রাশিবিজ্ঞান বলতে কী বোঝো। শিক্ষাগত রাশিবিজ্ঞান কাকে বলে বা শিক্ষা রাশিবিজ্ঞন কাকে বলে। শিক্ষা-রাশিবিজ্ঞানের উপযােগিতা লেখাে।

রাশিবিজ্ঞান

ইংরেজি ‘Statistics’ শব্দ স্টেট বা রাষ্ট্র থেকে এসেছে। এবং Statistics শব্দটি লাতিন শব্দ Status থেকেই কিন্তু ইতালীয় শব্দ ‘Statista’ বা জাপানি শব্দ ‘Statistik’ থেকে এসেছে। অতএব রাশিবিজ্ঞানকে হল গণিতের একটি বিশেষ শাখা বলা যেতে পারে। 

, শুধু তাই নয় এই বিজ্ঞানের সাহায্যে তথ্যগুলিকে সংগ্রহ করা যায়, এবং তার পাশাপাশি সারণি পত্র তৈরি করা যায়, এই সবগুলিকে সুবিন্যস্ত করা যায় ও এই সমস্ত বিষয়গুলিকে বিশ্লেষণ ও গাণিতিক পদ্ধতিতে তাৎপর্য নির্ণয় করা যায়।

এবং বিখ্যাত মনোবৃদ্ধি Lovit ‘Statistics’-এর সংজ্ঞা দিয়েছেন— এটি হল সেই বিজ্ঞান যেখানে বিভিন্ন ঘটনার ব্যাখ্যা, ও বর্ণনা এবং তুলনা করার জন্য প্রয়ােজনীয়ভাবে সংখ্যামূলক তথ্যাবলি সংগ্রহ ও সারণিকরণ করা হয়। ও Tate-এর মতে, রাশিবিজ্ঞান হল গবেষণার প্রধান একটি উপকরণ যা সংখ্যাবাচক তথ্যসমূহকে সংগ্রহ করে ও তাকে উপস্থাপন করে বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা করে।

প্রাচীনকালে Statistics শব্দটি দ্বারা বােঝাত সেই সব শব্দ, যা সেনাবাহিনী গঠন করতে সহায়তা করতো, ও নানান কর আদায় ইত্যাদি কাজের জন্য রাষ্ট্রের প্রয়ােজনে লাগত। ও পরবর্তীকালে রাষ্ট্রের জনসংখ্যার সমস্যা, এবং জন্ম-মৃত্যুর অনুপাত প্রভৃতি রাষ্ট্রের প্রয়ােজনীয় বিভিন্ন তথ্যাবলি সংখ্যার মাধ্যমে প্রকাশ করা হত এবং তা থেকে অর্থপূর্ণ ব্যাখ্যা করা যেত। অতএব এগুলিই একত্র বলা হত Statistics

শিক্ষা-রাশিবিজ্ঞানের উপযােগিতা

বর্তমানে শিক্ষাক্ষেত্রে রাশিবিজ্ঞানের ভূমিকা গুরুত্ব অপরিসীম । শিক্ষাক্ষেত্রে রাশিবিজ্ঞান নানান ও বহু দিক থেকে সাহায্য করে। শিক্ষা-রাশিবিজ্ঞানের উপযোগিতার বেস্ট গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট আমরা নীচে আলােচনা করিলাম—

(১) শিক্ষার্থীর অগ্রগতি পরিমাপ: শিক্ষার কেবলমাত্র একটি প্রধান মূল উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীদের অগ্রগতির ধারা পরিমাপ করা। এই ধরনের কাজের উপরই কিন্তু শিক্ষার সার্থকতা নির্ভর করে। এই সমস্ত কাজে কিন্তু রাশিবিজ্ঞান আমাদেরকে সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করতে সাহায্য করে।।

(২) তুলনামূলক আলােচনা: রাশিবিজ্ঞানের সাহায্যে শিক্ষাক্ষেত্রে প্রাপ্ত তথ্যগুলির মধ্যে খুব সহজেই তুলনা করা সম্ভব। এর মাধ্যমে আমরা দুই বা তারও বেশি বিভিন্ন দলের প্রাপ্ত নম্বরের মধ্যে তুলনা করা সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে যেমন — গড় নির্ণয়ের মাধ্যমে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী সম্পর্কে জানা যায়, তেমন বিষমতার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর সম্পর্কে পৃথকভাবে জানা সম্ভব হয়।

(৩) শিক্ষামূলক তথ্যের প্রকাশ: শিক্ষা সমাজে আমরা তাদের বিভিন্ন তথ্যের প্রকাশ ঘটে তার কোন সন্দেহ নেই।। তবে কিন্তু, শিক্ষামূলক বিভিন্ন পরিসংখ্যানের মাধ্যমে শিক্ষামূলক ও মনােবৈজ্ঞানিক অভীক্ষাগুলির সত্যতা নিরূপণ করতে সাহায্য করে এবং শিক্ষার্থীদের গুণাবলি সহজে নির্ণয় করা যায়। উদাহরণসহ রূপ বলা যেতে পারে — কোনাে একটি শ্রেণির ছাত্রদের পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরকে সহজতম উপায়ে একটি মাত্র সংখ্যা দ্বারা প্রকাশ করা হয়।

(৪) গবেষণামূলক কাজের ক্ষেত্রে: শিক্ষামূলক বিভিন্ন গবেষণার কাজে ব্যবহৃত উপাদানসমূহের সমাধান ও প্রয়ােগমূলক কাজে রাশিবিজ্ঞানের ব্যবহার হয়। বর্তমানে ছোট থেকে বড় বিভিন্ন গবেষণাগারে শিক্ষার একটি নিশ্চিত অনিস্বীকার্য ভূমিকা হয়েছে।

(৫) ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ধারণা লাভ: শুধু তাই নয় এর পাশাপাশি রাশিবিজ্ঞানের আর-একটি উল্লেখযােগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক হল, ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বিশ্লেষণ করা সম্ভব হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে — রিগ্রেশন ইকোয়েশন পদ্ধতির মাধ্যমে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সহজেই বিশ্লেষণ করা সম্ভব হয়।

(৬) শিক্ষার সঠিক পরিকল্পনা রচনা: শিক্ষার্থীদের অগ্রগতি নির্ণয়ের সঙ্গে সঙ্গে কোনাে শিক্ষাবর্ষে প্রতি বছর কতজন শিক্ষার্থী হবে, তাদের জন্য শিক্ষাব্যবস্থার সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ ইত্যাদির জন্য রাশিবিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার রয়েছে। অতএব বলা যায় যে শিক্ষার সঠিক পরিকল্পনা রচনা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

(৭) শিক্ষামূলক অভীক্ষা প্রস্তুত: শিক্ষার রাশিবিজ্ঞানের কৌশল প্রয়ােগ করে আমরা গাণিতিক যুক্তির ভিত্তিতে শিক্ষামূলক অভীক্ষাগুলিকে অপেক্ষাকৃত নির্ভুল তৈরি করতে পারি তার কোন সন্দেহ নেই।

(৮) তথ্যগুলিকে সুশৃঙ্খলভাবে বিন্যস্ত: রাশিবিজ্ঞান প্রাপ্ত সংখ্যামূলক তথ্যগুলিকে সুশৃঙ্খলভাবে বিন্যস্ত করতে সাহায্য করে। যার ফলে আমরা খুব সহজেই এগুলি থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারি, এবং বিভিন্ন মতামত প্রকাশ করতে পারে।

(৯) গাণিতিক যুক্তির উপর প্রতিষ্ঠিত: রাশিবিজ্ঞানের ভিত্তি হল গণিত আর গণিতের সাহায্যে প্রাপ্ত তথ্যগুলিকে বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে অপেক্ষাকৃত নির্ভুল হয়। তাই রাশিবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে গণিতের সূত্র গুরুত্ব অনেকটাই যুক্তিযুক্ত।

মূল্যায়নে: অতএব উপলব্ধ প্রশ্নের উত্তর দ্বারা এটা বলা যেতে পারে যে । যেমন গড় নির্ণয়ের মধ্য দিয়ে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী সম্পর্কে যেমন জানা যায় তেমনই বিষমতার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর সম্পর্কে পৃথকভাবে জানা সম্ভব হয়। সুতরাং বলা যায়, রাশিবিজ্ঞানের কৌশল শিক্ষামূলক তথ্যগুলিকে একদিকে যেমন অপেক্ষাকৃত সহজসরলভাবে প্রকাশ করতে সাহায্য করে, অন্যদিকে তেমনি এই পদ্ধতি প্রয়ােগ করে প্রাপ্ত তথ্যগুলিকে অনেক বেশি অর্থবহ ও তাৎপর্যপূর্ণ করা সম্ভব হয়।

দ্বাদশ শ্রেণী শিক্ষাবিজ্ঞানের (education) সব প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment