির, সে প্রায় মৃত্যু মুখী। শীত রাত্রি কাটানোর জন্য যে প্রকৃতির অঙ্গনে আশ্রয় নিলে পরদিন-‘সবাই আবিষ্কার করল বটতলায় সেই গুঁড়ির খোঁজে পিঠ রেখে বুড়ি চিত হয়ে পড়ে আছে-নিঃসার।

প্রকৃতির প্রভাব

প্রকৃতি বিপুল ও বিলাস, মানুষ ক্ষুদ্র। আবহাওয়ার খোলায় খুশির কাছেও মানুষ তুচ্ছ তাই প্রাকৃতিক দুর্যোগের নিদারুণ আবহাওয়া শান্ত হয়ে বুড়ির মরা কে কেন্দ্র করে দেখা দিল হিন্দু মুসলমান দুই ধর্ম সম্প্রদায়ের মানুষের মনে তীব্র ‌ সাম্প্রদায়িকতা। অর্থাৎ হিন্দু-মুসলমান দুই ধর্ম সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে তাই গল্পের প্রযুক্ত প্রাকৃতিক দুর্যোগ তথা বিরূপ আবহাওয়ার গুরুত্ব অপরিসীম।

দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা সমস্ত অধ্যায় অনুযায়ী তার সব প্রশ্নের উত্তর

Leave a Comment