কবির উপলব্ধি
‘শেষ লেখা’ (১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে) কাব্যগ্রন্থের ১১ সংখ্যক ‘রূপনারানের কূলে’ শীর্ষক কবিতায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এ কথা বলেছেন তার মৃত্যু দিনের অব্যবহিত পূর্বে। মৃত রোগ যন্ত্রণায় শান্তকবির কন্ঠে খসে গিয়েছে আজীবনের রূপ-রস-স্পর্শ-গন্ধ-বর্ণের, নির্মোক। দীর্ঘ রোগজর্জর কবি যেন ‘পরের খেয়ায়’ যাওয়ার পথে ‘ভাষাহীন শেষের উৎসবে’ মেতেছে। তাই কবি কল্পনালতা নয়, ঋষি কবির মতো উচ্চারণ করেছেন জীবনের সারসত্য-
“সত্য যে কঠিন, কঠিনরে ভালোবাসিলাম, সে কখনো করে না বঞ্চনা।”
বঞ্চনার স্বরূপ
সমস্ত জীবন ধরে বাংলা কাব্য সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ রূপকার কবি রবীন্দ্রনাথ পৃথিবী তথা ব্রহ্মান্ডকে দেখেছেন এক অবিরত গীতিবন্ধনে, দেখেছেন ‘আকাশ পথে ঝরেছে জগত ঝরনা ধারার স্রোতে’ ; অনুভব করেছেন ‘আনন্দধারা বহিছে ভুবনে’ । জীবনের উপান্তে এসে আপন শরীরের ক্লান্তি, দীনতাও তাকে নত করতে পারেনি ততটা, যতটা তিনি হতাশ হয়েছেন সমসাময়িক বিশ্ব মানবের অশান্তি ও যুদ্ধ উদ্মাদনা দেখে। তাই সব তিতিক্ষার নির্মোক খুলে, বাণী বিনাশ হলে এ যেন এক উচ্চারণ-‘কঠিন এর ভালোবাসিলাম,’কারণ মিথ্যা প্রবোধ দিয়ে কঠিন সত্য মানব মনকে বিপথগামী করে না। ‘এ জগত স্বপ্ন নয়’- এই উপলব্ধি তাকে স্বপ্ন লব্ধ যেন বঞ্চনা, যা নিতান্তই ফাঁকি ; জীবনের বাস্তবতায় জানি সেই কথাটি কে স্মরণ করতে বাধ্য করেছে।
দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা সমস্ত অধ্যায় অনুযায়ী তার সব প্রশ্নের উত্তর