সুয়েজ খাল জাতীয়করণের বিরুদ্ধে ব্রিটেন, ফ্রান্স ও ইজরায়ের যুদ্ধ চক্রান্ত বর্ণনা করো? সুয়েজ সংকট সমাধানে ভারতের ভূমিকা কি ছিল?

ব্রিটেন, ফ্রান্স ও ইজরায়ালের যুদ্ধ চক্রান্ত

সূচনা

নাসেরের নেতৃত্বে সুয়েজ খাল জাতীয়করণ করা হলে ইজরায়েল ও তার সমর্থনকারী দুই রাষ্ট্র মিশরের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়ে। নাসেরের কমিউনিস্ট প্রীতি ও তীব্র ইজরায়েল বিরোধিতার জন্য ব্রিটেন, ফ্রান্স ও ইজরায়েল একজন হয়ে নাসেরকে ক্ষমতা যুক্ত করতে শেষ পর্যন্ত যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকে।

১. ব্রিটেনের ভূমিকা

নাসের সুয়েজ কালকে মিশরের অধীনে জাতীয়করণ করলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায় প্রআমআদ গোনে ব্রিটেন। কেননা সুয়েজ খাল কোম্পানি শতকরা ৪৪ ভাগ শেয়ার ছিল ব্রিটেনের। নাসের সুয়েজ খাল জাতীয়করণের পর জানিয়েছিলেন যে, এই খালের পূর্বতন অংশীদার কোম্পানিগুলি বাজার মূল্য অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ পাবে। কিন্তু এই ক্ষতিপূরণের পরিমাণ ব্রিটেনের কাছে যথেষ্ট ছিল না। তাই ব্রিটেনের শ্রমিক দলের নেতা হুগ গেইটসকেল বলেন যে, তিরিশের দশকে হিটলার, মুসোলিনিকে তোষণ করে ব্রিটেন যে ভুল করেছিল নাসেরের ক্ষেত্রে তা পুনরাবৃত্তি ঘটাবে না।

২. ফ্রান্সের ভূমিকা

ফ্রান্স ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে অশোধিত খনিজ তেল এই পথেই জাহাজে করে নিজের দেশে নিয়ে যেত। কাজেই সুয়েজ খাল কোম্পানির জাতীয়করণ ফ্রান্সের কাছে বিপর্যয়ের শামিল ছিল। নাসের সুয়েজ ক্যানাল কোম্পানির প্রতিটি শেয়ার মালিক কে ক্ষতিপূরণ দিতে সম্মত ছিলেন। তাছাড়া সুয়েজ খাল দিয়ে রাজস্ব দানের বিনিময়ে অনুমতি সাপেক্ষে কোন দেশেরই জাহাজ যাতায়াতের বাধা ছিল না। আন্তর্জাতিক মনের জলপথ সুয়েজ খাল থেকে ফরাসি কোম্পানির বিশাল অংকের মুনাফার উৎস বন্ধন হয়ে গেলে ফ্রান্স মিশরের সঙ্গে বিরোধিতায় লিপ্ত হয়।

৩. ইজরায়লের ভূমিকা

ইজরায়েল ও নাসেরের সুয়েজ খাল জাতীয়করণের তীব্র বিরোধিতা করে এবং ব্রিটেন ও ফ্রান্সের এর পাশে দাঁড়ায়। এর কারণ গুলি হল –

(১) নাসের ছিলেন ইজরায়ালের শত্রু। তাই মধ্যপ্রাচ্যে নাসেরের প্রাধান্য খর্ব করে ইজরায়ালের বিপন্নমুক্ত হতে চেয়েছিল।

(২) নাসের সুয়েজ খালে ইজরায়েলের জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তাই যদি নেমে সে তার জাহাজ চলাচল কে নিশ্চিত করতে চেয়েছিল।

(৩) ইজরায়ালের ওপর আরব সন্ত্রাসবাদীদের প্রায়শই যে আক্রমণ চলছিল, তাতে মিশরের একটা ভালো রকমের মদত রয়েছে বলে ইজরায়ালের অভিযোগ ছিল। এই সমস্ত কারণে মিশরকে একটা ভালো মতো শিক্ষা দিতেই ইজরায়ালের ব্রিটেন ও ফ্রান্সের পক্ষ নিয়েছিল।

সুয়েজ সংকট সমাধানে ভারতের ভূমিকা

সূচনা

সুয়েজ সংকট সৃষ্টির পর থেকেই ভারত এই সংকট সমাধানের উদ্যোগ নেয়। ভারত সুয়েজ খাল ব্যবহারকারী দেশ ছিল বলে, সুয়েজ সমস্যা সমাধানে ভারতের স্বার্থ জড়িয়ে ছিল।

« সুয়েজ সংকট সমাধানে ভারতের ভূমিকা

১. প্রাথমিক প্রচেষ্টা হিসেবে

সুয়েজ খাল ব্যবহারকারী দেশ হিসেবে নিজের স্বার্থের ভারত সুয়েজ সমস্যা ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের সমাধানে এক আগ্রহীন ভূমিকা পালন করেন। ভারত মনে করতেন ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে ‘কনস্ট্যান্টিনোপল কনভেশন’ অনুসারে সুয়েজ খাল মিশরের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। তবেই সেই সঙ্গে এসে এ ও মনে করতো যে, হাল ব্যবহারকারীদের একটি উপদেষ্টা মূলক ভূমিকা থাকা দরকার।

২. বিদেশ মন্ত্রীর মাধ্যমে

১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে সুয়েজ সমস্যার সমাধানে লন্ডন সম্মেলনে মিশরের কোনো প্রতিনিধি যোগদান না করায় ভারতের প্রতিনিধির বিদেশ মন্ত্রী কৃষ্ণ মেনন দুপক্ষের মধ্যে যোগসূত্রের ভূমিকা পালন করেছিলেন। ছুঁয়েজ সংকট সমাধানের লক্ষ্যে কৃষ্ণ মেনন ৫ দফা পরিকল্পনা পেশ করতেন। তিনি সুয়েজ খাল ব্যবহারকারী দেশগুলির মধ্যে এক কমিটি গঠন করে সমস্যার সমাধানের প্রস্তাব দেন। তিনি মিশরের ওপর ও খাল রক্ষার দায়িত্ব দেওয়ার কথা বলেন।

৩. প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে

ব্রিটেন ও ফ্রান্সের প্ররোচনায় মিশরের ওপর ইজরায়েলের আক্রমণকে ভারত সরকার কঠোরভাবে নিন্দা করে। প্রধানমন্ত্রী নেহেরু একটি কথা নগ্ন আক্রমণ বলে নিন্দা করেন।

৪. জাতিপুঞ্জে যোগদান

জাতিপুঞ্জের শান্তি রক্ষা বাহিনী হিসেবে ভারত মিশরের সেনা পাঠায়। যুদ্ধ বিরোধী কার্যকরী করার উদ্দেশ্য এবং বিদেশি সৈন্য অপসারণ এর বিষয়ে জাতিপুঞ্জের আলোচনা কালে ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস বইয়ের সমস্ত প্রশ্নের উত্তর

Leave a Comment