ভূমিকা
কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ তার ‘ভারতবর্ষ’ গল্পে ধর্মের সংকীর্ণ দিকটিকে সামনে এনে তার অনুষ্ঠান সর্বস্ব দিকটির প্রতি অঙ্গুলিনির্দেশ করতে চেয়েছেন। গল্পে দেখা যায়, সাধারণ মানুষ ধর্মের মানবিক দিকটি বোঝেনা, সাধারণ ধর্ম কেন্দ্রিক আনুষ্ঠানিকতার মধ্যেই তারা ধর্মকে বোঝার চেষ্টা করেছে।
সংকীর্ণ ধর্মচেতনার কারণ
‘ভারতবর্ষ’ গল্পে বৃদ্ধার মৃতকল্প দেহ নিয়ে ঘনিয়ে ওঠা উত্তেজনা ও দ্বন্দ্ব যুদ্ধ প্রমাণ করে-বৃদ্ধা নয়, এমনকি তার দাহ কিংবা কবর নয়; দুই সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে ধর্মের মিথ্যা অধিকারবোধই আসল সমস্যা। বুড়ি প্রকৃত বেঁচে কি মরে আছে, এ সত্যের থেকেও ধর্মীয় মানুষদের কাছে বুড়ি হিন্দু মরা না মুসলমানের; এই তথ্যই জরুরি। মোল্লাসাহেব, ভটচাজমশাই ও তাদের অনুসরণকারীরা, সেটাও প্রমাণ করে গল্পে। ধর্ম মানুষের নেতিবোধ থেকে মুক্ত করতে তো পারেই না, বরং তার মনকে সংকীর্ণ থেকে আরও সংকীর্ণতর করে তোলে। তাই তুচ্ছ কারণে উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে উপস্থিত হয় দ্বন্দ্ব, যার উৎস সংকীর্ণ ধর্ম চেতনা।
ধর্ম বনাম মানবধর্ম
দেখা যায় আনুষ্ঠানিকতাই প্রধান হয়ে ওঠে মানুষের কাছে। একদিকে গাঁয়ের মোল্লা সাহেব ও অন্যদিকে গাঁয়ের ভটচাজমশাই কে সামনে রেখে বিবাদাধীন ধর্মীয় মানুষজন মেতে ওঠে তরজায়। গল্পে লেখক এই প্রশ্নটির মীমাংসা না করে গল্পকে এমন এক পরিণতি দান করেন, যেখানে জন্ম নেয় অন্য প্রশ্ন-মানুষ বড় না ধর্ম বড়। জিজ্ঞাসিত হয় এমন বিষয়ক-প্রচলিত ধর্ম কি মানব ধর্মের অন্তরায়?
উপসংহার
তাই গল্প শেষে লেখক পরম দক্ষতায় ও ব্যঙ্গছলে ধর্ম নয়, মানুষকেই বড় করে তোলেন। যাকে নিয়ে ধর্মের দ্বন্দ্ব, সেই বুড়ি অবশেষে উঠে বসে; তথাকথিত ধার্মিকজনদের ধর্মের অসারতাকে দু-পায়ে মাড়িয়ে যে একসময় দূরে মিলিয়ে যায়।
দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা সমস্ত অধ্যায় অনুযায়ী তার সব প্রশ্নের উত্তর