‘রূপনারানের কূলে’ কবিতাটিতে রবীন্দ্রনাথের নির্মোহ জীবন বোধ প্রকাশিত – কবিতা অবলম্বনে মন্তব্যটি আলোচনা করো?

সূচনা

সমগ্র রবীন্দ্র জীবনদর্শনের নির্যাস যেন ‘শেষ লেখা’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতাটি ; যেখানে কবিসহ সরল ভাষায় ও অনাড়ম্বর উপস্থাপনায় উপলব্ধ জীবন সত্যের প্রকাশ ঘটিয়েছেন। তবে জীবনের প্রতি অনাবশ্যক আসক্তিকে রবীন্দ্রনাথ হৃদয়ের গোপন কোণে লুকিয়ে রেখেছেন ঋষিসুবল সংযমের আড়ালে। জীবনের সকল মুহু কাটিয়ে কোভিদ এই ব্যক্তির অনুভব শাশ্বতরূপ লাভ করেছে আলোচ্য কবিতায়।

জীবন কবির কাছে অর্থহীন

জীবনের উপর প্রগাঢ় আসক্তি থেকেই রবি জীবনের বারবার অনুভূতি হয়েছে ব্যথা ও বিচ্ছেদের বোথ। জগতের অন্তহীন আনন্দযজ্ঞে নিয়ন্ত্রণ রক্ষা করে ও কবি জীবনের কোন মহৎ তাৎপর্য খুঁজে পাইনি। এমনকি বিবিত বেদনায় ভারাক্রান্ত কবি হয়ে পড়েছেন চেতনাহীন। মৃত্যু কবি কে বারবার আহত করেছেন তবু জীবনের আহ্বানকে তিনি অস্বীকার করেননি কখন‌ও। তাই মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে কবি জীবন সম্পর্কে নির্মোহ উচ্চারণ করতে পেরেছেন।

কবির রূপান্তরিত জীবনদর্শন

অনাসক্ত জীবন ভাবনায় রবীন্দ্র জীবন দর্শনে এসেছি রূপান্তর। বিভীষিকাময় মৃত্যু জেনেও কবি জীবনের অন্তিম লগ্নে কঠোর তপস্যায় আত্মমগ্ন থেকে নিজেকে জারিত করে নিয়েছেন, শুদ্ধ করেছেন মননকে। খুঁজে পেয়েছেন কঠিনের ও কঠোরে নির্মিত সত্যের গর্ভগৃহ। জীবন সহসা অর্থবহ হয়ে অপসৃত হয়েছে উভকের আবডাল। কোভিদ উচ্চারণে- “জানিলাম এ জগত স্বপ্ন নয়।’

কবির নির্মহো জীবন বোধের প্রকাশ

কবি এ জীবনকে বিনম্র জানিয়ে, ভরিয়ে দিয়েছেন অকুন্ঠ কৃতজ্ঞতায়। সত্যের সখ্যলাভে কবি অপরিসীম শক্তি লাভ করেছেন, যার ফলে মৃত্যু রূপ বিভীষিকাকে তুচ্ছ করার স্পর্ধা দেখিয়েছেন তিনি। জাগতিক সকল কামনা-বাসনা বিবৃত হয়ে, তাই তিনি আলিঙ্গন করতে চেয়েছেন মৃত্যুর অন্ধকারকে। মোহ মুক্ত হয়ে রবীন্দ্রনাথ শাশ্বত মানবতার বেদি মূলে জীবনকে আহুতি দিতে চেয়েছেন নিরাসক্ত ভঙ্গিতে-তাপসের স্নিগ্ধতায়, ঋষিসুভল নির্মোহে।

দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা সমস্ত অধ্যায় অনুযায়ী তার সব প্রশ্নের উত্তর

Leave a Comment