সূচনা
১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের পটভূমি এবং সেই সময় সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে আজাদ হিন্দ বাহিনীর সংগ্রাম, ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে নৌ বিদ্রোহ, মুসলিম লীগের উদ্যোগের সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বৃদ্ধি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বৃটেনের অর্থনৈতিক দুর্বলতা, ভারতে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়ে ব্রিটেনকে আমেরিকার চাপ প্রভৃতি ঘটনা ভারতীয়দের হাতে ব্রিটিশদের ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতিক্রিয়া শুরুর ক্ষেত্রে প্রস্তুত করে।
রাজাজি সূত্র বা সি. আর. ফর্মুলা
১. পরিচয়
১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় ও মুসলিম লীগের অনড় দাবি ছিল পৃথক পাকিস্তান রাষ্ট্রের গঠন। এই লক্ষ্যে বাস্তবায়নে তাদের যাবতীয় রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালিত হয়। এই অবস্থায় স্বাধীন ভারতকে দ্বিখন্ডিত না করে, অথবা জিন্নার দাবির কিছু অংশ বাস্তবায়িত করে গান্ধী অনুগামী মাদ্রাজে চক্রবর্তী রাজগোপাল চারি এক সমাধান সূত্র প্রকাশ করে মার্চ ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে। তার এই সমাধান সূত্র রাজাজি সূত্র বা সি. আর. ফর্মুলা নামে পরিচিত।
২. প্রস্তাব সমূহ
রাজাজি সমাধান সূত্রে বলা হয়েছিল –
(১) কংগ্রেসের স্বাধীনতার দাবিতে মুসলিম লীগ পূর্ণভাবে সমর্থন করবে এবং কংগ্রেসের সঙ্গে অন্তবর্তী সরকার গঠন করবে।
(২) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ অঞ্চলে অধিবাসীদের গণভোট গ্রহণ করে দেখা হবে যে তার পৃথক রাষ্ট্র গঠনে পক্ষপাতী কিনা।
(৩) গণভোট গ্রহণের আগে সব দলকে তাদের বক্তব্য প্রচারের সুযোগ দেয়া হবে।
(৪) মুসলিম-প্রধান অঞ্চল গুলি পৃথক রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে মত দিলে দুটি পৃথক রাষ্ট্র গঠিত হবে। দেশ ভাগ হলেও প্রতিরক্ষা, বাণিজ্য, যোগাযোগ ও অন্যান্য বিষয়ের উভয় সমানভাবে জড়িত এইসব বিষয়ে যৌথভাবে পরিচালিত হয়।
(৫) ব্রিটিশ সরকার ভারতকে স্বাধীনতা দিলে তবেই এই প্রস্তাব কার্যকরী হবে।
৩. প্রস্তাবে ব্যর্থতা
গান্ধীজি ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে ৬ মে জেল থেকে ছাড় পান। এরপর তিনি রাজাদের প্রস্তাব অনুসারে 9 সেপ্টেম্বর থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বোম্বাইয়ে জিন্নার বাস গৃহে ২১ বার বৈঠক করেন। কিন্তু জিন্না বিভিন্ন কারণে রাজাদের সূত্র প্রত্যাখ্যান করেন। জিন্নার মতে,
(১) রাজাজি প্রস্তাবিত পাকিস্তান পুঙ্গ বিকলাঙ্গ ও কিটদগ্ধ।
(২) জিন্না ও মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ ভারতে গণভোট মানতে রাজি ছিলেন না।
মূল্যায়ন
জেনা গান্ধী আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার ফলে জিন্না ও লীগের গুরুত্ব প্রবালভাবে বৃদ্ধি পায়।
ভারতীয় স্বাধীনতা আইন
ভূমিকা
ভারতীয় স্বাধীনতা আইন অনুসারে ভারতে পাকিস্তান দুই আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। বউ রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পদ অতিক্রম করে ভারতবাসী স্বাধীনতা আস্বাদ পায়।
১. আইন পাস
ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ৪ জুলাই ভারতীয় স্বাধীনতা আইন বিনা বাধায় পাস হয়ে যায়। ১৮ জুলাই এই আইনটি রাজকীয় সম্মতি পায়। এই রাজকীয় আইনটির কার্যকরী হওয়ার দি নির্দিষ্ট হয় ১৪ এবং ১৫ আগস্ট ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে। এই আইনে বলে ভারত ও পাকিস্তান দুই আলাদা ডোমিনিয়ন এর হাতে আলাদা আলাদা ভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। পাকিস্তানি রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হয় মাউন্টব্যাটনে প্রস্তাবের অন্তর্ভুক্ত প্রদেশ গুলি। আর অবশিষ্ট অংশ নিয়ে গঠিত হয় ভারত বর্ষ।
২. আইনের ধারা
ভারতের স্বাধীনতা আইনের বিভিন্ন ধারাগুলি ছিল এইরকম –
(১) ভারতবর্ষকে বিভক্ত করা হবে এবং ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ১৫ ই আগস্ট ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র আত্মপ্রকাশ করবে।
(২) দুই রাষ্ট্রের উপর থেকে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সমস্ত অধিকার লিপ্ত হবে। উভয় রাষ্ট্রই স্বাধীনভাবে তাদের অভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্র ব্যাপার পরিচালনা করবে এবং সংবিধান রচনা করবে।
(৩) দেশীয় রাজ্যগুলি রাজারা ভারত বা পাকিস্তানের যে কোন ডোমিনিয়নে যোগ দিতে পারবে।
(৪) আসামের শ্রীহট জেলায় গণভোটে স্থির হবে তা ভারত বা পাকিস্তান কোন ডোমিনিয়নে থাকবে।
(৫) দেশীর রাজ্য গুলোর উপর ব্রিটেনের সর্বভৌম অধিকার লুপ্ত হবে।
৩. স্বাধীনতার স্বরূপ
পলাশীর যুদ্ধের বিপদস্থ ভারতের যে স্বাধীনতা সূর্যাস্ত ঘটেছিল তারপর সূর্যোদয় ঘটে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ১৫ আগস্ট। ভারতবাসীর এই স্বাধীনতা বহু আশঙ্কিত হলেও তার মধ্যে বিষাদের সুর ছিল। কারণ টুকরো করার স্বাধীনতা ভারতবাসীকে অনিচ্ছা সত্ত্বেও মেনে নিতে হয়েছিল। স্বাধীনতা ভারতের প্রথম গর্ভনর জেনারেল হিসেবে শপথ নেন মাউন্টব্যাটনে এবং প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু নেতৃত্বে ভারতীয় মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণ করে। এর আগে ১৪ আগস্ট ডোমিনিয়ন পাকিস্তানের প্রথম গর্ভনর জেনারেল হিসেবে শপথ নেন মহম্মদ আলী জিন্না।
মূল্যায়ন
ভারতীয় স্বাধীনতা আইন মুসলিমদের আশঙ্কা পূরণ করেছিল। দ্বারা আলাদা রাষ্ট্র পেয়েছিল। ঐক্যবদ্ধ অখন্ড ভারতী দ্বিভক্ত হয়ে দুটি আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ডঃ বিপন চন্দ্র বলেছেন -“১৯৪৭-এ নেহেরু প্যাটেল ও গান্ধীজীর শুধু যা অবশ্যম্ভাবি তাকে মেনে নিয়েছিলেন।