ভারতের উপরাষ্ট্রপতি
যোগ্যতা
ভারতীয় সংবিধানের ৬৩ নং ধারা অনুযায়ী, পদমর্যাদার দিক থেকে রাষ্ট্রপতির ঠিক পরেই উপরাষ্ট্রপতির পদ তৈরি করা হয়েছে। উপরাষ্ট্রপতির পদপ্রার্থীর যোগ্যতা সম্বন্ধে সংবিধানের ৬৬ নং ধারায় বলা হয়েছে যে
উপরাষ্ট্রপতির পদপ্রার্থীকে-
1. অবশ্যই ভারতীয় নাগরিক হতে হবে,
ii. অন্ততপক্ষে ৩৫ বছর বয়স্ক হতে হবে,
iii. রাজ্যসভায় সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতাসম্পন্ন হবে,
iv. কেন্দ্রীয় সরকার বা রাজ্য সরকার অথবা এই দুটি সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন কোনো স্থানীয় বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের অধীন কোনো লাভজনক পদে নিযুক্ত থাকতে পারবে না,
v. ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দের আইন অনুসারে পদপ্রার্থীর নির্বাচনে প্রার্থীর নাম কমপক্ষে ৫ জন নির্বাচক কর্তৃক প্রস্তাবিত এবং ৫ জন কর্তৃক সমর্থিত হতে হবে। এখানে উল্লেখ করা যায় যে, সংসদের যে-কোনো কক্ষের বা রাজ্য আইনসভার যে-কোনো সদস্য উপরাষ্ট্রপতির পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন; তবে দায়িত্বভার গ্রহণের পর তাঁকে আইনসভার পদটি ছেড়ে দিতে হয়।
নির্বাচন
রাষ্ট্রপতির মতো উপরাষ্ট্রপতিও একটি নির্বাচকমণ্ডলী (Electoral College) কর্তৃক নিযুক্ত হন। পার্লামেন্টের দুটি কক্ষের সদস্যদের নিয়ে এই নির্বাচক সংস্থা গঠিত হয়। একক হস্তান্তরযোগ্য সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে গোপন ভোটের মাধ্যমে উপরাষ্ট্রপতিকে নির্বাচিত করা হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে পার্লামেন্টের মনোনীত সদস্যরা অংশ নিতে পারেন না কিন্তু উপরাষ্ট্রপতির নির্বাচনে পার্লামেন্টের উত্তয়কক্ষের নির্বাচিত ও মনোনীত, সমস্ত সদস্যরা অংশ পারেন।
কার্যকাল ও অপসারণ
উপরাষ্ট্রপতির কার্যকালের মেয়াদ ৫ বছর। তিনি অবশ্য পুনর্নির্বাচিত হতে পারেন। নির্ধারিত কার্যকাল শেষ হওয়ার আগে উপরাষ্ট্রপতি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে পারেন অথবা তাঁকে পদ্মাতও করা যায়। উপরাষ্ট্রপতিকে পদচ্যুত করার জন্য ‘ইমপিচমেন্ট’ পদ্ধতির প্রয়োজন হয় না। তাঁকে পদচ্যুত করার জন্য ১৪ দিন আগে রাজ্যসভায় নোটিশ দিতে হয়। উপরাষ্ট্রপতির পদচ্যুতির বিষয়টি প্রস্তাবের আকারে রাজ্যসভায় উত্থাপন করতে হয়। প্রস্তাবটি যদি রাজ্যসভায় মোট সদস্যদের অধিকাংশের ভোটে গৃহীত হয় এবং লোকসভা যদি প্রস্তাবটিতে সম্মতি জানায়, তাহলে উপরাষ্ট্রপতি পঢ়াত হয়। ৪৪তম সংবিধান সংশোধন অনুযায়ী উপরাষ্ট্রপতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো বিরোধ বা বিতর্কের সৃষ্টি হলে সুপ্রিমকোর্ট তার নিষ্পত্তি করবে। সংবিধান অনুযায়ী উপরাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হলে ৬ মাসের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।
বেতন
সংশোধিত বেতন হার অনুযায়ী বর্তমানে উপরাষ্ট্রপতি তাঁর বেতন এবং অন্যান্য ভাতা পান। তবে উপরাষ্ট্রপতি যখন অস্থায়ীভাবে রাষ্ট্রপতির কার্যভার পরিচালনা করেন, তখন তিনি রাষ্ট্রপতির প্রাপ্য বেতন, ভাতা এক অন্যান্য সুবিধাদি পেয়ে থাকেন।
ক্ষমতা ও গদমর্যাদা
সংবিধানে উপরাষ্ট্রপতিকে পদাধিকারবলে রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বা সভাপতি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বস্তুত, রাজ্যসভায় সভাপতিত্ব করাই হল উপরাষ্ট্রপতির প্রধান কাজ। এ ছাড়া রাষ্ট্রপতির মৃত্যু, পদচ্যুতি বা পদত্যাগ ঘটলে উপরাষ্ট্রপতি অস্থায়ীভাবে রাষ্ট্রপতি-পদের কার্যভার গ্রহণ করতে পারেন। রাষ্ট্রপতি অসুস্থ হলে বা অনুপস্থিত থাকলে বা অন্য কোনো কারণে কর্মক্ষম না হলে উপরাষ্ট্রপতিকে অস্থায়ীভাবে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পান্না করতে হয়। কার্যনির্বাহী রাষ্ট্রপতি (Acting President) রূপে দায়িত্ব পালন করার সময় উপরাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রপতির পদমর্যাদা ভোগ করে থাকেন। রাষ্ট্রপতির যাবতীয় ক্ষমতা তিনি প্রয়োগ করতে পারেন। ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দের যে মাসে জাকির হোসেনের মৃত্যুর পর উপরাষ্ট্রপতি ভি ভি গিরি এবং ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে ফেব্রুয়ারি মাসে ফখরুদ্দিন আলি আহমেদের মৃত্যুর পর উপরাষ্ট্রপতি বি চি জাতি অস্থায়ীভাবে রাষ্ট্রপতির কার্যভার পরিচালনা করেছিলেন। ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবরে রাষ্ট্রপতি জৈল সিং চিকিৎসার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গেলে উপরাষ্ট্রপতি হিদায়েতুল্লা অস্থায়ীভাবে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
সংবিধান অনুযায়ী উপরাষ্ট্রপতির সাংবিধানিক দায়িত্ব দুটি ক্ষেত্রে সীমাবখ
প্রথমত, রাজ্যসভার চেয়ারম্যান হিসেবে, দ্বিতীয়ত অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে। এখানে উল্লেখ করা যায় যে, ভারতের উপরাষ্ট্রপতিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপরাষ্ট্রপতির মর্যাদা প্রদান করা হয়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির মৃত্যু পদত্যাগ বা পদচ্যুতি ঘটলে উপরাষ্ট্রপতি অস্থায়ীভাবে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন না; তিনি রাষ্ট্রপতির পদে উন্নীত হন। মার্কিন রাষ্ট্রপতি কেনেডির মৃত্যুর পর তৎকালীন উপরাষ্ট্রপতি জনসন রাষ্ট্রপতির পদে উন্নীত হন। অনেকের মতে, ভারতীয় উপরাষ্ট্রপতির সাংবিধানিক গুরুত্ব অত্যন্ত সীমিত। তবে উপরাষ্ট্রপতির পদ অনেক সময় রাষ্ট্রপতি-পদে আসীন হওয়ার একটা অগ্রণী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এক্ষেত্রে উদাহরণস্বরূপ ও রাধাকৃয়ণ, জাকির হোসেন, ডি ডি গিরি এবং কে আর নারায়ণনের কথো বলা যায়। তা ছাড়া পূর্বে পদমর্যাদার তালিকায় (Table of precedence) উপরাষ্ট্রপতি তৃতীয় স্থানে ছিলেন। প্রথমে রাষ্ট্রপতি, তারপর প্রধানমন্ত্রী ওবা তারপরে উপরাষ্ট্রপতির স্থান ছিল। বর্তমানে পদমর্যাদা বৃদ্ধি করে রাষ্ট্রপতির পরেই উপরাষ্ট্রপতিকে দ্বিতীয় স্থানে উন্নীত করা হয়েছে। রাজ্যসভার সঙ্গে রাষ্ট্রপতির যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে উপরাষ্ট্রপতির বিশেষ গুরুগা ভূমিকা রয়েছে। সাম্প্রতিককালে আন্তর্জাতিকর ক্ষেত্রে ভারতের উপরাষ্ট্রপতির পরিচিতি ও পদমর্যাদা নানান দেশে তাঁর শুভেচ্ছা সফরে সাহায্যে বৃদ্ধি পেয়েছে। উপরাষ্ট্রপতি এই ধরনের সফরে দেশের প্রতিনিধিব করে থাকেন।